
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দেশে মামলার দীর্ঘসূত্রতা স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগকে ব্যাহত করছে। প্রায় ৪০ লাখ মামলা আদালতে ঝুলে আছে, এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ব্যাবসায়িক বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিকল্প প্রক্রিয়া যেমন আরবিট্রেশন, বিশেষায়িত কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ওপর জোর দেন সেমিনারে বক্তারা। এ ছাড়া ২০০১ সালে প্রণীত আরবিট্রেশন আইনও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন কথা বলা হয়।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক সেমিনার ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম খান।
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘ব্যাবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ ও মেধাস্বত্ব নিয়ে বিরোধ ক্রমে বাড়ছে। বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিলম্ব বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে। এ জন্য অভিজ্ঞ বিচারকদের মাধ্যমে আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট গঠন এখন সময়ের দাবি।’
বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মামলার চাপে আদালতের কার্যক্রম অসহনীয় হয়ে পড়েছে। প্রথাগত আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তি হলে একদিকে আদালতের চাপ কমবে, অন্যদিকে বাণিজ্য পরিবেশ উন্নত হবে। তিনি জানান, কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপনের খসড়া আগামী এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের পর বৈদেশিক বিনিয়োগ টানতে বাণিজ্যিক আদালত অপরিহার্য। আরবিট্রেশন কার্যক্রম গতি পেলে বিনিয়োগ স্থবিরতা কমবে।’ তিনি আরো জানান, লজিস্টিক ও শিপিং খাতে ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে আগ্রহী।
বিশেষ অতিথি আবদুর রহিম খান বলেন, ‘বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা শুধু এফডিআই নয়, রপ্তানি সম্প্রসারণকেও বাধাগ্রস্ত করছে। আদালতের বাইরে আইনি সংস্থার মাধ্যমে আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুত সমাধান খোঁজা যেতে পারে।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার বলেন, ‘ডুইং বিজনেস রিপোর্টে কন্ট্রাক্ট এনফোর্সমেন্ট সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯০ দেশের মধ্যে ১৮৯তম, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত ঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজার মামলা বিচারাধীন।’ তিনি আরবিট্রেশন আইন সংস্কারের ওপর জোর দেন।
প্যানেল আলোচনায় বিডার মহাপরিচালক আরিফুল হক বলেন, ‘শুধু আইন নয়, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দিকেও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’ বিয়াকের প্রধান নির্বাহী কে এ এম মাজেদুর রহমান জানান, ‘বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা ইতিমধ্যেই উদ্বেগজনক।’
সিঙ্গাপুরের রাজাহ অ্যান্ড থানের কো-হেড ভিকনা রাজা বলেন, ‘শক্তিশালী আইনি কাঠামো বিনিয়োগ আকর্ষণের মূল চাবিকাঠি। স্পেশালাইজড কমার্শিয়াল কোর্ট গঠন ছাড়া বিকল্প নেই।’ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘কমার্শিয়াল কোর্ট পরিচালনায় অভিজ্ঞ বিচারক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।’
ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘বাণিজ্য বিরোধ সমাধানে আন্ত মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। আদালতের পরিবর্তে আরবিট্রেশন সেন্টারে বিরোধ মেটানোর দিকে জোর দিতে হবে।’
আলোচনায় আরো অংশ নেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের উপ আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দা রত্নে, ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড এসোসিয়েটসের পার্টনার ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং ব্যাবসায়িক খাতের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য (০)