• শিক্ষা

মুদ্রা প্রেমিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী

  • শিক্ষা
  • ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ১২:০৯:৫৭

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ বিচিত্র শখের মানুষ এস.এ.এইচ ওয়ালিউল্লাহ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্ট্যাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। শখের বসে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে একটু একটু করে মুদ্রা ও ডাকটিকিটের দারুণ এক সংগ্রহভাণ্ডার গড়ে তুলেছেন। 

ওয়ালির এই শখের শুরুর গল্পটা একটু অন্যরকম। একবার ফুফাতো বোনের কাছ থেকে ছয়টি অস্ট্রেলিয়ান মুদ্রা পেয়েছিলেন তার মেজো ভাই। দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় বাবার কাছ থেকে খেলনা হেলিকাপ্টার উপহার পান ওয়ালিউল্লাহ। কিন্তু কয়েক দিন পর তার মোজো ভাই খেলনাটা নষ্ট করে ফেলে। বিনিময়ে ভাইয়ের থেকে সেই ছয়টি অস্ট্রেলিয়ান মুদ্রা নিয়ে নেন তিনি। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন খালার বাড়ি থেকে পেয়েছিলেন ব্রিটিশ ভারতের কিছু রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রা। তখন থেকেই বিভিন্ন দেশের মুদ্রায় অঙ্কিত বিচিত্র সব ছবি দেখে ভালোলাগা শুরু হয়। আর একসময় এই ভালোলাগা থেকেই ওয়ালির শখের পথে যাত্রা। 

প্রথমদিকে মুদ্রা দিয়েই তার সংগ্রহের শুরু হলেও পরবর্তীতে তিনি কাগজের নোটের সংগ্রহ শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার পরিচয় হয় সংগ্রাহক জগতের পুরোধা রবিউল ইসলামের সঙ্গে, যা পরবর্তীতে ওয়ালির মুদ্রা সংগ্রহে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।

শখের কারণ জানতে চাইলে ওয়ালিউল্লাহ জানান, মুদ্রা সংগ্রহের আগে থেকেই বিদেশি মুদ্রার প্রতি আমার এক রকমের ঝোঁক ছিল। ব্রিটিশ ভারতের মুদ্রাগুলো হাতে নিলেই অন্যরকম একটা শিহরণ অনুভব করতাম। মনে হত দেড়শ’ বছরের  ইতিহাস আমার হাতের মুঠোয়! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন চিনতে শিখলাম সংগ্রহ জগতের নানান অলিগলি; তখন নিজ শেকড় সম্পর্কে জানতেই, শুরু করি আরো প্রাচীনের খোঁজ। অচেনা এই পথে নিজের শেকড় খুঁজতে খুঁজতে ঢুকে পড়েছি এক বিশাল ইতিহাসের স্রোতে। যেখানে জিজ্ঞাসা, আবিষ্কার আর অনুমানের এক অসামান্য মিলন উপভোগ করছি।

১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রকাশিত সকল ধরনের কাগজের নোট ও মুদ্রা রয়েছে তার সংগ্রহভাণ্ডারে। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, এবং ইউরোপ আমেরিকাসহ মোট ১৩৩টি দেশের প্রায় দেড় সহস্রাধিক দেশি-বিদেশি মুদ্রা, কাগজের নোট এবং স্মারক নোট রয়েছে তার সংগ্রহে। যিশু খ্রিস্টের জন্মের ১১৯ বছর আগের কয়েক ডজন কয়েন, ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরনো গান্ধার জনপদের মুদ্রা, ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রা, মগধ জনপদ এবং মৌর্য সাম্রাজ্যের মুদ্রা স্থান পেয়েছে তার সংগ্রহশালায়। 

এ ছাড়াও রয়েছে কিদারা রাজ্যের রাজা বিনয়াদিত্যের সোনার মোহরসহ ইন্দো-গ্রিক, পাঞ্চাল, শুঙ্গ, সাতবাহন, কুষাণ, পশ্চিম ক্ষত্রপা, গুপ্ত, নাগ, হরিকেল এবং মৈত্রক রাজবংশ ও ভারতীয় উপমহাদেশের বেশকিছু প্রাচীন রাজবংশের মুদ্রাসহ চৌহান, চালুক্য, গাধিয়া, প্রতিহার, মাদুরা, কাংরা প্রভৃতি রাজবংশেরও বেশকিছু মুদ্রা। রয়েছে ইতিহাসখ্যাত বীর মহীশুরের টিপু সুলতান, সম্রাট আকবর, শাহজাহান, আওরঙ্গজেবসহ ছয় জন মুঘল সম্রাটের সময় প্রচলিত মুদ্রা ও মুহাম্মদ বিন তুগলক, আলাউদ্দিন খিলজিসহ কয়েকজন দিল্লি সুলতানের মুদ্রাও। এ ছাড়াও পর্তুগ্রিজ ইন্ডিয়া, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ব্রিটিশ ভারতীয় বিভিন্ন সালের বেশকিছু মুদ্রা; ট্রাভানকোর, বারোদা, মেওয়ার, হায়দ্রাবাদ, টঙ্ক, কুচ, শিবগঙ্গা, প্রতাপগড়সহ সমসাময়িক কয়েকটি প্রিন্সলি স্টেটের মুদ্রা জমা করেছেন তার সংগ্রহশালায়। 

মুদ্রার পাশাপাশি ওয়ালিউল্লাহ সংগ্রহ করেন ডাকটিকেটও। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫টি দেশের ১৫শ’ ডাকটিকেট সংগ্রহ করেছেন তিনি। সুইজারল্যান্ড প্রবাসী বরকত আল রহমান নামের এক ব্যক্তির সাথে সংগ্রাহক হিসেবে পরিচয় ঘটে ওয়ালির। ভালোবেসে ওয়ালিকে তিনি ছোট ভাই বলে ডাকেন। তিনি একাই ওয়ালিকে ৪৫টি দেশের এক হাজার ডাকটিকেট উপহার হিসেবে দিয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যে ৬শ' এর মত ডাকটিকেট সংগ্রহ করে দেশে পাঠাবেন বলে ওয়ালিকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

কখনও টাকা জমিয়ে বা কখনও অন্যদের সঙ্গে বিনিময়ের মাধ্যমেই মূলত মুদ্রা সংগ্রহ করেন ওয়ালিউল্লাহ। ভারত, নেপাল, ভূটান, অস্ট্রেলিয়ান ও পাকিস্তানসহ অনেক দেশের বন্ধুদের সঙ্গে মুদ্রা বিনিময় করেছেন। জানান, অবচেতন ভাবেই সংগ্রহের রাজ্যে পদার্পণ। এই মুদ্রার পেছনে ছুটতে ছুটতে আলাদা একটা জগতের দেখা পান। ঢাকা ও কলকাতার নিলাম ডাক, তাঁতি বাজারের স্বর্ণের দোকান অন্যতম। এসব জায়গা থেকে অনেক মুদ্রা সংগ্রহ করেছেন। তার বাবাও হজ করতে গিয়ে সৌদি মুদ্রা এনে দিয়েছেন। 

এ ছাড়া পরিচিত ও আত্মীয়স্বজন অনেকের কাছ থেকেই উপহার হিসেবে মুদ্রা পেয়েছেন। এখন তার জন্মদিনে কাছের মানুষরা অন্য কিছু নয় বরং মুদ্রা উপহার দিতেই বেশি পছন্দ করেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে ওয়ালিউল্লাহ জানান, নিজ জেলা মাগুরাতে একটা সংগ্রহশালা করার ইচ্ছা আছে। যেটা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মুদ্রাগুলো দেখে আমাদের নতুন প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে। অনেকেই এই শিক্ষামূলক শখের প্রতি আকর্ষিত ও অনুপ্রাণিত হবে। এ ছাড়া নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় করে প্রদর্শনীর ইচ্ছা পোষণ করেন এই মুদ্রা প্রেমিক।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo