• স্বাস্থ্য

জরায়ুমুখে ক্যান্সারে ৫২১৪ নারীর মৃত্যু প্রতিবছর

  • স্বাস্থ্য
  • ১০ জানুয়ারী, ২০২১ ১২:৩৭:৫৮

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ প্রতিবছর ৫ হাজার ২১৪ জন নারী জরায়ুমুখের ক্যান্সারে মৃত্যু বরণ করছেন। চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য উঠে এসেছে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার- আইএআরসি’র এক প্রতিবেদনে। যেখানে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত নারী রোগীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের পরেই জরায়ুমুখের ক্যান্সারের অবস্থান। প্রতি বছর এই ক্যান্সারে নতুন করে আক্রান্ত হন ৮ হাজার ৬৮ জন নারী, আর তাতে মৃত্যুবরণ করেন ৫ হাজার ২১৪ জন নারী। মোট ক্যান্সার আক্রান্ত নারীর ১২ শতাংশই ভুগছেন জরায়ুমুখের ক্যান্সারে।

শনিবার (৯ জানুয়ারি) দেশে ৫ম বারের মতো পালিত জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় দেয়া হয় এসব তথ্য।

প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় শনিবার ‘মার্চ ফর মাদার’ নামের মোর্চার উদ্যোগে এই দিবসটি পালিত হয়। এ ছাড়া পুরো জানুয়ারি মাস বিশ্বে জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে উদযাপিত হয়।

এ উপলক্ষে মাসব্যাপি কর্মসূচী নেয়া হয়েছে যার উদ্বোধন করা হয়েছে ঐ ভার্চুয়াল আলোচনার মাধ্যমে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘এইচপিভি নামের দুষ্ট ভাইরাসকে জানুন’। দেশের খ্যাতনামা স্ত্রীরোগ, ক্যান্সার, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই আলোচনায় অংশ নেন।

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক টি এ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জননীর জন্য পদযাত্রার প্রধান সমন্বয়কারী ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে এইচপিভি ভাইরাস ও এর সাথে জরায়ুমুখসহ অন্যান্য ক্যান্সার ও নন-ক্যান্সার স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউ এর গাইনি অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা, জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের গাইনি অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রোকেয়া আনোয়ার ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি অনকোলজি ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক ডা। কাশেফা খাতুন।

আলোচনায় বক্তারা দুটি বিষয়ে জোর দেন ও এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ কামনা করেন:

প্রথমত: প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য জরুরি হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)  ভ্যাকসিন দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানিকারক একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে, অন্যটির আমদানি বেশকিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে । একাধিক কোম্পানির মাধ্যমে এই ভ্যাকসিন সহজলভ্য করার ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ কামনা করা হয়। সরকার আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা (GAVI) এর সহযোগিতায় গাজীপুর জেলার ৩৩০০০ কিশোরীকে বিনামূল্যে এই ভ্যাকসিন প্রদান করেছে। এই পাইলট প্রজেক্টটির মূল্যায়নের পর, পর্যায়ক্রমে সারাদেশে সম্প্রসারিত করার কথা, এ বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি বলেও জানানো হয় আলোচনায়।

দ্বিতীয়: ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচী যা প্রায় বিভিন্ন পর্যায়ের ৪০০ সরকারি হাসপাতলের ভায়া সেন্টারে চালু আছে, তা অসংগঠিত, হাসপাতালকেন্দ্রিক। একে  সমাজভিত্তিক সংগঠিত রূপ না দিলে ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের এর আওতায় আনা অসম্ভব। এর বাইরে সরকারি- বেসরকারি কিছু উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে, এটা আশার কথা। তবে সঠিক পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, মূল্যায়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে একটি জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার আওতায় জাতীয় ক্যান্সার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম এখন সময়ের দাবী, যা হবে সমাজভিত্তিক, সংগঠিত ও সম্পূর্ণ। 

সভায় বক্তারা মত প্রকাশ করেন, কেবল সরকারের দায়িত্ব নয়, চিকিৎসকসমাজ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অন্যান্য অংশীজন, সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে সমন্বিত প্রচেষ্টায় ক্যান্সার পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি সম্ভব।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ওজিএসবি’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রওশন আরা বেগম, ও বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী, কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবেরা খাতুন, ওআইডাব্লিউসিএ’র জাতীয় সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনিষা সরকার, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শারমিন ইয়াসমিন, ক্যান্সার প্রতিরোধ ও গবেষণা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মোসাররত সৌরভ, নারীপক্ষের প্রধান শিরিন হক, নাগরিক টিভির প্রধান প্রতিবেদক শাহনাজ শারমিন, রোটারি ক্লাব অব ঢাকা গোল্ডেন সিটির সভাপতি মাসুদ করিম ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটির তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রধান বজলুর রহমান।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo