• বিশেষ প্রতিবেদন

হেমন্তের নতুন ধানে নবান্নের আমেজ

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০৮ নভেম্বর, ২০২১ ১৪:৫৫:২১

ছবিঃ সিএনআই

তেঁতুলিয়া প্রতিনিধিঃ হেমন্তে মাঠ জুড়ে দোল খাচ্ছে সোনালী হলুদ বর্ণের ধান। মৌ মৌ করছে আমন ধানের নতুন ঘ্রাণ। সমাগত নবান্ন উৎসবের। গ্রাম গঞ্জের মাঠে মাঠে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে ভেসে উঠেছে গ্রামের আশপাশ। সবুজ ডগায় দুলছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। চা শিল্প খ্যাত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় হেমন্তেই ঘরে উঠছে আগাম জাতের ধান। ধানের ভালো ফলন হওয়ায় স্বপ্নজয়ের হাসি ফুটে উঠেছে কৃষকের চোখ-মুখে।

অনাবিল সুখের বাসর বেঁধেছে কৃষক কৃষাণীদের মনেও। ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষাণীরাও। শুরু হয়েছে ধান কাটা। ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষক ও দিনমজুরদেরও। কৃষকের গোলা ভরতে শুরু করেছে সে ধান। উপজেলার সদর ইউনিয়ন, তিরনইহাট, শালবাহান ও বুড়াবুড়িসহ বিভিন্ন বিভিন্ন ইউনিয়নগুলোর বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর তেমন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হওয়ায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের বাজার দর ভাল থাকায় এ বছর লাভবান হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

তিরনই হাট এলাকার কৃষক মতিয়ার রহমান জানান, ৩ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আমন ধান আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করছি প্রত্যাশিত দাম পাব। তবে ধানের কাঁচা আটি (খড়) বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছি। ধান মাড়াইয়ের সাথে সাথে ওই জমিতে বাড়তি ফসল হিসেবে আলু, বেগুনসহ শীতকালীন সবজি ও সরিষা চাষ করতে পারব। এটা বাড়তি ফসল আমার জন্য।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এই উপজেলায় ১১ হাজার ২’শ ২৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হচ্ছে। চলতি মৌসুমে হাইব্রিড জাতের এ-জেড, এসএলএইটএইচ, এসিআই-২ ও উফশী জাতের বিরি-৫৬, বিরি-৫৭, বিরি-৩৯ বিরি-৩৩, বিনা-৭,বিআর-১১, বিআর-৫১, বিআর-৫২, জিএস-১, গুটি স্বর্ণ, পাইজাম, ধানী গোল্ড, নোনিয়াসহ বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল জাতের আমন ধান চাষ হয়েছে।

এদিকে নতুন ধান ঘিরে বাঙালি সংস্কৃতির নবান্ন উৎসবের আমেজ গুনগুন করছে। নতুন ধানের আটা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা, পুলি, ক্ষীর, পায়েস তৈরি করে গ্রামীণ নারীরা। এ সময় মেয়ে জামাইসহ আত্মীয়- স্বজনদের বাড়ীতে আমন্ত্রণ করে এনে নতুন চালের পোলাও, পিঠা ও পায়েসসহ রকমারী নিত্য নতুন খাবার তৈরী করে ধুম-ধামে ভুঁড়ি ভোজের আয়োজনে মুখরিত হয়ে উঠে নবান্ন উৎসব।

কৃষক আব্দুল মজিদ জানান, গ্রাম্য বধুরা জামাইকে নিয়ে বাপের বাড়ীতে নবান্ন উৎসব করার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে। নবান্ন উৎসবে গ্রামের কৃষকেরা মিলে-মিশে গরু, মহিষ ও খাঁসি জবাই করে। বড় বড় মাছ কিনে আনে হাট-বাজার থেকে। এই নিয়মের ধারাবাহিকতায় কৃষকদের ঘরে ঘরে এখন ঐতিহ্যবাহী নবান্ন আমেজ। সব-মিলিয়ে তেঁতুলিয়ার গ্রামীন এলাকাগুলোতে নবান্ন উৎসব পালনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপজেলায় ১১ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। ধান কাটা শুরু হয়েছে। এবার আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবেন। যারা আগাম জাতের ধান চাষ করেছেন তাদের শীতকালীন সবজি ও সরিষা চাষ করতে সহায়তা দেওয়ার কথা জানান তারা। 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo