• জাতীয়

বিক্রির জন্য এক পথশিশুকে ৪ বছর আটকে নির্যাতন, অপহরণকারী গ্রেফতার

  • জাতীয়
  • ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৭:২৭:৩৪

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ চার বছর আগে রাজধানীর গুলশানে আজাদ মসজিদের সামনের ফুটপাত থেকে বিক্রির উদ্দেশ্যে এক মেয়ে পথশিশুকে অপহরণ করা হয়। পরে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার একটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে শিশুটিকে জোরপূর্বক আটকে রেখে চলে অমানবিক নির‍্যাতন। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিশুটিকে উদ্ধারসহ অপহরণকারীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

রোববার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে গুলশান থেকে অপহরণকারী মো. আব্দুল্লাহ (৩৯) গ্রেফতার করা হয়।

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে এক হতদরিদ্র পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মেয়ে জীবিকার তাগিদে রাস্তায় ফুল ও কাগজের স্টিকার বিক্রি শুরু করে। প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিনও শিশুটি ফুল বিক্রি করতে রাস্তায় যায়। তবে সেদিন কাজ শেষে সে আর বাসায় ফেরেনি। মেয়েকে বাসায় আসতে না দেখে তার বাবা-মা হন্যে হয়ে বিভিন্ন জায়গায় সন্ধান করতে থাকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একপর‍্যায়ে শিশুটির বাবা-মা গুলশান থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। ডায়েরি করার চার বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও কোনো খোঁজ না পেয়ে তারা র‍্যাব-৩ এ পুনরায় একটি অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে র‍্যাব-৩ এর একটি দল গতরাতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এসময় চার বছর আগে অপহরণ হওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করে অপরহণকারী আব্দুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাব-৩ এর জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আব্দুল্লাহ জানান, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে গুলশান এলাকার আজাদ মসজিদের সামনের ফুটপাতে তিনি শিশুটিকে ফুল ও কাগজের স্টিকার বিক্রি করতে দেখেন। সেখান থেকেই টার্গেট করেন এবং বেশ কয়েকদিন তাকে অনুসরণ করতে থাকেন। এরপর একদিন বিকেলে ফুল বিক্রি করার সময় অপহরণকারী শিশুটিকে ডেকে তার নাম জিজ্ঞাসা করে। সেসময় তাকে নতুন পোশাক কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে একটি মার্কেটে নিয়ে যান।

নতুন পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা কিনে দিয়ে শিশুটিকে তিনি তার স্টিলের কারখানায় নিয়ে যান। কারখানায় নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে ৭/৮ দিন রাখা হয়। এরপর তাকে স্থানীয় এক দালালের কাছে গৃহকর্মী হিসেবে ২০ হাজার টাকায় বিক্রির জন্য বায়নাপত্র করা হয়।

কিন্তু কারখানায় থাকার ফলে খাবার এবং পর‍্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাবে শিশুটি অসুস্থ হয়ে যায়। এতে দালাল শিশুটিকে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে শিশুটি অতিমাত্রায় অসুস্থ হয়ে পড়লে একপর‍্যায়ে বাধ্য হয়ে আব্দুল্লাহ শিশুটিকে তার নিজ বাসায় নিয়ে যান। এরপর তাকে দিয়ে গৃহকর্মীর সব ধরনের কাজকর্ম করাতে থাকেন।

র‍্যাব কর্মকর্তা আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গ্রেফতার ব্যক্তি মূলত অর্থের লোভে শিশুটিকে চড়ামূল্যে বিক্রির আশায় অপহরণ করেছিলেন। কিন্তু আশানুরূপ মূল্যে বিক্রি করতে না পারায় তারা নিজ বাসায় গৃহকর্মীর কাজে নিয়োজিত করেন।

তিনি বলেন, উদ্ধার শিশুটি জবানবন্দিতে বলেছে, অপহরণের পর আটক থাকাকালীন বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য আব্দুল্লাহর কাছে অনেক কাকুতি-মিনতি করেছে। তবে তাতে কোনো লাভ হয়নি। শিশুটি তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যেতে প্রতিনিয়তই কান্নাকাটি করতো। এছাড়া আব্দুল্লাহের বাসায় যারা নিয়মিত যাতায়াত করতেন, তাদের অনেকের কাছেই শিশুটি তার বাবা-মায়ের বস্তির ঠিকানা জানিয়ে সেখানে তাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতো।

এসব দেখে আব্দুল্লাহ এবং তার স্ত্রী শিশুটিকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। শিশুটি তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করলে তার ওপর অমানবিক নির‍্যাতনের পরিমাণ বেড়ে যেতো। এভাবেই নির‍্যাতনের শিকার হয়ে আব্দুল্লাহর গৃহকর্মী হিসেবে সে চার বছর কাটিয়ে দেয়।

গ্রেফতার আব্দুল্লাহ সম্পর্কে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ২০০২ সাল থেকে তিনি খিলগাঁও এলাকায় স্টিলের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

এদিকে চার বছর আগে অপহরণের সময় ভুক্তভোগী শিশুটির বয়স ছিল ১২ বছর। বর্তমানে তার বয়স ১৬ বছর। সে ১০ বছর বয়স থেকে গুলশানের বিভিন্ন রাস্তায় ফুল ও কাগজের স্টিকার বিক্রি করে অভাব অনটনের সংসারে আর্থিকভাবে সহায়তা করতো।

ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা সিটি করপোরেশনের পরিছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি রিকশা চালান। শিশুটির মা গৃহকর্মী হিসেবে মানুষের বাসায় কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। শিশুটির দুই ভাই-বোন রয়েছে। তারাও রাস্তায় ফুল ও স্টিকার বিক্রি করে বাবা-মাকে সাহায্য করে।

গ্রেফতার আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এই র‍্যাব কর্মকর্তা।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo