
নিউজ ডেস্কঃ উৎসবমুখর পরিবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ নির্বাচন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এ ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সকাল থেকে মোতায়েন রয়েছে ১৭০০ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।
চাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬ জন। তাদের মধ্যে ১১ হাজার ৩২৯ জন ছাত্রী। ভিপি-জিএসসহ কেন্দ্রীয় সংসদে পদ ২৬টি। ১৫ হল ও হোস্টেল সংসদে পদসংখ্যা ১৪টি করে। যার বিপরীতে প্রার্থী ৯০৮ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ১৩টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র মিলে প্রার্থী ৪১৫ জন। ৫টি অনুষদ ভবনের ১৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে ৬০টি কক্ষে।
ক্যাম্পাসের আইটি ভবন, নতুন কলা ভবন, বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান ও বাণিজ্য (বিবিএ) অনুষদ ভবনে ভোটগ্রহণ চলছে। এছাড়া চাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ভোটকেন্দ্র রয়েছে। পাঁচটি ভবনের ৬০টি কক্ষে প্রায় ৭০০টি বুথ রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ওএমআর ব্যালট শিটে শিক্ষার্থীরা ভোট দিচ্ছেন। চাকসুতে চার পৃষ্ঠার এবং হল ও হোস্টেল সংসদে এক পৃষ্ঠার ব্যালটে ভোট নেয়া হচ্ছে।
কোন কেন্দ্রে কারা ভোট দিচ্ছেন
আইটি ভবন: সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থীরা। নতুন কলা ভবন: শাহজালাল, এফ রহমান ও আলাওল হলের শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞান অনুষদ ভবন: শাহ আমানত, মাস্টার দা সূর্য সেন হল। সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ ভবন: নওয়াব ফয়জুন্নেসা, শামসুন নাহার, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং অতীশ দীপঙ্কর হলের শিক্ষার্থীরা। বাণিজ্য অনুষদ (বিবিএ) ভবন: প্রীতিলতা, বিজয় ২৪, শহীদ ফরহাদ হোসেন হল ও শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা।
কোন পদে কত প্রার্থী
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৬টি পদের বিপরীতে নির্বাচন করছেন ৪১৫ জন। আর ১৫টি হল ও একটি হোস্টেল সংসদের বিভিন্ন পদে ৪৯৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চাকসুর ভিপি পদে ২৪ জন, জিএস পদে ২২ এবং এজিএস পদে ২১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রধান তিনটি পদ ছাড়া অন্যান্য পদের মধ্যে খেলাধুলা ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পদে ১২ জন, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া বিষয়ক সাম্পাদক পদে ১৪, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৭, সহ সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৫, দপ্তর সম্পাদক পদে ১৭, সহ দপ্তর সম্পাদক পদে ১৪, ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ দুইটি পদের একটি ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদে ১৩, সহ ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদে ১০, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১১, গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পাদক পদে ১২, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ২০, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৫, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৭ জন করে, ক্যারিয়ার ডেভলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৬, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ-যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে ১৪ জন, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে ৯, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ২০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। পাঁচটি নির্বাহী সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন ৮৫ জন।
হল সংসদ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি ছাত্র, পাঁচটি ছাত্রী এবং একটি হোস্টেল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ৪৯৩ জন। এরমধ্যে সোহরাওয়ার্দী হলে সর্বোচ্চ ৫৩ জন প্রার্থী হয়েছেন। এ হল সংসদের ১১টি সম্পাদকীয় পদের বিপরীতে ৪৪ জন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এর মধ্যে ভিপি পদে চারজন, জিএস এবং এজিএস পদে পাঁচজন করে লড়বেন। এছাড়া তিনটি নির্বাহী সদস্য পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৯ জন। অন্যান্য ছাত্র হলগুলোর মধ্যে স্যার এফ রহমান হলে ৩৮ জন, আলাওল হলে ৩২ জন, অতীশ দীপঙ্কর হলে ৩৭ জন, শাহ আমানত হলে ৪৩ জন, শহীদ ফরহাদ হোসেন হলে ৪৫ জন, মাস্টার দা সূর্য সেন হলে ৩৭ জন, শহীদ আবদুর রব হলে ৩১ জন এবং শাহজালাল হলে ৩৪ জন প্রার্থী হয়েছেন।
ছাত্রী হলগুলোর মধ্যে অনেক পদে একক প্রার্থী রয়েছেন। নওয়াব ফয়েজুন্নেসা হলে ১৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী আছেন ১৭ জন। ১৪টি পদের মধ্যে ভিপিসহ ১১টি পদে একক প্রার্থী। আর জিএস, এজিএস এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পদে দুই জন করে প্রার্থী আছেন। এ হলে আদিবাসী এবং বাঙালি বড়ুয়া সম্প্রদায়ের ছাত্রীরা মিলে ‘হৃদ্যতার বন্ধন’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছেন।
শামসুন নাহার হলে ১৪ পদের বিপরীতে প্রার্থী আছেন ২২ জন। তার মধ্যে নির্বাহী সদস্যের তিনটি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন তিন জন। যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক, রিডিং রুম, ডাইনিং ও হল লাইব্রেরী সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক পদে প্রার্থী একজন করে। আর খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে কোনো প্রার্থী নেই। এ হলে ভিপি, জিএস, সাহিত্য সংস্কৃতি এবং প্রকাশনা সম্পাদক পদে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছেন।
ছাত্রীদের হলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩০ জন প্রার্থী হয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলে। সেখানেও সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক পদে প্রার্থী কেবল একজন। এছাড়া বিজয়-২৪ হলে ২৮ জন, প্রীতিলতা হলে ২৬ জন করে প্রার্থী হয়েছেন।
আরও পড়ুন: তিন যুগ পর চাকসু নির্বাচন, ভোটগ্রহণ বুধবার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে আটটি সম্পাদকীয় পদ এবং দুটি নির্বাহী সদস্য পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ২০ জন। তবে নির্বাহী সদস্যের দুটি পদের বিপরীতে শুধু দুইজন প্রার্থী।
ফিরে দেখা ৬ বারের চাকসু নির্বাচন
১৯৭০ সালের প্রথম চাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং জিএস হন ছাত্রলীগের আবদুর রব। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতে তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন চাকসু জিএস আবদুর রব। ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় চাকসু নির্বাচন। এ নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের শামসুজ্জামান হীরা ভিপি এবং জাসদ ছাত্রলীগের মাহমুদুর রহমান মান্না জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালের তৃতীয় চাকসু নির্বাচনে জাসদ ছাত্রলীগের এস এম ফজলুল হক ভিপি ও গোলাম জিলানী চৌধুরী জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের চতুর্থ চাকসু নির্বাচনে ভিপি হন জাসদ ছাত্রলীগের মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী এবং জিএস হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের জমির চৌধুরী। ১৯৮১ সালে চাকসুর পঞ্চম নির্বাচনে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সে সময়ের নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার। ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ চাকসু নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের প্রার্থী জাতীয় ছাত্রলীগের নাজিম উদ্দিন ভিপি নির্বাচিত হন। আর জিএস নির্বাচিত হন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আজিম উদ্দিন আহমদ।
মন্তব্য (০)