• বিশেষ প্রতিবেদন

পাবনায় গাজরের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ১২ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৫:২৪:৪২

ছবিঃ সিএনআই

তোফাজ্জল হোসেন বাবু,পাববনাঃ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাবনার ঈশ্বরদীতে গাজরের ফলন ভালো হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় গাজর চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। এখানকার গাজরের ভালো স্বাদ ও পানি কম থাকায় চাহিদাও প্রচুর। গাজর চাষে ঈশ্বরদীর অনুকূল আবহাওয়া, রোগ বালাই কম, স্বল্প শ্রম, উৎপাদন বেশি ও দাম ভালো পাওয়ায় গাজর চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। 

তবে সার ও বীজের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশ থেকে গাজর আমদানির ফলে কৃষকরা দেশীয় গাজরের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। গাজর চাষিদের কেউ কেউ আগাম গাজরের দাম পেয়ে খুশি। আবার অনেকেই সার, বীজসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। তবে কৃষি অফিস বলছে, বর্তমান বাজারে গাজর যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে অতিমাত্রায় মুনাফা না হলেও কৃষকদের লাভ ভালই হচ্ছে।  

কৃষকরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আগাম জাতের গাজরের ভালো ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে গাজর বিক্রি হয়েছে। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবারে গাজর আবাদের খরচ বেড়েছে। ১৭ হাজার ৫০০ টাকার এক কেজি গাজরের বীজ এবারে কৃষকরা কিনেছেন ২১,৫০০ টাকায়। কেজিতে বীজের দাম বেড়েছে ৪০০০ টাকা। পাশাপাশি কৃত্রিম সার সংকটের কারণে সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার কিনতে হয়েছে। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে আবাদের শুরুতে তীব্র খরায় দ্বিগুণ সেচ দিতে হয়েছে। গাজর চাষে আগে খরচ হতো সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা। এবারে হয়েছে ৬০-৬৫ হাজার টাকা।

ঈশ্বরদীর গাজরের গ্রাম বলে খ্যাত ভাড়ইমারি ও নওদাপাড়ায় সরেজমিনে দেখা যায়, জমি থেকে দিনমজুররা গাজর তোলায় ব্যস্ত। পাইকাররা জমি থেকেই এসব গাজর কিনে নিচ্ছেন। জমি থেকে গাজর তুলে শ্রমিকরা মাটি ধোয়ার জন্য বস্তায় ভর্তি করছেন। এরআগে শ্রমিকরা গাজর পানিতে ফেলে বিশেষ কায়দায় পা দিয়ে মাড়িয়ে মাটি ছাড়িয়ে পরিষ্কার করছেন। কেউ কেউ বাজারজাতকরণের জন্য বস্তা ট্রাকে তুলছেন।

গাজরে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক জাহিদুল ইসলাম ওরফে গাজর জাহিদ এবারে ৯০ বিঘা জমিতে গাজরের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, আগে এক বিঘা জমিতে গাজর চাষে খরচ হতো ৪০-৪৫ হাজার টাকা। এবারে ব্যয় বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। বীজ, সারসহ চাষাবাদের সকল খরচ এবারে অনেক বেড়েছে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে গাজর ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এই দামে এখন লাভই হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরে কি হবে জানি না। গাজর চায়না থেকে আমদানি হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হচ্ছে।  

ভাড়ইমারী বাঙালপাড়ার চাষি রোকন আলী জানান, সেপ্টেম্বরের শুরুতেই আগাম জাতের গাজরের বীজ রোপণ করা হয়। তিন মাসেই এ গাজরের ফলন পাওয়া যায়। নভেম্বরের শেষ থেকে এবং ডিসেম্বরের শুরুতে দ্বিতীয় দফা গাজরের বীজ রোপণ করা হয়। আগাম গাজরের ফলন এবারে ভালো হলেও বিদেশ থেকে গাজর আমদানি হওয়ায় দেশি গাজরের বাজার মন্দা। বিদেশ থেকে গাজর আমদানি বন্ধ করে দেশি গাজরের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

পাইকারি ব্যবসায়ী আলম প্রামাণিক জানান, আগাম গাজরের চাহিদা বেশ ভালো। রাজধানীর বাজারে ঈশ্বরদীর গাজর সবার আগে পাওয়া যায়। এখানে প্রতি কেজি গাজর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা শহরে গাজর প্রতিদিন সরবরাহ করা হয়। ভাড়ইমারি, বক্তারপুর ও নওদাপাড়া গ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫-২০ ট্রাক গাজর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ জানান, আগাম ও সেরা গাজর ঈশ্বরদীতে উৎপন্ন হয়। ঈশ্বরদীর গাজরের চাহিদা বেশি। ঈশ্বরদীর গাজরে পানির পরিমাণ কম থাকায় ১০/১২ দিন পর্যন্ত দোকানে রেখে বিক্রি করা যায়। পচন ধরে না। ঈশ্বরদীসহ উত্তরবঙ্গে সবজি বেইজ সংরক্ষণাগার না থাকায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি। এলাকার কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি উদ্যোগে সবজি ও ফল বেইজ সংরক্ষণাগার স্থাপনের দাবি জানালেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে তিনি জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, গাজরের বাম্পার ফলনের জন্য অরেঞ্জ কিং, ইয়োলো স্টার, হাইব্রিড সাপাল সিড জাতের বীজ চাষ করে থাকেন ঈশ্বরদীর কৃষকরা। লক্ষীকুন্ডা, সলিমপুর ও সাহাপুর ইউনিয়নের বিশাল এলাকায় গাজরের চাষ হয়েছে। ঈশ্বরদীতে এবারে ৮৯০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। গাজর চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর ঈশ্বরদীতে গাজরের আবাদ বাড়ছে। এবারে গাজরের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশের বাজারে ঈশ্বরদীর গাজর সবার আগে পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে গাজর যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতে কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছে। সব সময় কৃষি বিভাগ গাজর চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo