• শিক্ষা

কুবির প্রকৌশল দপ্তরের কাজ বাস্তবায়নের পর অর্থ ব্যায়ের হিসাব গায়েব

  • শিক্ষা
  • ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৪:৪৬:০১

ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্কঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) চলতি বছরের শুরুতে সমাবর্তন উপলক্ষে অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যবর্ধনে আলোকসজ্জার জন্য ১৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। যেটি পরিকল্পনার অভাবে প্রথমে ক্যম্পাসের মূল ফটক থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত পার্কের মত রঙবেরঙের লাইট স্থাপনের কথা থাকলেও পরে তা পরিবর্তন করে সাদা রঙের দেওয়া হয়।

তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ১ মাসের মাথায় অধিকাংশ এবং ৬ মাসের মাথায় প্রায় সবগুলো বাল্ব বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। আবার কিছু বাল্ব বহিরাগতদের দ্বারা চুরি হয় এবং লাইটের শেডগুলো বেশিরভাগ বেঁকে যাওয়া, ভেঙ্গে যাওয়াসহ বর্তমানে পুরো প্রকল্পটির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু কত টাকা ব্যায় করা হয়েছে প্রকল্পজুড়ে তার কোন হিসাব নেই প্রকৌশল দপ্তরে।

যদিও শীক্ষার্থীদের দাবি চরম দুর্নীতি, পরিকল্পনাহীনতা, অব্যবস্থাপনা এবং দায়ীত্বহীনতার কারনেই সরকারি কোষাগারের অর্থ ব্যায় করে নামকাওয়াস্তে প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও তা টেকশই উন্নয়নের আওতায় আসেনি। যার ফলে স্বল্প সময়ে প্রকল্পের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার অবস্থায় রয়েছে। তবে তাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এমন একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প আটকে আছে বছরের পর বছর। কিন্তু এসব প্রকল্পের কোনো কুল কিনারা হচ্ছে না।

এ সকল অভিযোগের ভিত্তিতে পুরো প্রকল্পে কত টাকা ব্যায় হয়েছে এবং কোন খাতে অর্থের পরিমাণ কত সে বিষয়ে প্রকৌশল দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে কোনো হিসাব দেখাতে পারেন নি বিশ্ববিদ্যালয়টির নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম. শহিদুল হাসান। এ বিষয়ে শহিদুল হাসান প্রথমে হিসাবের কপি তার কাছে থাকে না এই কপি পরিকল্পনা দপ্তরে থাকে বলে অভিযোগ করেন।

পরে পরিকল্পনা দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে সহকারী পরিচালক ড. মোঃ শাহাবুদ্দিন জানান অর্থ ব্যায়ের হিসাবটি প্রকৌশল দপ্তরেই রয়েছে। কিন্তু তারা কেন দেখাতে চাচ্ছে না সে বিষয়ে আমার জানা নেই। সর্বশেষ প্রকৌশল দপ্তরে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবের কোন কপি দেখাতে ব্যার্থ হন।

এমনকি বর্তমানে কতটি বাল্ব সচল এবং মোট কতটি চুরি হয়েছে সে বিষয়েও সঠিক কোন তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে।

জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নকালে প্রশাসনের চরম দায়িত্বহীনতা এবং পরিকল্পনার অভাবে শিক্ষার্থীদের সমালোচনার মুখে পড়ে। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মত স্থানে পার্কের আদলে লাইটিং করে সৌন্দর্য হরণ না করা হোক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কমিটি কিংবা প্রশাসন কেউই তা কানে না নিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে কাজ বাস্তবায়ন করেন।

এ দিকে বাল্ব বিকল হয়ে পড়া এবং শেডগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনায় পুরো প্রকল্পটি দুর্নীতিতে জর্জরিত কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেছেন, প্রকল্পটির সবগুলো বিষয়ে তদন্ত করে দেখা উচিত। কারন এত অর্থ খরচ করে যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা পরের মাসেই কি করে অস্তিত্বের সংকটে পড়ে সেটি ভিন্ন ইঙ্গিত বহন করে।

আলোকসজ্জার বিষয়ে অভিযোগ করে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম্স বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থী ইমরান মাহমুদ জীবন জানান, এ প্রকল্পটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লক্ষ করেছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট যারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে প্রথম থেকেই তাদের কাজের চরম অবহেলা আর উদাসীনতা চরম ক্ষোভ জাগায় শিক্ষার্থীদের মনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মত স্থানে পার্কের মত এমন লাইটিং হতে পারে এটা খুবই দৃষ্টিকটু। একই সঙ্গে নিম্নমানের পণ্য ব্যাবহারের ফলে এক মাসের মাথাতেই অধিকাংশ লাইট নষ্ট হতে দেখি।

তিনি বলেছেন, এসব নিয়ে আমরা অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হয়নি। আর এখনতো পুরো প্রকল্পই বিলীন। কিন্তু এত টাকা খরচ করে কি করেছে প্রশাসন তা অবশ্যই তদন্তের দাবিদার।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের পরিকল্পনায় ত্রুটি ছিল স্বীকার করে জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় আমাদের পরিকল্পনার কিছু ত্রুটি ছিল। যে কারনে মূলত এমনটি হয়েছে। আর লাইট চুরির বিষয়টা হতে পারে ভিতরে কিংবা বাহিরের কেউ করছে। কিন্তু যদি নিম্নমানের সামগ্রি ব্যাবহার করে থাকে তাহলে আমরা সেটা দেখে ঠিকাদারি যে প্রতিষ্ঠান ছিল তাদের জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করব।

এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের পরামর্শকদাতা সোহরাব উদ্দিন বলেন, আমি শুধুমাত্র মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ, গাছ লাগানো, এবং ফুলের বাগানের কাজগুলোর তদারকি করেছিলাম। সৌন্দর্যবর্ধন কমিটিতে থাকলেও প্রকৌশল দপ্তর লাইটিংয়ের বিষয়ে আমাকে কিছু জানায় নি। বরং এ বিষয়টি সবার মত আমিও কিছুই জানি না। কাজেই কতটাকা খরচ হয়েছে, নষ্ট কেন হল বা নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যাহার করা হয়েছে কিনা সে বিষয়টি প্রকৌশল দপ্তরই বলতে পারবে। এবং এটার জন্য সম্পূর্ণভাবে তারাই দায়ী।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo