• বিশেষ প্রতিবেদন

তিস্তা পাড়ে ঝুপড়ি ঘরে বৃদ্ধা জামিরনের খোঁজ রাখেন না কেউ

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০৪ জানুয়ারী, ২০২১ ১৪:৫০:২৫

ছবিঃ সিএনআই

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: অন্যর জমিতে বাঁশের খুঁটির ওপর দাঁড় করানো কয়েকটি টিন দিয়ে ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘর। পুরাতন কাঁথা  দিয়ে মোড়ানো নড়বড়ে এ ঘরে একযুগ ধরে বাস করছেন তিস্তা পাড়ের বৃদ্ধা জামিরন বেওয়া (৭০)। এই কনকনে শীতে জরাজীর্ন অবস্থা তার। ঘরের দুই হাত পিছনে বয়ে চলছে তিস্তা নদী। এ বৃদ্ধা ১২ বছর পুর্বে স্বামীকে হারিয়ে বর্তমানে তিস্তা পাড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

তার বাড়ি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিংঙ্গীমারী ইউনিয়নের ধু্‌বনী গ্রামে। তার স্বামী মৃত আব্দুর রশিদ। দুই ছেলে দুই মেয়ে। মেয়ে দুইটি বিয়ে দেন। দুই ছেলে পাশা পাশি থাকলেও খবর রাখেন না তারা। দুই ছেলে শাজাহান ও শাহদত দুই জনেই দিনমজুর।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই কনকনে ঠান্ডায় একটি ছোট ঝুপড়ি ঘর বাস করেন তিনি। বর্তমানে বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন তিনি। লাঠি ভর করে হাঁটতে হচ্ছে তাকে। ঝুপড়ি ঘরের দুই হাত পিছন দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। একা এই বৃদ্ধা নিজেই রান্না করেই খান। কয়েক দিন আগে পড়ে গিয়ে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েলে রান্না করতে না পেরে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

জানা গেছে,জামিরন বেওয়ার সোনার সংসারে পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরু। চাষের জমি ছিল প্রায় ১৫ বিঘা ছিল। ভালই চলছিল সংসার। কিন্তু রাক্ষুসী তিস্তা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাইনি। একে একে তিস্তা নদী ঘর ভাঙ্গছে দশ বার। সব হারিয়ে নি:শ্ব জামিরন বেওয়ার সংসার। তিস্তা নদী সব কেড়ে নিয়ে এখন অন্যের জমিতে একটি ঝুপড়ি ঘর করে তিস্তার পাড়ে বাসকরছেন। এই বয়সে কাজ করতে না পেরে মানুষের দাঁড়ে দাঁড়ে ঘুর যে টুকু পায় তা দিয়ে দিন কাটান বৃদ্ধা জমিরন।

জামিরন বেওয়ার বলেন, কুয়াশা ও ঠান্ডায় অনেক কষ্টে থাকি। আমার ভাত পানির কষ্ট । এই নদীর পাড়ে দু:খ কষ্টে করে পড়ে আছি। আমার খুবই কষ্ট বাহে। রান্না করতে না পেরে অনেক সময় না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। মানুষের জমিতে পরে থাকা ধান সংগ্রহ করে তা বিক্রিয় করে সেই টাকা দিয়ে কোনমতেই চলি। ধান না থাকলে মানুষের কাজে হাত পেতে খাই। ছেলেরা দেখেন না খারাপ ব্যবহার করেন তাই সেখানে যাই না।

প্রতিবেশী জামিনুর ইসলাম বলেন, ওই বৃদ্ধার খুবই কষ্ট। ছেলে থাকেও তার মাকে দেখে না। সে আজ ১২ বছর ধরে অন্যর জমিতে এই টিনের ছাপড়া ঘরে থাকেন। অনেক বয়স হয়েছে তার লাঠির সাহায্যে চলাচল করেন তিনি। নিজেই রান্না করে খান। অনেক সময় না খেয়ে দিন পার করন। আমরা প্রতিবেশী হিসেবে যে টুকু সাহায্য করা প্রয়োজন তা করি। সরকার থেকে যদি তাকে একটি ঘর করে দিত তাহলে সে অনেক উপকৃত হত।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলার সিংঙ্গীমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু বলেন, ওই বৃদ্ধাকে গুচ্ছ গ্রামে ঘর করে দিতে চেয়েছি কিন্তু তিনি সেখানে থাকবেন না। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সকল প্রকার সাহায্য পাচ্চেন। আমি নিজেও নদীর পাড় থেকে ৪ বছর ধরে ওই বৃদ্ধাকে সরানোর চেষ্টা করেও পাচ্ছিনা।  

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo