
নিউজ ডেস্ক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানি, অনিয়ম, অদক্ষতা ও অযৌক্তিক কর আদায়ের অভিযোগ তুলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে আয়োজিত মিট দ্যা বিজনেসের প্রথম অংশীজন সভায় বিভিন্ন ভোগান্তির কথা তুলে ধরা হয়। সভায় দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও বাণিজ্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অগ্রিম আয়কর (এআইটি) সমন্বয় না হওয়া, ছোট ব্যবসার জন্য উচ্চ টার্নওভার কর হার, আমদানি-রপ্তানির সময় কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের হয়রানি, অহেতুক মামলা, কাস্টমসে ভোগান্তি, বন্ডের কাঁচামাল খালাসে জটিলতা, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যে অগ্রিম কর আরোপের অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। রেস্তোরাঁ খাতে এনবিআর কর্মকর্তাদের অত্যাচার, কাস্টমসে ল্যাব টেস্টে ভোগান্তির বাস্তব চিত্র তারা তুলে ধরেন। এছাড়া রিফান্ড ও কার্যকর কর হার সমন্বয়, পচনশীল পণ্যের খালাস সহজতর করা, উচ্চ ন্যূনতম শুল্কহারের দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসা সহজ করার ক্ষেত্রে এনবিআরের সাম্প্রতিক কিছু উদ্যোগের প্রশংসা করেন তারা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ স্বীকার করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের আশ্বাস দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ব্যবসায়িক কার্যক্রম সহজ করতে আমাদের কিছু নিয়ম সংশোধন করতে হবে। নতুন প্রজন্মের আশা কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না। ব্যবসায়ীরা তাদের কষ্টার্জিত আয়ের একটি অংশ কর দিচ্ছেন। কিন্তু তারা মনে করেন করের বিনিময়ে যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না। তিনি জানান, করদাতাদের সুবিধা দিতে এনবিআর বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। তবে এর অর্থ এই নয়-এনবিআর করদাতাদের ব্যাংক হিসাব মনিটর করবে। বরং কর প্রদানের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) একটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, এইচএস কোডের অসঙ্গতিতে এক রপ্তানিকারক বন্ডেড পণ্য ছাড়তে সমস্যায় পড়ে। আমরা নির্দেশ দিয়েছি-ভুল থাকলেও পণ্য ছেড়ে দিতে। পরে তদন্তে মাধ্যমে সমাধান করা হবে। ব্যবসায়ীদের কেবল কর মওকুফের জন্য ব্যবসা পরিচালনা না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কর মওকুফের ক্ষেত্রে দেশ ও মানুষের উপকার কতটুকু হচ্ছে, ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয় আমাদের হিসাব করতে হবে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে জেন’স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির খান বলেন, চামড়া শিল্পকে বনসাই গাছের মতো ছোট করে রাখা হয়েছে। ফলে এটি বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। আমরা ভুয়া মামলার মুখোমুখি হই। বহু বছর আদালতে লড়াইয়ের পর আমরা অবশেষে মুক্তি পাই। কিন্তু সেই কর্মকর্তাদের কোনো জবাবদিহি বা শাস্তি হয় না। টার্নওভার করের হার বৃদ্ধি আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, এমনকি আমরা লাভ না করলেও। জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কর্মক্ষমতার হিসাব রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যাতে জবাবদিহি নিশ্চিত হয়।
বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিডব্লিউসিসিআই) পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী জানান, আগে আয়কর আইনে তিন বছরের মধ্যে সুদের অর্থ পরিশোধের সুবিধা ছিল। কিন্তু ২০২৩ অর্থবছরে সেই বিধান বাতিল করা হয়েছে। অভিযোগ করে এক শীর্ষস্থানীয় স্টিল মিলসের প্রতিনিধি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে পণ্য অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোতে (আইসিডি) পাঠিয়ে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত খরচ ও বিলম্বের মুখে ফেলছে। আমরা চাই-তিন দিনের ফ্রি সময়ের মধ্যেই পণ্য ছাড় করতে। কিন্তু বন্দর পণ্য আইসিডিতে পাঠিয়ে দেয় অন্যদের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য। ব্যবসায়ীদের জিআরএস প্ল্যাটফর্ম সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ব্যবসা সুরক্ষা ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে এবং কাঠামোগত সংস্কার জরুরি।
সম্প্রতি এনবিআর সিদ্ধান্ত নিয়েছে-নন-বন্ডেড রপ্তানিকারকরা ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে কাঁচামাল ছাড় করতে পারবেন। একইসঙ্গে হিমায়িত মাছ রপ্তানিকারকদের বন্ড সুবিধার আওতায় আনার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্ড প্রক্রিয়ার স্বয়ংক্রিয়করণ করা হবে যাতে প্রতি বছর অডিটের সংখ্যা কমানো যায়। এনবিআর জানায়, এ বছর থেকে করপোরেট কর রিটার্ন অনলাইনে জমা দেওয়া যাবে। আগামী সপ্তাহ থেকে আয়কর প্র্যাকটিশনাররা অনলাইনে তাদের ক্লায়েন্টদের রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। করদাতাদের অভিযোগ সমাধানে এনবিআর গ্রিভেন্স রেড্রেস সিস্টেম (জিআরএস) চালু করেছে। ব্যবসায়ীদের এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের আহ্বান জানান চেয়ারম্যান।
মন্তব্য (০)