• জাতীয়

‎রোবটিক্স প্রতিযোগিতায় মালয়েশিয়ায় স্বর্ণপদক জিতলেন চুয়াডাঙ্গার জিহাদ

  • জাতীয়

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ একজন স্বপ্নবাজ তরুণ, যার ছেলেবেলা থেকেই ছিল রোবটের প্রতি কৌতূহল। স্বপ্ন ছিল রোবটিক্সের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে নতুন কিছু সৃষ্টি করা। চুয়াডাঙ্গার দর্শনার তরুণ জাহিদ হাসান জিহাদের সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তার উদ্ভাবনী ‘হেক্সাগার্ড রোভার’ দেশের সীমানা পেরিয়ে প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

‎বোমা শনাক্তকরণ ও নিষ্ক্রিয়করণে সহায়তা, অগ্নি শনাক্তকরণ ও নির্বাপন, বন্যপ্রাণী নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার কার্যক্রম, সীমান্তে নজরদারিসহ বিভিন্ন সামরিক মিশন পরিচালনায় সক্ষম এই রোভার। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে সেগি ইউনিভার্সিটিতে চার দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন কমপিটিশন অ্যান্ড এক্সিবিশন (ওয়াইস) ২০২৫। সেখানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় দুই শতাধিক দল অংশগ্রহণ করে। এই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় প্রদর্শন করা হয় ‘হেক্সাগার্ড রোভার’; যা ব্যাপক প্রশংসিত হয়। জিহাদের উদ্ভাবন স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে। তার সাফল্যে খুশি স্বজন ও এলাকার মানুষ।

‎গত বছর জিহাদের উদ্ভাবনী ‘ট্রেন সিকিউরিটি সিস্টেম’ উপজেলা ও জেলার গণ্ডি পেরিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে জাতীয় পর্যায়ে। রোবোটিক্স নিয়ে ব্যাপক গবেষণার জন্য দর্শনা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান জিহাদ প্রতিষ্ঠা করেন চুয়াডাঙ্গা সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স ক্লাব। সেখানে প্রায় এক বছর ধরে নিরলস পরিশ্রম করে তৈরি করেন ‘হেক্সাগার্ড রোভার’। তার কাজে সহযোগিতা করে তার সহপাঠি ও শুভাকাঙ্খিরা।

‎চুয়াডাঙ্গা সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ‘হেক্সাগার্ড রোভার’ রোবটের উদ্ভাবক জাহিদ হাসান জিহাদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডে উদ্ধার থেকে সামরিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই রোভার। এই রোবটে রয়েছে ১৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপ সহ্য করার ক্ষমতা, স্টেইনলেস স্টিল বডি, ধোঁয়া ভেদকারী V38 Pro Zero ক্যামেরা ও MQ সিরিজ গ্যাস সেন্সর। তাই ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা যেখানে পৌঁছাতে অক্ষম সেখানে এই রোবট প্রাথমিক পর্যায়ে পানি বা ফোম ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করতে সক্ষম হবে। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ও সামরিক নিরাপত্তায় রোবটি কাজ করবে। এটি সামরিক মিশন পরিচালনায়ও সক্ষম হবে। ৬-ডিওএফ মেকানিক্যাল আর্ম, মেটাল ডিটেকশন এবং সিগন্যাল জ্যামিং সিস্টেমের মাধ্যমে বিপদজনক বিস্ফোরক শনাক্ত ও নিস্ক্রিয় করতে সক্ষম।

‎জিহাদ আরও বলেন, শিল্প ও কারখানা নিরাপত্তায় কাজ করবে এই রোভার। কার্বন মনোক্সাইডসহ বিষাক্ত গ্যাস শনাক্ত, লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং এবং জরুরি সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়ার সুবিধা। সুরক্ষিতভাবে বন্য প্রাণীকে ট্রাঙ্কুলাইজার ইনজেকশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ, আবার কৃষি ক্ষেত্রে মাটি আর্দ্রতা, সেচ ও ফসল মনিটরিং এ কাজ করবে এই রোবট। যুদ্ধ বা দুর্যোগ এলাকায় ওষুধ, খাবার, পানি পৌঁছে দেওয়া এবং ভয়েস কমিউনিকেশনের মাধ্যমে আশ্বস্ত করতে পারবে এই রোবট। নাইট ভিশন ক্যামেরা, সেন্সর ও লাইভ ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে সীমান্ত বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নজরদারি করতে পারে এই রোবট। আগামী দিনে হেক্সাগার্ড রোভারে যুক্ত হবে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ও দীর্ঘ পরিসরে চলাচলের ক্ষমতা।

