• জাতীয়

জমির খতিয়ান কী? এতে ভুল হলে আইনি প্রতিকার পেতে যা করবেন

  • জাতীয়

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক : জমির খতিয়ানে ভুল পাওয়া আমাদের দেশে অস্বাভাবিক কিছু নয়। অনেক সময় নামের বানানে ভুল, অংশ বা দাগ নম্বরে ভুল, কিংবা জমির রেকর্ড অন্য কেউ নিজের নামে করে নেওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। এমনকি খতিয়ানের মূল কপি হারিয়ে যাওয়াও নতুন কিছু নয়। এসব সমস্যার আইনি সমাধান থাকলেও, অনেকের কাছে প্রক্রিয়াটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ মনে হয়।

ভূমি মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ২৯ জুলাই প্রকাশিত গেজেট (রেকর্ড সংশোধন পরিপত্র নং ৩৪৩)-এর মাধ্যমে এসব ভুল সংশোধনের সহজ পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে। গেজেট অনুযায়ী, নামজারি বা মিউটেশন খতিয়ানে ভুল হলে সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর কাছে ‘মিস কেস’ দায়ের করে সংশোধনের আবেদন করা যায়।

খতিয়ান কী

মৌজা ভিত্তিক এক বা একাধিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। এতে ভূমধ্যাধিকারীর নাম ও প্রজার নাম, জমির দাগ নং, পরিমাণ, প্রকৃতি, খাজনার হার ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের খতিয়ানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তন্মধ্যে সিএস, এসএ এবং আরএস উল্লেখযোগ্য। ভূমি জরিপকালে ভূমি মালিকের মালিকানা নিয়ে যে বিবরণ প্রস্তুত করা হয় তাকে ‘খতিয়ান” বলে। খতিয়ান প্রস্তত করা হয় মৌজা ভিত্তিক।

সিএস খতিয়ান

১৯১০-২০ সনের মধ্যে সরকারি আমিনগণ প্রতিটি ভূমিখণ্ড পরিমাপ করে উহার আয়তন, অবস্থান ও ব্যবহারের প্রকৃতি নির্দেশক মৌজা নকশা এবং প্রতিটি ভূমিখন্ডের মালিক দখলকারের বিররণ সংবলিত যে খতিয়ান তৈরি করেন সিএস খতিয়ান নামে পরিচিত।

এসএ খতিয়ান

১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাসের পর সরকার জমিদারি অধিগ্রহণ করেন। তৎপর সরকারি জরিপ কর্মচারীরা সরেজমিনে মাঠে না গিয়ে সিএস খতিয়ান সংশোধন করে যে খতিয়ান প্রস্তুত করেন তা এসএ খতিয়ান নামে পরিচিত। কোনো অঞ্চলে এ খতিয়ান আর এস খতিয়ান নামেও পরিচিত। বাংলা ১৩৬২ সালে এই খতিয়ান প্রস্তুত হয় বলে বেশির ভাগ মানুষের কাছে এসএ খতিয়ান ৬২র খতিয়ান নামেও পরিচিত।

আরএস খতিয়ান

একবার জরিপ হওয়ার পর তাতে উল্লেখিত ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য পরবর্তীতে যে জরিপ করা হয় তা আরএস খতিয়ান নামে পরিচিত। দেখা যায় যে, এসএ জরিপের আলোকে প্রস্তুতকৃত খতিয়ান প্রস্তুতের সময় জরিপ কর্মচারীরা সরেজমিনে তদন্ত করেনি। তাতে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়ে গেছে। ওই ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরেজমিনে ভূমি মাপ-ঝোঁক করে পুনরায় খতিয়ান প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই খতিয়ান আরএস খতিয়ান নামে পরিচিত। সারাদেশে এখন পর্যন্ত তা সমাপ্ত না হলেও অনেক জেলাতেই আরএস খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

সরকারি আমিনরা মাঠে গিয়ে সরেজমিনে জমি মাপামাপি করে এই খতিয়ান প্রস্তুত করেন বলে তাতে ভুলত্রুটি কম লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় এই খতিয়ান বি এস খতিয়ান নামেও পরিচিত।

বিএস খতিয়ান

সর্বশেষ এই জরিপ ১৯৯০ সা পরিচালিত হয়। ঢাকা অঞ্চলে মহানগর জরিপ হিসাবেও পরিচিত।

কীভাবে আবেদন করবেন

সাধারণ সাদা কাগজে আবেদন লিখে ২০ টাকার কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র, খতিয়ান, জমির কাগজ ইত্যাদি) জমা দিয়ে আবেদন করলে এসিল্যান্ড তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেন।

যদি কেউ প্রতারণার মাধ্যমে অন্যের নামে থাকা জমি নিজের নামে নামজারি করে নেয়, তাহলেও এসিল্যান্ডের কাছে “মিস কেস” দাখিল করে বাতিলের আবেদন করা যায়। শুনানি ও প্রমাণ যাচাই শেষে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক থাকলে আগের মালিকের নামে খতিয়ান ফিরিয়ে দেওয়ার আইনগত সুযোগ রয়েছে।

খতিয়ান হারিয়ে গেলে করণীয়

যদি নামজারি বা খারিজ খতিয়ানের মূল কপি হারিয়ে যায়, তবে প্রথমে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। জিডির কপি ও ২০ টাকার কোর্ট ফি-সহ সাদা কাগজে এসিল্যান্ড বরাবর আবেদন জমা দিতে হয়। যাচাই-বাছাই শেষে এসিল্যান্ড যদি সন্তুষ্ট হন যে খতিয়ানটি সত্যিই হারিয়ে গেছে, তাহলে তিনি নতুন খতিয়ান প্রদানের আদেশ দেন।

আদেশের পর ১০০ টাকা ফি প্রদান করলে নতুন খতিয়ান সংগ্রহ করা যায়। এই ফি প্রদানের বিপরীতে “ডিসিআর” নামে রশিদ দেওয়া হয়।

পুরোনো জরিপের খতিয়ান সংগ্রহ

নামজারি খতিয়ান ছাড়াও এস.এ., সি.এস., আর.এস., বি.এস. বা অন্যান্য জরিপের খতিয়ান হারিয়ে গেলে, মৌজা নম্বর ও খতিয়ান নম্বর উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ড রুমে আবেদন করলেই তা সংগ্রহ করা সম্ভব। 

সময় ও প্রক্রিয়া

নামজারি খতিয়ান সংশোধনে সাধারণত ৩০–৪৫ দিন সময় লাগে। আবেদন পাওয়ার পর ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে প্রতিবেদন চাওয়া হয়। প্রতিবেদন এলে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে শুনানিতে ডাকা হয়। কোনো আপত্তি না থাকলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সংশোধিত খতিয়ান অনুমোদন করেন এবং আবেদনকারীকে প্রদান করা হয়।

আইনি ভিত্তি

সহকারী কমিশনার (ভূমি) State Acquisition and Tenancy Act, 1950-এর ১৪৩ ধারা এবং প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫-এর ২৩(৩) ধারা অনুযায়ী করণিক ভুল (যেমন নাম, দাগ, অংশ, বা ম্যাপের অসামঞ্জস্য) সংশোধনের ক্ষমতা রাখেন।

অন্যদিকে, যদি জালিয়াতির মাধ্যমে রেকর্ড পরিবর্তন হয়ে থাকে, তাহলে ২৩(৪) ধারা অনুযায়ী তদন্ত ও শুনানির মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মাঠ পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ

তবে বাস্তবে অনেক সময় সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে অনীহা দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে এসিল্যান্ড অফিস থেকে আবেদনকারীদের আদালতের শরণাপন্ন হতে বলা হয়, ফলে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হন।

তথ্যসূত্র : ভূমি মন্ত্রণালয় (রেকর্ড সংশোধন পরিপত্র নং ৩৪৩, তারিখ ২৯.০৭.২০২১); ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ।

জমির খতিয়ান ও ভুল সংশোধন নিয়ে FAQ

প্রশ্ন: জমির খতিয়ান কাকে বলে?

উত্তর: মৌজা ভিত্তিক এক বা একাধিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণসহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।

প্রশ্ন: খতিয়ানের ভুল সংশোধন করতে কোথায় আবেদন করতে হয়?

উত্তর: নামজারি খতিয়ানে করণিক ভুল হলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ডের কাছে 'মিস কেস' দায়ের করে সংশোধনের আবেদন করতে হয়।

 

মন্তব্য (০)





image

এবার প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন আলী রীয়াজ

নিউজ ডেস্ক : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়া...

image

কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের

নিউজ ডেস্ক : আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা ...

image

সুভাষ সিংহ রায় ও তার স্ত্রীর ৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

নিউজ ডেস্ক : দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মুখে থাকা সাংবাদিক ও ইউনিমেড...

image

রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রধান উপদেষ্টার সতর্কবার্তা

নিউজ ডেস্ক : আসন্ন ফেব্রুয়ারিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে গণঅভ্যু...

image

জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু: তথ্...

নিউজ ডেস্কঃ তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন,...

  • company_logo