
নওগাঁ প্রতিনিধি: একটি পাঠাগার হচ্ছে জ্ঞানের ভান্ডার। সেই ভান্ডার থেকে নিজের ইচ্ছে মাফিক পছন্দের বই পড়ে সকল বয়সের পাঠকের বই পড়ার খোরাক পূরণে যোগান দিয়ে আসছে নওগাঁর রাণীনগরের দাউদপুর-বেলোবাড়ি একতা সংঘ পাঠাগার। পাঠাগারের পথচলার দুই মাসের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গ্রামের সকল শ্রেণির বই পিপাসু পাঠকদের কাছে। ইতিমধ্যেই পাঠাগারের তালিকায় জমা হয়েছে ৭শ থেকে ৮শ বই। ১০হাজারের বেশি বই সংগ্রহের পরিকল্পনার কথা জানান পাঠাগারের উপদেষ্টা মনোয়ার হোসেন তোতা।
গ্রামীণ পাঁকা সড়ক ধরে যেতেই চোখে পড়বে একটি ঘরে বসে বিভিন্ন বয়সের পাঠকরা মনযোগ দিয়ে পছন্দের বই পড়ছেন। কেউ নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বই আবার কেউ উপন্যাসের বই পড়ছে। ছোটরা বিভিন্ন কবিতা-ছড়ার বই পড়ছে। তবে শুক্রবার ও শনিবার পাঠাগারে পাঠকদের ভিড় বেশি হয়। এছাড়া প্রতিদিনই পাঠকরা পাঠাগারে এসে কিছুটা সময় হলেও বই পড়ে। পাঠাগারের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের বইপ্রীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি ও প্রবাসীদের সার্বিক সহযোগিতায় পাঠাগারটি দিন দিন সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠছে।
পাঠক সুজাউদ্দৌলা মিরাজ জানান নিরিবিলি পরিবেশে নিজের পছন্দের বই পড়তে হলে এই পাঠাগারের কোন বিকল্প নেই। পাঠাগারে হরেক রকমের লেখক, কবি, সাহিত্যিকসহ বিশ্বের বড় বড় লেখকদের বই এই পাঠাগারে রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের ধাপটি পাকাপোক্ত করতে হলে এবং বর্তমানের প্রতিযোগিতামূলক চাকরীর বাজারে একজন শিক্ষার্থী মেধার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে পাঠ্যপুস্তকের বাহিরে বেশি বেশি বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। একজন শিক্ষার্থীর সকল শ্রেণির বই কেনার মতো সামর্থ নাও হতে পারে কিন্তু একটি পাঠাগারে এসে সকল প্রকারের বই পড়ার সুযোগ রয়েছে। তাই অযথা সময় নষ্ট না করে এবং মোবাইল ফোনের আসক্তি থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিটি মানুষই উচিত অন্তত দিনে একটি ঘন্টা হলেও পাঠাগারে এসে বই পড়া।
পাঠাগারের উপদেষ্টা ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন তোতা জানান একজন মানুষের পরম বন্ধু হচ্ছে বই। বই মানুষকে ধোকা দেয় না বরং জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করে। আমরা সব সময় শহরকে নিয়েই ভাবি। গ্রামের অনেক বই পিপাসু পাঠক রয়েছেন যারা হাতের কাছে ইচ্ছে মাফিক বই না পাওয়ার কারণে পড়তে পারেন না। আবার গ্রামের অনেক গরীব-অসহায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা বই কেনার অভাবে পড়তে পাওে না। বর্তমান প্রজন্মদের অধিকাংশই বিশ্বের বিখ্যাত মনিরিষীদের জীবনী সম্পর্কে জানে না। আবার অনেকের ইচ্ছে থাকলেও দামী লেখকদের বই কিনে পড়তে পারেন না। আগামীতে মেধাবী জাতি পেতে হলে নিজের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন লেখকদের নানা ধরণের বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে। বিশ্বের সকল বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হলে অবশ্যই বেশি বেশি বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। এমন বিষয়গুলোকে সামনে রেখে অত্র অঞ্চলের সকল শ্রেণিপেশার মানুষদের সহযোগিতা নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে এই পাঠাগার তৈরি করা।
এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণির ব্যাকরণ, নোট বইসহ বিভিন্ন ধরণের বই পাঠাগারে রাখা হচ্ছে যেন কোন অসহায়-গরীব শিক্ষার্থী পাঠাগারে এসে তার শ্রেণির পড়া তৈরি করতে পারে। বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী থেকে একজন শিক্ষার্থীর অনেক কিছু পাওয়ার আছে। তাই দেশ ও বিদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনীর উপর অনেক বই পাঠাগারে রাখা হয়েছে যেন একজন পাঠক সেই বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী পড়ে ভালো কিছু গ্রহণ করতে পারেন। প্রতিনিয়তই পাঠাগার প্রেমী কোন না কোন ব্যক্তির দেয়া উপহার বই পাঠাগারের বইয়ের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। পাঠক সময়ের স্বল্পতার কারণে পছন্দের বই পড়তে না পারলে পাঠাগারের রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষরের মাধ্যমে বই বাড়িতে নিয়েও পড়তে পারেন। একসময় উপজেলার বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই পাঠাগারের শাখা তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে একসময় গ্রামের এই পাঠাগারটি উপজেলা তথা দেশের মানুষের কাছে একটি আদর্শ পাঠাগার হিসেবে পরিচিতি পাবে এমনই আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মন্তব্য (১)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