
স্পোর্টস ডেস্ক : ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আবারও ফোর্বসের ২০২৫–২৬ মৌসুমের বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত ফুটবলারের তালিকার শীর্ষে উঠেছেন। গত এক দশকে ষষ্ঠবারের মতো এই পর্তুগিজ তারকা প্রথম স্থান দখল করলেন।
এক সপ্তাহ আগেই ব্লুমবার্গ রোনালদোকে ফুটবলের প্রথম বিলিয়নিয়ার ঘোষণা করেছিল— তারপরেই ফোর্বসের এই নতুন স্বীকৃতি এলো।
ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী, আল নাসর তারকার বার্ষিক মোট আয় ২৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিওনেল মেসির (১৩০ মিলিয়ন ডলার) আয়ের দ্বিগুণেরও বেশি।
রেকর্ড ভাঙা এক বছর
রোনালদো সম্প্রতি সৌদি ক্লাব আল নাসরের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছেন। চলতি মৌসুমে মাঠ থেকে তার আয় হবে ২৩০ মিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে বোনাস ও ক্লাব-সংক্রান্ত বাণিজ্যিক প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত। মাঠের বাইরে নাইকি, বাইন্যান্স ও হারবালাইফের মতো বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ড থেকে তিনি আরও ৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করবেন।
পর্তুগালের একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রোনালদো বলেন, আমি এখনও ভালো পারফর্ম করছি, ক্লাব ও জাতীয় দলকে সাহায্য করছি। তাহলে কেন থামব? এভাবে তিনি অবসরের গুজব উড়িয়ে দেন।
ফোর্বসের মতে, ইতিহাসে কেবল একজন অ্যাথলেট রোনালদোর চেয়ে এক বছরে বেশি অর্থ উপার্জন করেছেন—বক্সার ফ্লয়েড মেওয়েদার, যিনি ২০১৫ সালে ৩০০ মিলিয়ন ও ২০১৮ সালে ২৮৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিলেন।
মেসি, বেনজেমা ও এমবাপে শীর্ষ চার
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন লিওনেল মেসি, যার আয় ১৩০ মিলিয়ন ডলার—এর বেশিরভাগই মাঠের বাইরের বিজ্ঞাপন ও ব্র্যান্ড চুক্তি থেকে। তৃতীয় স্থানে আছেন ফরাসি ফরোয়ার্ড করিম বেনজেমা (১০৪ মিলিয়ন ডলার), আল ইত্তিহাদে তার শেষ মৌসুমের বেতন থেকে এই আয় এসেছে।
রিয়াল মাদ্রিদের কিলিয়ান এমবাপে চতুর্থ (৯৫ মিলিয়ন ডলার) এবং ম্যানচেস্টার সিটির আর্লিং হালান্ড পঞ্চম (৮০ মিলিয়ন ডলার)। হালান্ডের সম্প্রতি নবায়নকৃত নতুন চুক্তি মাঠের আয় ৬০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে, সঙ্গে রয়েছে আরও ২০ মিলিয়ন ডলার স্পনসরশিপ থেকে।
২০২৫ সালের তালিকায় সৌদি প্রো লিগের তিনজন খেলোয়াড় রয়েছেন—রোনালদো (১ম), বেনজেমা (৩য়) এবং সাদিও মানে (৮ম, ৫৪ মিলিয়ন ডলার)। গত বছরের তুলনায় একজন কম, কারণ নেইমার জানুয়ারিতে ব্রাজিলে ফিরে গেছেন।
গত মৌসুমে তৃতীয় স্থানে থাকা নেইমার (১১০ মিলিয়ন ডলার) বর্তমানে সান্তোসে খেলছেন, যেখানে তাঁর আয় তুলনামূলকভাবে কম—৩৮ মিলিয়ন ডলার, যার বেশিরভাগই বিজ্ঞাপন থেকে আসে।
লা লিগার দাপট
স্পেনের লা লিগা এই তালিকায় সবচেয়ে বেশি চারজন খেলোয়াড়ের প্রতিনিধিত্ব করেছে—এমবাপে (৪র্থ), ভিনিসিয়ুস জুনিয়র (৬ষ্ঠ, ৬০ মিলিয়ন ডলার), জুড বেলিংহাম (৯ম, ৪৪ মিলিয়ন ডলার) এবং বার্সেলোনার তরুণ প্রতিভা লামিন ইয়ামাল (১০ম, ৪৩ মিলিয়ন ডলার)।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইয়ামাল ফোর্বসের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী খেলোয়াড় হিসেবে এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। প্রিমিয়ার লিগের দুই খেলোয়াড় হলেন হালান্ড ও মোহাম্মদ সালাহ (৭ম, ৫৫ মিলিয়ন ডলার)। মেসি একমাত্র মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) খেলোয়াড়, ইন্টার মায়ামির হয়ে।
ফুটবল ধনীদের প্রজন্ম বদল
শীর্ষ ১০ ফুটবলারের সম্মিলিত আয় দাঁড়িয়েছে ৯৪৫ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৪% কম— তা মূলত নেইমারের অনুপস্থিতির কারণে। তবে ফোর্বস জানিয়েছে, এই তালিকার পাঁচজন খেলোয়াড়ের বয়স ২৯ বা তার কম, যা ২০২০ সালের পর সর্বোচ্চ।
গড় বয়স ৩০–এর নিচে নেমে আসায় বেলিংহাম ও ইয়ামালের উত্থান ফুটবলের নতুন যুগের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবুও, ৪০ বছর বয়সেও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো প্রমাণ করছেন—ফুটবলের পারফরম্যান্স ও পারিশ্রমিক—দুই ক্ষেত্রেই তিনি এখনও শীর্ষে।
ফোর্বসের ২০২৫–২৬ মৌসুমের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত শীর্ষ ১০ ফুটবলার
১. ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (আল নাসর) – ২৮০ মিলিয়ন ডলার
২. লিওনেল মেসি (ইন্টার মায়ামি) – ১৩০ মিলিয়ন ডলার
৩. করিম বেনজেমা (আল ইত্তিহাদ) – ১০৪ মিলিয়ন ডলার
৪. কিলিয়ান এমবাপে (রিয়াল মাদ্রিদ) – ৯৫ মিলিয়ন ডলার
৫. আর্লিং হালান্ড (ম্যানচেস্টার সিটি) – ৮০ মিলিয়ন ডলার
৬. ভিনিসিয়ুস জুনিয়র (রিয়াল মাদ্রিদ) – ৬০ মিলিয়ন ডলার
৭. মোহাম্মদ সালাহ (লিভারপুল) – ৫৫ মিলিয়ন ডলার
৮. সাদিও মানে (আল নাসর) – ৫৪ মিলিয়ন ডলার
৯. জুড বেলিংহাম (রিয়াল মাদ্রিদ) – ৪৪ মিলিয়ন ডলার
১০. লামিন ইয়ামাল (বার্সেলোনা) – ৪৩ মিলিয়ন ডলার
মন্তব্য (০)