• বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ

জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরী দীর্ঘদিন বন্ধ,  নষ্ট হচ্ছে ১৮হাজার মূল্যবান বই

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ
  • ০৭ জানুয়ারী, ২০২৩ ১১:৪০:০৬

ছবিঃ সিএনআই

মোঃ ইমরান মাহমুদ, জামালপুর  : এক সময় জামালপুরের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সূতিকাগার ছিল জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরীর। কমিটির নিস্ক্রিয়তায় দেশী-বিদেশী বইয়ের ভান্ডারখ্যাত দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহি প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ অচলাবস্থা থেকে প্রায় ৬ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে নষ্ট হতে বসেছে প্রায় ১৮ হাজার মূল্যবান বই। এ যেন দেখার কেউ নেই। 

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বৃটিশ আমলে লাইব্রেরীটির সুত্রপাত হয়। পরে ১৯৫৯ সালে পৌরসভার দুতলা বিল্ডিংয়ের একটি কক্ষে পাবলিক লাইব্রেরীর কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে শহরের বকুলতলা মোড়ে ২৯ শতাংশ ভুমিতে নিজস্ব একতলা ভবন গড়ে উঠে। তখন থেকেই পাবলিক লাইব্রেরীটি শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠে। এক সময় এ লাইব্রেরী পাঠকের আনাগোনায় মুখরিত ছিল। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক পাঠক বই লেনদেন ও সংবাদপত্র পড়তে ভীড় জমাতো। 

এ লাইব্রেরী দেশী বিদেশী মূল্যবান বই ও চাকুরীর বিজ্ঞাপন সংগ্রহের একমাত্র ভরসাস্থল ছিল। সরকারি-বেসরকারি অনুদানে প্রায় ১৮ হাজার বই ক্রয় করা হয়েছিল। পাঠকও ছিল অনেক। কিন্তু কালের বিবর্তনে পাঠক কমে গিয়ে বর্তমানে ছাত্র পাঠক ২৪৯ জন। এ ছাড়া সাধারণ সদস্য ও আজীবন পাঠক সদস্য রয়েছেন ১৭৫ জন। একজন লাইব্রেরীয়ান ও একজন পিয়ন লাইব্রেরীর দায়িত্ব পালন করেছে। তাঁরা দুইজনে খুড়িয়ে খুড়িয়ে লাইব্রেরীটি চালালেও দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা থেকে বর্তমানে প্রায় ৬ মাস ধরে একবারে বন্ধ রয়েছে।

সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও হল রুম ভাড়ার টাকা ছিলো লাইব্রেরীর আয়ের উৎস। এ টাকা দিয়ে চলতো তাদের বেতন। কিন্তু সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও হল রুম ভাড়া না হওয়ায় তাদের বেতন বকেয়া পড়েছে। অসুস্থ্যতা ও  বেতন বকেয়ার কারনে তাঁরাও দায়িত্ব পালন করছে না। লাইব্রেরী পরিচালনার জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও তাদের কোন কার্যক্রম নেই বললেই চলে। লাইব্রেরীর শ্বেত শ্বেতে পরিবেশ ও জড়াজীর্ণ বিল্ডিং রয়েছে হাজারো সমস্যা। যা নিজের চোখে না দেখলে বুঝার কোন উপায় নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লাইব্রেরী চারপাশে শ্বেত শ্বেতে পরিবেশ। জড়াজীর্ণ বিল্ডিং। লাইব্রেরীর ভিতরে প্রবেশের প্রধান ফটকের কেঁচি গেইটে তালা ঝুলছে। ভিতরে অন্ধকার। ডেক্সগুলো জমানো। কিছু সংস্কার কাজ হলেও বইগুলো পড়ে রয়েছে। এখনো সেলফে উঠেনি। ধুলোবালি, পোকা-মাকর, মাকরশা ছেঁয়ে গেছে বই রাখার বিশাল কক্ষটি। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মুল্যবান বই ও নথিপত্র। 

এ বিষয়ে লাইব্রেরীয়ান শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, শরীরিক অসুস্থ্যতার জন্য অনেক দিন থেকে আমি লাইব্রেরীর কাজ ছেড়ে দিয়েছি। এখন কি অবস্থা বলতে পারবো না। তবে অনেক দিনের বিদ্যুৎ বিল ও বেতন বকেয়া রয়েছে।

জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরীর পিয়ন দুদু মিয়া বলেন, ‘প্রায় আট বছরের বেতন বাকী। আমি আর লাইব্রেরীতে যায় না। সাবেক মেয়র মামুন সাহেব বেশ কিছু দিনের বেতন দিয়েছেলেন। তারপর আর বেতনের ব্যবস্থা হয়নি। আমি লাইব্রেরীর দায়িত্ব থেকে সরে এসেছি’। 

কবি সাযযাদ আনসারী জানান, সরকার যুগে যুগে জ্ঞান বৃদ্ধির সমাজ গঠনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং শ্লোগান দেয়। এ জায়গায় আজকে জ্ঞানের প্রসার একদমই বন্ধ প্রায়। এ জায়গায় একটি লাইব্রেরী প্রায় বহু বছর থেকেই অচলাবস্থা। শুধু ছয় মাস আগে বন্ধ হয়েছে দরজা। ১৯৯০ সালে কমিটি হয়েছিলো। তারপরে এক বছর আগে জেলা প্রশাসক একটি আহ্বায়ক কমিটি করেছেন। এর মধ্যে আসলে কোন কার্যক্রম নাই। লাইব্রেরীভিত্তিক কার্যক্রম না হলে নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠতে পারে না। সুতরাং এ লাইব্রেরীকে সচল করা এবং লাইব্রেরীকে আরও কার্যকর করে গড়ে তোলার দাবি জানান তিনি। 

পাবলিক লাইব্রেরীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো.ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, পাবলিক লাইব্রেরী জামালপুরের একটা প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। আমি মেয়র থাকাবস্থায় সচল রাখতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক ও কমিটির অন্য সদস্যদের অসহযোগিতার কারনে প্রতিষ্ঠানটি সচল করতে পারিনি। নতুন প্রজন্মের জ্ঞান প্রসারের জন্য এই ধরনের প্রতিষ্ঠান সচল রাখা খুবই জরুরী।

জামালপুর পৌরসভার মেয়র ও পাবলিক লাইব্রেরী পরিচালনা কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মো.ছানোয়ার হোসেন ছানু বলেন, ‘কমিটি জেলা প্রশাসন আটকে রাখছে। আমাকে পুরোপুরি দায়িত্ব দিলে উদ্যোগ নিয়ে সচল করার ব্যবস্থা নিবো। 

এ বিষয়ে পাবলিক লাইব্রেরী পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় বলেন, ‘বিগত জেলা প্রশাসক পাবলিক লাইব্রেরী নিয়ে কাজ করেছিলো। করোনার আসার পরে তা সঠিকভাবে সচল করতে পারেনি। পাবলিক লাইব্রেরী পরিদর্শন করে সচল করার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo