নিউজ ডেস্ক : বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ‘টানা-হেঁচড়া’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একটা দল বলতেছে গণভোট হতে হবে। এই সাধারণ মানুষ আপনারা এত কিছু কী বুঝেন? উপস্থিত জনতার নেতিবাচক মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন- গণভোট সনদ এসব কী আমরা বুঝি? বুঝি না কিছু। এসব বুঝে শিক্ষিত উঁচুতলা থেকে কিছু লোক আসছে, আইশা আমাদের ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে ঠাকুরগাঁও দৌলতপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিএনপি আয়োজিত জগন্নাথপুর ইউনিয়নবাসীর সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, এই মাটিতেই আমাদের জন্ম, এই মাটিতেই আমরা থাকি, এখানেই সুখ-দুঃখের সঙ্গে বাঁচি এবং মরলে এই মাটিতেই মরব। দেশের মাটি ছেড়ে যাবেন না।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে ‘পালিয়ে যাওয়া’ প্রমাণ করেছে যে তার দলের কর্মী এবং দেশের জনগণের প্রতি তার বিন্দুমাত্রও দরদ ছিল না। তিনি কর্মীদের অসহায় অবস্থায় ফেলে গেছেন।
ব্যক্তিগত ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি বহু কষ্ট করেছি। আপনারা জানেন যে আমি ১১ বার জেলে গিয়েছি। পুলিশ আমাকে সেই সেলে পাঁচ দিন আটক করে রেখেছিল, যেই সেলে মৃত্যুদণ্ড আসামিদের রাখা হয়। আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা সেখান থেকে মুক্তি পেয়েছি।
নিজের শারীরিক অবস্থা ও বয়স বিবেচনা করে তিনি বলেন, এটাই আমার জীবনের শেষ নির্বাচন। শরীরটা ভালো না। আকুল আবেদন আমাকে সাহায্য করুন। আমার এখন অনেক বয়স বেড়েছে– ৭৮ বছর বয়স। কতদিন বাঁচব জানি না। হায়াত-মউত আল্লার হাতে। আমি শেষবারের মতো নির্বাচনে আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমি চাই যে ধানের শীষে ভোট দিয়ে কাজ করার সুযোগ দেবেন। আমার মার্কা ধানের শীষ, দয়া করে ধানের শীষে ভোট দেবেন। এ সময় উপস্থিত জনতা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুপুর ১২টায় সভাস্থলে উপস্থিত হলে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান জানান। সনাতন ধর্মীয় নারীরা তখন উলুধ্বনি দেন এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল কন্যারা নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে তাদের এলাকার প্রিয় নেতাকে সম্মান জানান। এ যেন এক অনন্য পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
উপস্থিত হওয়ার পর ১২টা ৩২ মিনিটে তিনি বক্তব্য শুরু করেন। বক্তব্য শুরুর সময় হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে মুখে পানি দিয়ে সুস্থতা অনুভব করেন এবং এরপর বসে বক্তব্য দেন।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, বয়স হয়ে গেছে। ৭৮ বছর বয়স। আপনারা কেমন আছেন মা-বোনেরা। মুই আলমগীর (আমি আলমগীর)। আমাকে আলমগীর স্যার বলেন। কারণ আমি ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছি, আমার অনেক ছাত্র আছে। এ কারণে আমাকে সবাই স্যার বলে। তিনি যোগ করেন- নির্বাচনে কখনো হেরেছেন কখনো জিতেছেন, তবে তিনি জনগণকে ছেড়ে যাননি।
তিনি তার দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি ঘটে যাওয়া ‘অন্যায়’ এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ৬ বছর বিনা দোষে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। আর আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।
আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন করেন, সামনে আমাদের নির্বাচন উপস্থিত। এই নির্বাচনে আপনারা ভোট দিবেন তো? এবার ভোট ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে তো? সবাই ভোট দিতে পারবেন তো?
ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর মির্জা ফখরুল বলেন, এবার মার্কা কয়টা? মার্কা একটা দেখছেন ধানের শীষ, নৌকাটা এবার দেখা যাচ্ছে না। আরেকটা দেখা যায় দাঁড়িপাল্লা। অনেকেই দাঁড়িপাল্লা দেখেন নাই। দাঁড়িপাল্লাও এবার ইলেকশন করবে। সুতরাং আপনাদের নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা ও ধানের শীষের মধ্যে বেছে নিতে হবে প্রার্থী।
দেশের অর্থনৈতিক সংকট ও সাধারণ মানুষের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ধানে-আলুতে এবার মাইর খাইছে কৃষক। আলু হিমাগার থেকে আনতেছে না, তার মানে কৃষিকাজ করে লাভবান হতে পারছেন না।
তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানুষের কষ্ট বোঝে না। বিএনপি সরকারে এলে কৃষকদের এবং মা-বোনেদের সুবিধা দেওয়ার জন্য দুটি বিশেষ কার্ড চালু করা হবে- সব বাড়ির মায়েদের কাছে একটি করে কার্ড থাকবে। এই কার্ডের মাধ্যমে মায়েরা ন্যায্য মূল্যে চাল, ডাল, তেল, লবণ কিনতে পারবেন এবং স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। প্রতিটি কৃষকের কাছে এই কার্ড থাকবে। এর মাধ্যমে কৃষক ন্যায্য মূল্যে সার, বিষ, সেচের পানি এবং তাঁর ফসলের ন্যায্য বাজার করতে পারবেন।
ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পয়গম আলী, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন তুহিনসহ স্থানীয় নেতারা।
মন্তব্য (০)