• বিশেষ প্রতিবেদন

প্রেমের টানে ফিলিপাইন থেকে ময়মনসিংহে আসা ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা হলেন ইউপি মেম্বার

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ১৫ নভেম্বর, ২০২১ ১১:১৬:৩১

ছবিঃ সিএনআই

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ ফিলিপাইনের নাগরিক জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা নিজ দেশে পড়ালেখা ছেড়ে কর্মের টানে পাড়ি জমান সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকে প্রেমের টানে প্রেমিক বাঙালি যুবক জুলহাসের হাত ধরে আসেন বাংলাদেশে। বিয়ে করে হন বাঙালি গৃহবধূ। ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান আর নাম পরিবর্তন করে হন জেসমিন আক্তার জুলহাস। ১০ বছর আগে নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আসা এই নারী এবার ময়ময়নসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নের নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে এলাকায় আলোচিত হয়েছেন। 

গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাধাকানাই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনে মাইক প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করে ৪ হাজার ৪৯৬ ভোট পেয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি শিমু আক্তার বক প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ৮৩৭ ভোট। এ ঘটনায় জেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা নিজ দেশে ফিলিপাইন থেকে কৃষি বিষয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করে চাকরী নেন সিঙ্গাপুরে। সেখানে পরিচয় হয় বাংলাদেশি যুবক ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নের দবরদস্তা গ্রামের আব্দুস সামাদ মন্ডলের ছেলে জুলহাস উদ্দিনের সাথে। একই কর্মস্থলে কাজ করতেন তারা। সেখানে দুজনের মাঝে মন দেয়া-নেয়ার ঘটনা ঘটে। দুই বছর কাজ করার পর দুজনেই সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে যান যার যার দেশে। কিন্তু চলতে থাকে তাদের যোগাযোগ। দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয় প্রেমের সম্পর্ক। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার। 

বিয়ের সিদ্ধান্তে ২০১০ সালের শেষের দিকে জুলহাস পাড়ি জমান ফিলিপাইনে। সেখানে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা ও জুলহাস। নাম পরিবর্তন করে হন জেসমিন আক্তার জুলহাস। এরপর মা, বাবা, দেশ, ধর্ম ছেড়ে স্বামীর সাথে চলে আসেন বাংলাদেশে। এখন তিনি এক ছেলে  ও এক মেয়ের জননী।

জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা বলেন, ২০০৮ সালে ফিলিপাইনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ফিসারিজ বিভাগে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করি। এরপর চাকরী নেই সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানিতে। সেখানেই জুলহাসের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক। এর দুই বছর পর জুলহাসকে বিয়ে করে ধর্ম, মা, বাবা, দেশ ছেড়ে চলে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে।

তিনি বলেন, আমি নির্বাচন করতে চাইনি। এলাকাবাসীর ইচ্ছাতেই নির্বাচন করেছি। তারাই আমাকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। এখন মানুষের সেবা করে যেতে চাই।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে আসার পর বেশ বিপাকে পড়েছিলাম। কারণ, তখন আমি বাংলায় কথা বলতে পারতাম না। তবে আস্তে আস্তে কিছুটা শিখেছি। এখন আমি সবার কথাই মোটামুটি বুঝতে পারি। আমিও বাংলায় কথা বলতে পারি।

এ বিষয়ে জুলহাস উদ্দিন বলেন, জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা এলাকাবাসীর সেবা করে তাদের মন জয় করেছেন। সে এলাকার সাধারণ মানুষের কথাতেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। তারাই তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। সে সবার সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে থেকে মানুষের সেবা করে যাবেন বলেও জানান তিনি।

এলাকাবাসী জানান, নির্বাচনের শুরু থেকেই গ্রামের মানুষ ব্যাপকভাবে তাকে পছন্দ করে নেন। লোকজন তার কাছে গিয়ে ইংরেজি কথা শুনতে চান। ভোট চাইতে গেলে নারী ভোটার তাকে নানা বাংলা শব্দ বলে বলতেন এর ইংরেজি কি হবে? জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকাও চমৎকারভাবে উত্তর দেন। মানুষ তার মুখের সুন্দরভাবে উপস্থাপিত বাংলা কথাও শুনতে চায়। তিনি কথা বললেই গ্রামের মানুষ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থেকে কথা শুনে। মানুষ তাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo