• আন্তর্জাতিক

‎গাজা-গণহত্যায় জড়িত ষাটেরও বেশি দেশ, জাতিসংঘে বিস্ফোরক প্রতিবেদন

  • আন্তর্জাতিক

ছবিঃ সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পেশ করা এক নতুন প্রতিবেদনে বিস্ফোরক তথ্য তুলে ধরেছেন। এতে তিনি জানান— পশ্চিমা শক্তি এবং কিছু আরব রাষ্ট্রসহ ষাটেরও বেশি দেশ গাজায় ইসরাইলের ‘গণহত্যার যন্ত্র’ সচল রাখতে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছে।

‎মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের ডেসমন্ড অ্যান্ড লিয়া টুটু লেগাসি ফাউন্ডেশন থেকে ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে সাধারণ পরিষদে তার ২৪ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।  তার এ প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘Gaza Genocide: A Collective Crime’ বা ‘গাজা গণহত্যা: এক যৌথ অপরাধ’।  খবর প্রেসটিভির।

‎‘বৈষম্য থেকে গণহত্যা’—এক রূপান্তরের ইতিহাস

‎আলবানিজ বলেন, এই প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে কীভাবে এসব দেশ চোখ বুজে থেকেছে, যখন গাজার দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে বোমা হামলা, অনাহার ও অবরোধের মাধ্যমে ধ্বংস করা হচ্ছে।

‎তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটন ও বার্লিন থেকে শুরু করে লন্ডন ও তারও বাইরে পর্যন্ত সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক যোগসাজশের এক বিশাল জাল বিস্তৃত’।

‎দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি একে ‘বর্ণবৈষম্যবিরোধী সংগ্রামের প্রতীকী কেন্দ্র থেকে দেওয়া এক সাক্ষ্য’ বলে বর্ণনা করেন।

‎আলবানিজ বলেন, বিশ্বশক্তিগুলো ‘ইসরাইলের সামরিকায়িত বর্ণবৈষম্যের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, রক্ষা করেছে এবং শক্তিশালী করেছে’। যার ফলাফল হলো এই গণহত্যা, যা ফিলিস্তিনের আদিবাসী জনগণের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অপরাধ’।

‎জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত বলেন, সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর পাঠানো অস্ত্র, প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্য ইসরাইলকে গাজায় ‘শ্বাসরুদ্ধ, অনাহারে নিপতিত, ধ্বংসপ্রাপ্ত’ অবস্থায় নিয়ে এসেছে।

‎সহযোগিতার ক্ষেত্র

‎ফ্রান্সেসকা আলবানিজের এই প্রতিবেদনে ইসরাইলের যুদ্ধ অর্থনীতির কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশটি ইসরাইলের অস্ত্র আমদানির দুই-তৃতীয়াংশ জোগান দেয় এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সাতবার ভেটো প্রয়োগ করে ইসরাইলকে দায়মুক্তি দিয়েছে।

‎প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জার্মানি, ব্রিটেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশও উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করেছে, যদিও ‘গণহত্যার প্রমাণ ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছিল’।

‎তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিচারিতারও সমালোচনা করে বলেন, ‘ইইউ রাশিয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে, কিন্তু ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্যে তারা এখনো প্রধান অংশীদার— এটি মানবিক সহায়তাকে অস্ত্রে পরিণত করার এক উদাহরণ’।

‎আলবানিজ উল্লেখ করেন, গাজার ওপর প্রায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসরাইল যে নৃশংসতা চালিয়েছে, ইউরোপীয় দেশগুলোর সহযোগিতা সেটিকে আরও মারাত্মক করে তুলেছে।

‎আরব সহযোগীদের ভূমিকা

‎এই প্রতিবেদনে আরব দেশগুলোকেও ছাড় দেওয়া হয়নি। আলবানিজ বলেন, ‘গাজা জ্বলতে থাকলেও’ কিছু আরব রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে।

‎তিনি বিশেষভাবে মিশরের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশটি ‘ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা ও জ্বালানি সহযোগিতা বজায় রাখছে এবং রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রেখেছে’— যা গাজার শেষ মানবিক জীবনরেখাটিকেও চেপে ধরছে।

‎অস্ত্র, বাণিজ্য ও কূটনীতির বাইরেও আলবানিজ বলেন, ‘জাতিসংঘ ও বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর দশকের পর দশকের নৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতা’ এই গণহত্যাকে বাস্তব সময়ে ঘটতে দিয়েছে— এমনকি সরাসরি সম্প্রচারিত হলেও তা থামাতে বিশ্ব ব্যর্থ।

‎তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘বিশ্ব এখন এমন এক সীমানায় দাঁড়িয়ে আছে— যা আইনের শাসনের পতন ও ন্যায়ের পুনর্জাগরণের মধ্যবর্তী এক ছুরির ধারালো প্রান্ত’।

‎আলবানিজ বলেন, ‘পুনর্জাগরণ তখনই সম্ভব, যখন যোগসাজশের মুখোমুখি হওয়া হবে, দায় স্বীকার করা হবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে’।

‎এদিকে আলবানিজের বক্তব্যের পরই জাতিসংঘ অধিবেশন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কারণ ওই সময় ইসরাইলি দূত ড্যানি দানন ব্যক্তিগত আক্রমণ চালিয়ে তাকে ‘দুষ্ট ডাইনি’ বলে গালিগালাজ করেন।

‎মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা তার এই আক্রমণকে ‘অশোভন ও লজ্জাজনক’ বলে নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি দেখায় যে— ‘স্বাধীন জাতিসংঘভুক্ত কণ্ঠগুলোকে স্তব্ধ করার মরিয়া চেষ্টা চলছে’।

‎এদিকে মৌখিক আক্রমণের জবাবে অবিচল আলবানিজ বলেন, ‘যদি আপনারা আমার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হিসেবে জাদুবিদ্যার কথা বলেন, আমি তা মেনে নিচ্ছি। কিন্তু যদি সত্যিই আমার কোনো মন্ত্রশক্তি থাকত, আমি তা ব্যবহার করতাম আপনাদের অপরাধ থামাতে এবং দায়ীদের শাস্তি দিতে’।

‎তিনি বক্তৃতার শেষে রাষ্ট্রগুলোর প্রতি ইসরাইলের সঙ্গে সব সামরিক ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্থগিত করার আহ্বান জানান, বিশেষ করে দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য পণ্য আদান-প্রদান, যা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে।

‎আলবানিজ বলেন, ‘সময় এসেছে— কিছু মানুষের নয়, বরং সবার মর্যাদা ও অধিকারের ওপর ভিত্তি করে এক জীবন্ত কাঠামো গড়ে তোলার’।

‎এদিকে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা তার এই প্রতিবেদনকে গাজার যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রকাশিত সবচেয়ে কঠোর ও স্পষ্ট অভিযোগপত্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

‎উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মন্তব্য (০)





image

ভিন্ন কোনো দেশের কারণে ঢাকা–বেইজিং সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হব...

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঝুঁকতে দেখে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতার প...

image

আবারও ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব নিজের বলে দাবি ট...

নিউজ ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও দাবি করেছেন, তিনি...

image

কানাডায় বিষ্ণোই গ্যাংয়ের তাণ্ডব, খুন হলো ভারতীয় বংশোদ্ভূত...

নিউজ ডেস্ক : ভারতের কুখ্যাত সন্ত্রাসী লরেন্স বিষ্ণোইয়ের গ্যাং কানাডায় এক...

image

মালয়েশিয়ায় নতুন কর্মী পাঠাতে যেসব শর্ত মানতে হবে

নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের নতুন সুয...

image

ভিয়েতনামে ২৪ ঘণ্টায় ১,০৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড

নিউজ ডেস্কঃ ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে মধ্য ভিয়েতনামে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। নদীগুলো ফুলে উঠেছে...

  • company_logo