‎বর্তমানে দর্শনা পৌর এলাকার কাস্টমসপাড়ায় বসবাস করেন জাহিদ হাসান জিহাদের পরিবার। তার মা নাসিমা খাতুন বলেন, জিহাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা একটি সাধারণ পরিবেশে। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিলো রোবটিক্সের মাধ্যমে নতুন কিছু সৃষ্টি করা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নানা বাধা আসলেও হাল ছাড়েনি জিহাদ। জিহাদ দেশের ভেতরেও অসাধারণ কিছু সাফল্য অর্জন করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ৪৬ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন, কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে আল জাজিরা ইসলামিক সায়েন্স ফেস্ট প্রতিযোগিতায় রানার-আপ, ওয়াইস বাংলাদেশ রাউন্ড-এ সিলভার মেডেল এবং মর্যাদাপূর্ণ ড্রিমস অব বাংলাদেশ স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড অর্জন। জিহাদের এই অর্জন নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

‎চুয়াডাঙ্গা সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স ক্লাবের সভাপতি শরিফুল আলম মিল্টন বলেন, প্রথমবারের মতো খুলনা বিভাগ থেকে ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন কমপিটিশন অ্যান্ড এক্সিবিশনে (ওয়াইস) অংশগ্রহণ করেই স্বর্ণপদক জিতলো চুয়াডাঙ্গা সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স ক্লাব। টিমের নেতৃত্বে ছিলেন দর্শনা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান জিহাদ ও সহযোগি হিসেবে ছিলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তোহা বিন আসাদ দীপ। জিহাদের উপস্থাপনা বিচারকদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শেষ পর্যন্ত আইটি ও রোবোটিক্স ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি হিসেবে জিতে নেয় স্বর্ণপদক। এটি চুয়াডাঙ্গা জেলা তথা বাংলাদেশের একটি বড় অর্জন।

‎দামুড়হুদা উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার রাফিজুল ইসলাম বলেন, জিহাদের এই প্রকল্পটি অত্যন্ত আধুনিক। এটি সরকারি পৃষ্ঠপোশকতা পেলে আরও সমৃদ্ধ হবে। এটি জাতীয়ভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের কল্যান বয়ে আনবে। বিশেষ করে সামরিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে রোবটটি অত্যন্ত যুগোপযোগী।

‎জিহাদের এই অর্জন নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে মনে করেন দামুড়হুদা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কে এইচ তাসফিকুর রহমান। তিনি বলেন, জিহাদ একজন রত্ন। তার উদ্ভাবনী প্রকল্প দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে দেশে। বিশ্বে আবারও উজ্জ্বল হয়েছে বাংলাদেশের মুখ। তার প্রকল্পটি বর্তমান যুগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও আধুনিক।

‎চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, জিহাদের এই অর্জনে আমরা সত্যিই আনন্দিত। তার এই অর্জনে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স ক্লাবের সর্বাত্মক সাফল্য কামনা করি এবং ক্লাবটি আরও দূর এগিয়ে যাক এই প্রত্যাশা।

মন্তব্য (০)





image

পূজাকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় র‌্যা...

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্...

image

‎অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ...

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ মো. আব্দুর র...

image

‎পাহাড়ে সব সম্প্রদায়কে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আ...

নিউজ ডেস্কঃ পাহাড়ে বসবাসরত সব সম্প্রদায়কে শান্তিপূর্ণ পরিব...

image

‎রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তায় ৩ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার দিলো জাপান

নিউজ ডেস্কঃ রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে ৩ ...

image

‎শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ ঠেকাতে বন্ধ হচ্ছে দুই অ্যাপ

নিউজ ডেস্কঃ কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী...

  • company_logo