• সমগ্র বাংলা

৩৬ জুলাই: কেমন ছিলো ইন্টারনেট বন্ধের সেই দিনগুলো?

  • সমগ্র বাংলা

প্রতীকী ছবি

সঞ্জু রায়, বগুড়া: জুলাই আসলেই মনে পড়ে ইন্টারনেট বন্ধের সেই দিনগুলোর কথা। ছাত্র জনতার আন্দোলনকে দমাতে সুপরিকল্পিতভাবে একটি জাতিকে কিভাবে অন্ধকারে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল যা আজও হতবাক করে বাংলার মানুষদের। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন রুপ নেয় ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে তখন সাধারণ মানুষকে অন্ধকারে রাখতে কয়েক দফায় বন্ধ করা হয়েছিলো দেশের ডিজিটাল স্পন্দন 'ইন্টারনেট'।
১৬ জুলাই আবু সাঈদের মৃত্যুতে পুরো জাতি যখন রাজপথে গর্জে ওঠে তখন ১৭ই জুলাই আংশিক আর ১৮ জুলাই বিকেল থেকে রাত নয়টার মধ্যে দেশজুড়ে বন্ধ করে দেয়া হয় মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট যা প্রথম ধাপে বন্ধ ছিল ২৮ জুলাই পর্যন্ত। মাঝে ২৪ জুলাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করলেও তা সীমাবদ্ধ ছিল সরকারি দপ্তরগুলোতেই। পুরো সময় বন্ধ রাখা হয়েছিল ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রামসহ সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লাটফর্ম যা ৩১ জুলাই খুলে দিলেও গতি ছিলো একেবারেই কম। আন্দোলন জোরালো হলে ৪ আগস্ট আবারো বন্ধ করা হয় ফোর জি নেটওয়ার্ক যা স্বাভাবিক হয় ৫ আগস্ট দুপুরের পর।
ইন্টারনেট বিভ্রাটের সেই দিনগুলোর ভোগান্তি আজও ভোলেনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সম্মুখ সারির যোদ্ধারা। ভার্চুয়াল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর গ্রেপ্তার আতঙ্ক মাথায় নিয়েই সংগঠিত হয়েছিলেন এদেশের ছাত্র জনতারা। সড়কে যখন শোনা যাচ্ছিলো কখনো গুলি আর রাবার বুলেট নিক্ষেপের শব্দ আবার কখনো কখনো টিয়ার গ্যাস আর একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণের শরীর হিম করা আওয়াজ তখন বাড়িতে থাকা মায়েরা জানতে পারেনি তাদের সন্তানেরা কোথায় । ফোনে কল করলেই তথ্য চলে যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। ইন্টারনেট বন্ধের বীভৎস সেই দিনগুলোর আর পুনরাবৃত্তি চাই না আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
ইন্টারনেট বন্ধের সে দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বগুড়ার সাবেক সদস্য সচিব সাকিব খান ও সক্রিয় একজন আন্দোলনকারী বিপ্লব বলেন, কোন সভ্য দেশে ইন্টারনেট বন্ধের মত এমন কলঙ্কজনক অধ্যায় নেই। একদিকে বন্ধ করা হয়েছিল ইন্টারনেট অন্যদিকে নির্বিচারে বুলেট ছড়া হয়েছিল তাদের সহকর্মীদের উপরে। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লাটফর্মের গ্রুপে যেহেতু তারা সংঘটিত হয়েছিলেন যখন ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায় তখন সাময়িক কিছু সময়ের জন্য ভিপিএন ব্যবহার করে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বারংবার ব্যর্থ হয়েছেন তারা। পরে বাধ্য হয়ে মোবাইলে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করলে সেই তথ্য চলে যেত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
একই প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যখন রূপ নেয় এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে তখন তাদের হাজারো নেতাকর্মী বগুড়ার ১২টি উপজেলার রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আন্দোলন যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিলো ঠিক তখনই দফায় দফায় বন্ধ করা হয়েছিল ইন্টারনেট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ছোড়া রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস আর গুলির শব্দে জনপদ যখন আতঙ্কিত ছিল তখন তাদের অসংখ্য কর্মী আহত হয়ে রাস্তায় পড়েছিল যাদের সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার ভেবেছিল আন্দোলনের সকল নির্দেশনা আসছে লন্ডন থেকে তাই তড়িঘড়ি করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ইন্টারনেট তারপরেও তারা তাদের পতন ঠেকাতে পারেননি। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট এর মত এমন ঘটনা আর যেন না ঘটে সেই আহ্বান জানান এই যুবনেতা।
শুধু কি তাই ইন্টারনেট বন্ধের কারণে মুহূর্তেই থমকে গিয়েছিল দেশের ব্যাংকিং পরিসেবা, প্রবাসীদের যোগাযোগ, আমদানি রপ্তানি ও কাস্টমস প্রক্রিয়া, স্বাস্থ্য ও টেলি মেডিসিন সেবাসহ একাধিক খাত। ই-ক্যাবের পরিসংখ্যান বলছে এই কয়দিনে শুধু ই-কমার্স সেক্টরেই ক্ষতি হয়েছিলো প্রায় ১৭'শ কোটি টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছিল পত্রিকার মালিক থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের গণমাধ্যমকর্মীরা। ইন্টারনেট না থাকায় একদিকে যেমন বন্ধ হয়েছিল সংবাদের প্রবাহ অন্যদিকে পত্রিকা প্রকাশে সংশ্লিষ্টদের ফিরে যেতে হয়েছিল সেই আশির দশকের সনাতনী পদ্ধতিতে।
ইন্টারনেট বন্ধের সেই দিনগুলোতে কিভাবে চলেছিল গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত কাজ জানতে চাইলে বগুড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কালাম আজাদ জানান, ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে জুলাইয়ে গুজবের মহোৎসব শুরু হয়েছিল। সাংবাদিকরা চেষ্টা করেও সাধারণ মানুষের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছাতে পারেননি। জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে যারা কাজ করেন তৃণমূল থেকে তারা মুঠোফোনে তথ্য দিয়ে তারপরেও চেষ্টা করেছেন পেশাগত দায়িত্ব পালনের। যদিও সে সময় ফ্যাসিস্টবিরোধী যে গণমাধ্যমকর্মীরা ছিলেন তারাও পরেছিলেন রোষানলে। কালাম আজাদ জানান বিএনপির মিডিয়া সেলে কাজ করার অপরাধে তাকেও সে সময় বাড়ি থেকে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ইন্টারনেট না থাকার কারণে গ্রেপ্তার হওয়ার খবরটুকু পর্যন্ত পৌঁছায়নি তার সাংবাদিক সহকর্মীদের নিকট পর্যন্ত।
এদিকে আধুনিক যুগে এসেও ইন্টারনেট বিড়ম্বনায় সনাতনী পদ্ধতিতে পত্রিকা প্রকাশের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক চাঁদনী বাজারের প্রকাশক সাবু ইসলাম ও দৈনিক করতোয়ার জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক রাহাত রিটু বলেন, ইন্টারনেটকে একটি সময় বিলাসিতা ভাবা হলেও বর্তমানে তা একজন মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত। বিনা মেঘে বর্জ্যপাতের মতো ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট হওয়ার পর তারা প্রতিনিধিদের থেকে মুঠোফোনে তথ্য নিয়ে হাতে-কলমে করেছিলেন পত্রিকা পেস্টিংয়ের কাজ। সংবাদের অভাবে কমিয়ে আনা হয়েছিল পত্রিকার পাতার সংখ্যা। দ্বিগুণ ব্যয়ে গভীর রাত পর্যন্ত ছাপানো হয়েছিল পত্রিকা।
'সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করেনি, বন্ধ হয়ে গেছে' এমন বক্তব্য আজও মানুষের মনে জন্ম দেয় ক্ষোভ আর ঘৃণার। ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট এর মত এমন কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি আর কখনো না হোক এই বাংলাদেশে এমনই প্রত্যাশা সকলের।

মন্তব্য (০)





image

চিলমারীতে ওএমএস ডিলার নিয়োগ লটারি সম্পন্ন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ দু’দুবার তারিখ নির্ধারন হলেও...

image

জামালপুরে র‍্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে লাখ টাকা জরিমানা

জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র&...

image

ফরিদপুরে ইজিবাইক চালককে হত্যার দায়ে পাঁচজনের মৃত্যুদন্ড

ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরে ইজিবাইক ছিনতাই ও চালককে হত্যার ম...

image

ঢাকা-৮ আসনের ইয়ুথ এমপি নির্বাচিত হলেন ইনফ্লুয়েন্সার মো. আ...

পবিপ্রবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদ ২০২৫-এ ঢাকা-৮ আসন...

image

ফরিদপুরের সালথায় অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের সালথায় অজ্ঞাত এক যুবকের (৪৫) অর...

  • company_logo