• বিশেষ প্রতিবেদন

বৈশাখী মেলাকে ঘিরে ব্যস্ত জাম গ্রামের কাগজের রঙ্গিন ফুল তৈরির কারিগররা

  • বিশেষ প্রতিবেদন

ছবিঃ সিএনআই

নওগাঁ প্রতিনিধি: আসছে বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বৈশাখ মানেই বিভিন্ন স্থানে বসা গ্রামীণ মেলা। লোকজ ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে এই বৈশাখী মেলা। মেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে রঙিন কাগজে তৈরি কৃত্রিম বিভিন্ন ফুল। সেই আর্কষনীয় ফুলগুলো তৈরিতে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। সারা দেশের মধ্যে শুধুমাত্র নওগাঁর আত্রাই উপজেলার জামগ্রামেতেই এই ফুলগুলো তৈরি হয়ে থাকে। এই গ্রামের বাসিন্দাদের বাপ-দাদার পেশা হচ্ছে এই ফুল তৈরি। কিন্তু কালের বির্বতনে নানা কারণে অনেকেই ছাড়ছে এই পেশা।

সরেজমিনে গেলে গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে কেউ রোদে রং করা রঙিন কাগজগুলো শুকাচ্ছে আবার গাছের ছাঁয়ায় গোল হয়ে বসে নারী-পুরুষরা তৈরির করছে ফুল। এই গ্রামে টাইম, সূর্যমুখি, মানিক চান, গোলাপ, শাপলা, কলস, শিকল, বিস্কুট, ঘুর্ণি, চরকি, স্টার, জবা, মেয়েদের মাথার ব্রান্ডসহ প্রায় ৩০প্রকারের মনকাড়া রঙিন ফুল কাগজ দিয়ে তৈরি করা হয়। এই গ্রামের ৩শত সাড়ে ৩শত পরিবার এই ফুল তৈরি করে জীবন-যাপন করে আসছে। গ্রামের বাসিন্দার অধিকাংশই গরীব এবং এই অঞ্চলের জমিগুলোতে বছরে একটি ফসল হওয়ার কারণে পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে কাটাতে হয়। যার কারণে দিন দিন লাভ কমে গেলেও আজো এই ফুল তৈরির বাপ-দাদার পেশাটি ধরে রেখেছে। বিশেষ করে নারীরা সংসারের কাজের ফাঁকে এই ফুলগুলো তৈরি করে আর পুরুষরা বিভিন্ন মেলাসহ সারা বছরই দেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরি করে বিক্রি করে। তবে বৈশাখের মেলাতে ফুলগুলোর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুন।

কিন্তু বর্তমানে ফুল তৈরির উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভ অনেকটাই কমে গেছে। তবুও পেট চালানোর তাগিদে ধরে রেখেছে বাপ-দাদার এই পেশাটি। আবার অনেকেই এই ব্যবসা ধরে রাখতে ঋণগ্রস্থ হয়ে গ্রাম ছাড়া হয়েছে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে যদি এই কারিগরদের বিনা সুদে ঋণ কিংবা অন্য সহযোগিতা প্রদান করা হতো তাহলে শতবছরের এই গ্রামীণ শিল্পটি আরো প্রসারিত হতো বলে মনে করছেন ফুল তৈরির কারিগররা। হারানোর পথে বাঙ্গালীর নিজস্ব বিভিন্ন গ্রামীণ লোকজ শিল্পকে বাঁচাতে উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে সহযোগিতা করার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সচেতন মহল।  

ফুল তৈরির কারিগর বাসন্তী রাণী বলেন এই অঞ্চলের জমিগুলোতে এক ফসল হয়। সেটা দিয়ে জীবন চলে না। যার কারণে ফুল তৈরি করে বিক্রি করে যে আয় হয় সেটা দিয়ে সংসারের অন্যান্য খরচ মেটাতে হয়। বর্তমানে লাভ একটু কমে গেছে। তবুও অযথা বসে না থেকে সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে অবসর সময়ে এই ফুল তৈরি করি। এতে করে যা আয় হয় সেটা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোন মতে টিকে আছি।

