• জাতীয়

জানুয়ারির ১ তারিখ কেন বছরের প্রথম দিন?

  • জাতীয়

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক : আতশবাজি, আলোকসজ্জা আর উৎসবের আমেজে বিশ্বের নানা দেশে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন— কেন জানুয়ারির ১ তারিখকেই বছরের প্রথম দিন হিসেবে ধরা হয়? এর পেছনে কি কোনো প্রাকৃতিক বা জ্যোতির্বিজ্ঞানসম্মত কারণ রয়েছে, নাকি এটি কেবলই মানুষের তৈরি একটি ঐতিহাসিক প্রথা?

জানুয়ারির ১ তারিখকে নতুন বছরের সূচনা হিসেবে গ্রহণ করার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস ও ক্যালেন্ডারের বিবর্তন। সেই ইতিহাস ও কারণগুলোই তুলে ধরা হলো আজকের প্রতিবেদনে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক—

জানুয়ারির ১ : ক্যালেন্ডারের বিবর্তন ও রোমান ইতিহাস

নতুন বছরের সূচনার ইতিহাস অনুসন্ধান করতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে প্রাচীন রোমে। জানুয়ারির ১ তারিখকে বছরের শুরু হিসেবে গ্রহণ করার প্রক্রিয়াটি মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে।

১. আদি রোমান ক্যালেন্ডার ও মার্চ থেকে বছরের শুরু

প্রাচীন রোমে প্রাথমিক ক্যালেন্ডারে বছর শুরু হতো ১ মার্চ থেকে। সে সময় ক্যালেন্ডারে ছিল মাত্র ১০টি মাস, আর পুরো বছরের দিনসংখ্যা ছিল ৩০৪ দিন। আজও আমাদের বর্তমান মাসগুলোর নামের মধ্যেই সেই প্রাচীন ক্যালেন্ডারের ছাপ রয়ে গেছে। যেমন—

  • ল্যাটিন শব্দ Septem অর্থ ৭, তাই সেপ্টেম্বর ছিল সপ্তম মাস;
  • Decem অর্থ ১০, তাই ডিসেম্বর ছিল দশম মাস।

তবে এই ক্যালেন্ডারে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে দিন ও সময়ের বড় ধরনের অসামঞ্জস্য দেখা দেয়, যা ক্রমেই সমস্যা তৈরি করে।

২. জানুসের নামানুসারে জানুয়ারি ও জুলিয়াস সিজারের সংস্কার

খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার তৎকালীন খ্যাতনামা জ্যোতির্বিদদের পরামর্শে ক্যালেন্ডারে আমূল সংস্কার আনেন। এই সংস্কারিত ক্যালেন্ডারই ইতিহাসে পরিচিত হয় ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ নামে।

এই সংস্কারের মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো জানুয়ারির ১ তারিখকে বছরের সূচনা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

জানুয়ারি মাসের নামকরণ করা হয়েছিল রোমান দেবতা ‘জানুস’-এর নামানুসারে। জানুসকে নতুন সূচনা ও পরিবর্তনের দেবতা হিসেবে মানা হতো। তাঁর ছিল দুটি মুখ—

  • একটি অতীতের দিকে তাকানো
  • অন্যটি ভবিষ্যতের দিকে তাকানো

অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক হিসেবে জানুসের নামানুসারে জানুয়ারিকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে উপযুক্ত মনে করা হয়।

৩. মধ্যযুগ ও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রভাব

রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর মধ্যযুগে ইউরোপের বহু খ্রিস্টান দেশ ১ জানুয়ারিকে বছরের শুরু হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানায়। সে সময় কেউ কেউ 

  • ২৫ মার্চ (Annunciation Day);
  • আবার কেউ ২৫ ডিসেম্বর (ক্রিসমাস) কে বছরের সূচনা হিসেবে পালন করতেন।

এই বিভ্রান্তির অবসান ঘটে ১৫৮২ সালে, যখন পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি ক্যালেন্ডারের ত্রুটি সংশোধন করে ‘গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার’ প্রবর্তন করেন। এই ক্যালেন্ডারে পুনরায় ১ জানুয়ারিকে বছরের আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।

পরবর্তী সময়ে ইউরোপসহ ধীরে ধীরে পুরো বিশ্ব এই ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে নেয়।

১ জানুয়ারি পালনের তাৎপর্য

বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতিতে নিজস্ব নববর্ষ থাকলেও— যেমন পহেলা বৈশাখ, চীনা নববর্ষ— ১ জানুয়ারি একটি বৈশ্বিক ও সার্বজনীন রূপ পেয়েছে। এটি শুধু একটি তারিখ পরিবর্তনের বিষয় নয়; বরং—

  • আন্তর্জাতিক প্রশাসনিক কাজ
  • ব্যবসা-বাণিজ্য
  • কূটনীতি ও যোগাযোগ

সবক্ষেত্রে একটি অভিন্ন মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে।

ইতিহাস থেকে আধুনিক উৎসব

জানুয়ারির ১ তারিখ আমাদের মনে করিয়ে দেয় রোমান দেবতা জানুসের কথা—যিনি তার বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষকে শেখান অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে।

হাজার বছরের ইতিহাস, সংস্কার ও সংস্কৃতির পথ পেরিয়ে আজ জানুয়ারির ১ তারিখ পরিণত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও বহুল পালিত উৎসবে।

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস

মন্তব্য (০)





  • company_logo