নিউজ ডেস্ক : শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে থাকে। বিশেষ করে শীতকালে সর্দি-কাশি, হজমে সমস্যা, ক্লান্তি এবং ঘন ঘন সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এ জন্য রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সঠিক পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যদিও এমন কোনো নিদিষ্ট খাবার নেই, যে খাবার শরীরে প্রয়োজনীয় সব উপাদান পুষ্টি সরবরাহ করবে।
এ বিষয়ে ‘রাইয়ান হেল্থ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’-এর পুষ্টিবিদ লিনা আকতার বলেছেন, সব খাদ্যগোষ্ঠী থেকে নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় খাবার খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে, যা আপনার শরীরকে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে সুস্থ রাখবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, পুষ্টিবিদ লিনা আকতার শীতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কোন খাবার গ্রহণ করা উচিত বলে জানিয়েছেন—
ভিটামিন 'সি'
আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন 'সি' সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যেহেতু আমাদের শরীর ভিটামিন 'সি' তৈরি করে না, তাই খাদ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। সে জন্য সিট্রাসযুক্ত বা ভিটামিন 'সি' যুক্ত খাবার বেশি করে গ্রহণ করতে হবে। এই যেমন আমলকী, লেবু, পেয়ারা ইত্যাদি।
ভিটামিন 'ডি'
শীতকালে মানুষ বাইরে কম থাকে। এ ছাড়া কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের কারণে এ সময় সূর্যের আলো পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। তাই ভিটামিন 'ডি' পাওয়া যায় না। সূর্যের আলো থেকে আমরা ভিটামিন 'ডি' বেশি পাই। তাই যাদের ক্রনিক রোগ আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন 'ডি' পরিপূরক খেতে পারেন। আর ভিটামিন 'ডি' সমৃদ্ধ খাবার হলো— ডিমের কুসুম, মাশরুম, সামুদ্রিক মাছ, ‘ফরটিফায়েড সিরিয়াল’ প্রভৃতি। এটি শুধু একটি ভিটামিন নয়, বরং শরীরে হরমোন হিসেবে কাজ করে থাকে, যা রোগপ্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ফাইটোক্যামিকেল
যেসব ফল ও শাকসবজি উজ্জ্বল রঙের, যেমন— লাল, নীল, কমলা বা হলুদ, সবুজ ইত্যাদি সেসবে এ উপাদান থাকে।
টমেটো, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি ইত্যাদি লাল-ধর্মী খাবারগুলোতে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরে ক্ষতিকর কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। আম, গাজর, মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
আর সবুজ শাকসবজিতে ‘ক্লোরোফিল’ নামক ফাইটোক্যামিকেল রয়েছে। এ ছাড়া ‘ইনডোল’য়ের মতো নিদিষ্ট ক্যানসার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা রোগপ্রতিরোধে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া শীতকালে পাওয়া যায় এমন শাকসবজি— পালংশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি।
প্রোবায়োটিক
শীতকালে নাড়াচড়া করা হয় না তেমন। এ কারণে অনেকেরই হজমশক্তি ভালো হয় না। পাকস্থলী আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার একটি বিশাল অংশ।
এ সময় প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- দই নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে খেতে পারলে হজমশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এ ছাড়া হজমশক্তি ভালো করতে আঁশসমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফল গ্রহণ করা উচিত। এটি প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করবে।
বাদাম
নানা প্রকার বাদাম খাওয়া যেতে পারে। এতে ভিটামিন 'ই' রয়েছে। এ ছাড়া থাকে প্রোটিন, আঁশ ও স্বাস্থ্যকর চর্বি, যা ঘন ঘন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।
জিঙ্ক
শীতে অনেকেই সর্দি-কাশি, ফ্লু, ডায়রিয়ার মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন। সে জন্য জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। এ খনিজের উৎস হিসেবে রয়েছে- বাদাম, তিসি-বীজ, চিয়া-বীজ, শস্য ইত্যাদি।
মসলা
শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, সর্দি, কাশির প্রকোপ কমাতে তেজপাতা, কালো মরিচ খাওয়া উপকারী। এ ছাড়া রয়েছে রসুন, যা থেকে মিলবে ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া রোধী উপাদান। আরও গ্রহণ করা যেতে পারে হলুদ-দুধ কিংবা হলুদ-পানি। কারণ হলুদে কারকিউমিন নামক উপাদান শরীরে প্রদাহ এবং শীতকালীন সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
পানি বা তরল খাবার
শীতকালে ঋতু পরিবর্তনের ফলে বাতাস শুষ্ক হয়ে যায়, যা দেহকে ‘ডিহাইড্রেইট’ বা পানিশূন্য করে ফেলতে পারে। আবার গরম কম থাকায়, পিপাসা লাগে কম। ফলে অনেকের পানি পানের পরিমাণ কমে যায় । তবে সুস্থ থাকতে দিনে কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করুন। আর আর্দ্র থাকতে পানি-ধর্মী সবজি ও ফল খাওয়া উপকারী, যেমন- শসা, কলা, টমেটো ইত্যাদি।
টিপস
১। পরিষ্কার পরিছন্ন থাকতে হবে।
২। ঠান্ডা বাতাস থেকে রক্ষায় গরম কাপড় পরিধান করা উচিত।
৩। পর্যাপ্ত ঘুমানোর প্রয়োজন আছে।
৪। মানসিক চাপ বা ‘স্ট্রেস’ কমাতে হবে।
৫। যাদের আগে থেকে ফ্লু-ধর্মী সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত গরম পানির ভাপ নিন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসক কাছ থেকে ফ্লু ভ্যাকসিন নিতে পারেন।
৬। নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৭। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। কারণ ব্যায়াম করলে ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনা কম থাকে।
মন্তব্য (০)