ফুল ব্যবসায়ী জামগ্রামের বাসিন্দা মো: আমিনুল ইসলাম বলেন আগে ফুল তৈরির উপকরণগুলোর দাম কম ছিলো তাই ফুল বিক্রি করে লাভ ভালোই হতো। কিন্তু বর্তমানে উপকরণগুলোর দাম বৃদ্ধি পেলেও ফুলের দাম তেমন একটা বৃদ্ধি পায়নি। তাই লাভের পরিমাণ অনেকটাই কমে গেছে। তবুও জীবিকার তাগিদে আমরা বাপ-দাদার এই পেশাটি ধরে রেখেছি। আবার যুগের আধুনিকতার কারণেও ব্যবসার যৌবন অনেকটাই হারিয়ে গেছে। এই ব্যবসা করতে গিয়ে অনেকেই উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে না পেরে গ্রামছাড়া হয়েছে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে যদি বিনা সুদে ঋণ পাওয়া যেতো তাহলে শতবছরের এই ঐতিহ্যটি আগামীতেও টিকে রাখা সম্ভব হতো।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীর লোকজ সংস্কৃতির একটি প্রধান অংশ। পহেলা বৈশাখ মানেই গ্রামের হাটতলা-বটতলায় বসা গ্রামীণ মেলা। আর গ্রামীণ মেলা মানেই হরেক রকমের শিল্পের সমাহার। সেই সমাহারের প্রধান উপকরণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কাগজের তৈরি বিভিন্ন রকমের কৃত্রিম রঙিন ফুল। ফেরিওয়ালার হাতে থাকা লাঠির মাথায় চমৎকার করে সাজানো কাগজের তৈরি বিভিন্ন রঙিন ফুল যা সহজেই শিশুদের মন কাড়ে। শিশু থেকে শুরু করে বড়দের হাতে ও মেয়েদের মাথায় এই সব রঙিন ফুল না থাকলে যেন বৈশাখী মেলা পরিপূর্ণতা পায় না। এছাড়া ঘরের সৌন্দর্য বর্ধনেও এই কৃত্রিম রঙিন কাগজের ফুলের কোন জুড়ি নেই। আর ঐতিহ্যবাহী এই রঙিন ফুলগুলো তৈরি হয় নওগাঁর জামগ্রামে।

তিনি আরো বলেন এই শিল্পটি অনেক পুরনো একটি গ্রামীণ শিল্প। বর্তমানে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে অনেকটাই হিমশিম খাচ্ছেন। এই শিল্প ও শিল্পের কারিগরদের বাঁচাতে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করাসহ সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে দ্রুতই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। শুধু সরকারের পক্ষ থেকেই নয় বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমেও যদি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে যতদিন পহেলা বৈশাখ আছে ততদিন এই শিল্পটি বেঁচে থাকতো। এই শিল্পকে আরো বেশি প্রসারিত করতে জেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারি ভাবে হওয়া মেলায় স্টল প্রদানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করার কথা জানান জেলার এই উর্দ্ধতন কর্মকর্তা।

মন্তব্য (০)





image

ঈশ্বরগঞ্জে ঘর হারানোর শঙ্কায় প্রতিবন্ধী নজরুল

ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধি: জীবন বেশিরভাগ সময় কেটেছে পিঠা বিক্রি করে। সারাজীবনে...

image

নাগেশ্বরীতে জমির খাজনা আদায়ে হালখাতা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে জমির খাজনা (কর) আদায়ে হালখা...

image

পহেলা বৈশাখে লোকজ শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটলো নতুন প...

নওগাঁ প্রতিনিধি: পহেলা বৈশাখ মানেই বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব। বৈশাখ বলতে আমরা গ্...

image

পাবনায় হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা শুরু

পাবনা প্রতিনিধিঃ পাবনার চাটমোহরের পৌর শহরের অদূরের গ্রামে বোঁথড়। এ গ্রামে প্...

image

পঞ্চগড় সীমান্ত থেকে বিলুপ্ত প্রজাতির নীলগাই উদ্ধার

পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড় সদর উপজেলার সীমান্ত এলাকা থেকে বিলুপ্ত প্রজাতির এক...

  • company_logo