
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামাস উৎখাত আর তাদের কবল থেকে জিম্মি উদ্ধারের নামে ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চলছেই। প্রতিদিনই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা; দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের মিছিল। নিরাপদ বলে কোনো স্থান বাকি নেই গাজাবাসীর জন্য। একদিকে আকাশ ও স্থল অভিযান, অন্যদিকে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ; গাজা যেন সাক্ষাৎ নরক হয়ে উঠেছে তার বাসিন্দাদের জন্য।
এরই মধ্যে সপ্তাহখানেক ধরে গাজায় আগ্রাসনের মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা, যার ফলে ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডার মতো একের পর এক মিত্র দেশ তাদের সমর্থন সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েলের ওপর থেকে। সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও শুরু হয়ে গেছে টানাপোড়েন। অব্যাহত এ চাপের মধ্যেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজের অবস্থানে অটল। আরও একবার তিনি ঘোষণা করেছেন, গাজা পুরোপুরি দখলে না নেওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর আগ্রাসন চালিয়ে যাবে তার সেনারা।
সেইসঙ্গে কাতারের মধ্যস্ততায় চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনা ভেস্তে দিয়ে নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির কোনও স্থায়ী চুক্তিতে রাজি নন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আনাদোলু।
বুধবার জেরুজালেমে নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি, গাজায় এখনও অন্তত ২০ জন ইসরায়েলি বন্দি জীবিত রয়েছে এবং আরও প্রায় ৩৮ জন সম্ভবত নিহত হয়েছেন। শুধুমাত্র বন্দিদের উদ্ধারের জন্য স্বল্প সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি বিবেচনায় আনা হতে পারে। তবে এটিকে ‘অস্থায়ী বিরতি’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
হামাস বারবার বলছে, যদি ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ করে, গাজা থেকে সেনা সরিয়ে নেয় এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেয়, তাহলে তারা সমস্ত ইসরায়েলি বন্দিকে একক বিনিময়ে মুক্তি দিতে প্রস্তুত। কিন্তু নেতানিয়াহু এই শর্তগুলো পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং গাজা থেকে হামাসকে উৎখাত, তাদের পুরোপুরি নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজা পুনর্দখল করার কথা জোর দিয়ে বলেছেন।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলে এখনও অন্তত ১০ হাজার ১০০ ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন, যাদের অনেকেই নির্যাতন, অনাহার ও চিকিৎসা অবহেলার শিকার বলে জানিয়েছে মানবাধিকার বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যম।
এদিকে, নেতানিয়াহুর আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় ক্ষুব্ধ ইসরায়েলের বিরোধী নেতা এবং বন্দিদের পরিবারগুলো। তাদের অভিযোগ, নেতানিয়াহু চরম ডানপন্থি; জোটসঙ্গীদের খুশি রাখতে এবং নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে তিনি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন।
বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ সমন্বয়ের কথা বলে নেতানিয়াহু মিথ্যা বলছেন। নেতানিয়াহুর সবশেষ বক্তব্যের মানে হলো, আগামী বহু বছর গাজা দখলে রাখা হবে।
অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা ইয়াইর গোলান বলেন, আমি দেখলাম এক চাপে ভেঙে পড়া, মিথ্যা বলা, দায়িত্ব এড়ানো এক নেতার প্রহসন। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আমি মানহানির মামলা করব এবং খুব শিগগিরই নির্বাচনে তাকে পরাজিত করব।
এছাড়া গাজায় বন্দি থাকা ব্যক্তিদের পরিবারের ফোরাম এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা হয়তো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সুযোগ হারাতে চলেছি। ১৯ মাস পার হলেও এই যুদ্ধের কোনও শেষ নেই, পুনর্গঠনেরও কোনও সম্ভাবনা নেই।
এই বক্তব্যগুলো এমন সময় সামনে এসেছে যখন ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ হামলা চালিয়ে আসছে, যাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৩ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
মন্তব্য (০)