
নিউজ ডেস্ক : জুলাই ঘোষণাপত্রে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের চিন্তা ও চেতনার প্রতিফলন দেখা গেছে—এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, জাতি জুলাই বিপ্লবের অপেক্ষায় ছিল। এটি দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তবে যদি শত শত মানুষের রক্ত ও ত্যাগ বৃথা যায়, তাহলে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে।
তিনি অভিযোগ করেন, বিচারপতি হত্যা, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের ঘটনা এবং শিক্ষকদের অবদান—এসব কিছুই জুলাই ঘোষণাপত্রে উপেক্ষিত। জুলাইয়ের যে গণআকাঙ্ক্ষা ছিল, তা ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত হয়নি। তাই এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে ঘোষণাপত্রটি সংশোধন করতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে (তৃতীয় তলা) বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন আয়োজিত ২০০৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে ‘ছাত্র-শিক্ষক-জনতার অবদান ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে এসব কথা বলেন তিনি।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে ইসলামপন্থিদের অবদান যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে প্রণীত ঘোষণাপত্রটি অসম্পূর্ণ। বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে নতুন করে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার আশঙ্কা রয়েছে। নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে ইতিবাচক বলা হলেও, প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের আয়োজন জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হবে। তাই নির্দলীয় সরকারের অধীনে ‘জুলাই সনদ’-এর আইনি ভিত্তি স্থাপন করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি ড. এম কোরবান আলী এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম ফজলুল করীম।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফ্যাসিবাদ লুকিয়ে আছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ছাড়া সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। যাদের কারণে দ্বিতীয় স্বাধীনতার সূচনা হয়েছিল—সেই শ্রমিক, মুটে-মজুর ও শিক্ষকরা জুলাই ঘোষণাপত্রে উপেক্ষিত। দেশ ও জাতির স্বার্থে অন্তঃসারশূন্য এ ঘোষণাপত্র সংশোধন করা সময়ের দাবি।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন—অধ্যক্ষ মা. সিরাজুল ইসলাম, সভাপতি, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক পরিষদ; জিএম আলাউদ্দিন, সভাপতি, বাংলাদেশ ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ; অধ্যক্ষ ড. মো. সাখাওয়াত হোসাইন, সভাপতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক পরিষদ; অধ্যক্ষ মো. মুনজুরুল হক, সভাপতি, বাংলাদেশ মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক পরিষদ; অধ্যাপক নূর নবী মানিক, সভাপতি, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক পরিষদ; অধ্যক্ষ ড. মাওলানা শাহজাহান মাদানী, সভাপতি, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ এবং প্রফেসর ড. উমার আলী, সভাপতি, বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদ।
সভায় আলোচনা সংকলন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি ড. এম কোরবান আলী। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের শিক্ষকরা ক্লাসরুমে পাঠদান বন্ধ রেখে পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য রাজপথে অবস্থান করছেন। সরকারের কাছে তারা বারবার দাবি জানালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ শিক্ষকরা বৃষ্টিতে ভিজে, রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে, মশার কামড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
তিনি সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান—সব শিক্ষক সংগঠনের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
সভায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বলেন, নতুন প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে।
মন্তব্য (০)