• সমগ্র বাংলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হত্যা মামলা তুলে নিতে আসামির হুমকি, বাদীসহ চার পরিবার বাড়ি ছাড়া

  • সমগ্র বাংলা
  • ২৫ নভেম্বর, ২০২০ ১৮:২৫:১৩

ছবিঃ সিএনআই

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে হাসান জাবেদঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার সাদেকপুর গ্রামে বখাটে মো. তোফাজ্জল হকের পরকীয়ায় বলি হওয়া স্ত্রী নাছরিন আক্তারকে হত্যার পর শ্যালিকাকে অপহরণের দায়ে প্রায় ৬ মাস হাজতবাসের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়ীতে ফিরেই তোফাজ্জলসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী ও সাঙ্গপাঙ্গরা। প্রতিনিয়ত বাদীসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা মামলা তুলে নিতে বাদী ও সাক্ষীদের বাড়িতে হামলা চালায়

মামলা তুলে নিতে আসামী পক্ষের হত্যার হুমকিতে প্রাণ ভয়ে বাদী ও সাক্ষীদের ৪ টি পরিবার বাড়ি ছাড়া। হত্যাকারী আসামি তোফাজ্জলের সন্ত্রাসী বাহিনী প্রভাবশালী হওয়ায় আতংকে দিন কাটছে বাদীর পরিবারা। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বাদী ইব্রাহিম মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় তোফাজ্জলের বিরুদ্ধে নিরাপত্তায় চেয়ে জিডি করেন।
 

সরেজমিনে অনুসুন্ধান করতে গিয়ে মামলার এযাহার সূত্রে জানা যায়ঃ
২০০৯ সালের ১০ই জানুয়ারি সাদেকপুর ইউনিয়নের আবদুল আউয়ালের ছেলে তোফাজ্জলের সঙ্গে ৩ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী রাজঘর গ্রামের ইব্রাহিম মিয়ার মেয়ে নাছরিনের। বিয়ের পরই থেকেই বাবার বাড়ি থেকে ৫ লাখ টাকা এনে দিতে স্ত্রী নাছরিন আক্তারকে চাপ দিতে থাকে। এই টাকার জন্য নাছরিনকে তলপেটে লাথি, শরীরে কিল ঘুষি মেরে এবং কাঠের রোল দিয়ে মাথায় আঘাত করে, গলায় উড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন স্বামী তোফাজ্জল।

স্ত্রীর মৃত্যুর পর ২ সপ্তাহ না পেরুতেই তোফাজ্জল নাছরিনের ছোটবোন আশুগঞ্জ রৌশন আর জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মোছাম্মৎ আমরিন আক্তারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তোফাজ্জল হক।

এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে নাছরিন আক্তারকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন তার পিতা হাজী মো. ইব্রাহিম মিয়া। এতে নাছরিনের স্বামী মো. তোফাজ্জল হক (৩৫) সহ ৭ জনকে আসামি করা হয়।

পাশাপাশি আরেকটি অপহরণের মামলা হয়। ২০১৭ সালের ৩০শে নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মো. তোফাজ্জলকে আসামি করে অপহরণের মামলা করেন আমরিনের মা মোছাম্মৎ শাহেনা বেগম। তিনি অভিযোগ করেন ঘটনার পর থেকেই তার স্বামীকে (নাছরিন হত্যা মামলার বাদী ইব্রাহিম মিয়া) হত্যা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের অপহরণ করে নেয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলো তোফাজ্জল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এ নিয়ে মামলা হলে নাছরিনের স্বামী তোফাজ্জলকে গ্রেপ্তার করেন পুলিশ।

গ্রেপ্তারের প্রায় ৬ মাস হাজতবাসের পর জামিনে বের হয়ে আসামি তোফাজ্জলসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী ও সাঙ্গপাঙ্গরা। প্রতিনিয়ত বাদীসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা মামলা তুলে নিতে বাদী ও সাক্ষীদের বাড়িতে হামলা চালায়। বর্তমানে মামলা তুলে নিতে আসামী পক্ষের হত্যার হুমকিতে প্রাণ ভয়ে বাদী ও সাক্ষীদের ৪ টি পরিবার বাড়ি ছাড়ার।

এ বিষয়ে জানতে চাই মামলার বাদী মো.ইব্রাহিম মিয়া বলেন, আমার বড় মেয়েকে হত্যার করে ছোট মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায় মো. তোফাজ্জল হক। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে হত্যার মামলা করি। পাশাপাশি আমার স্ত্রী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মো. তোফাজ্জলকে আসামি করে আরেকটি অপহরণের মামলা করি । এ নিয়ে মামলা হলে তোফাজ্জলকে গ্রেপ্তার করেন পুলিশ।

গ্রেপ্তারের প্রায় ৬ মাস হাজতবাসের পর জামিনে বের হয়ে তোফাজ্জলসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী ও সাঙ্গপাঙ্গরা আমার বাড়ীর এসে মামলা তুলে নেয়ার জন্য আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে আমাকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দিতে থাকে। আমরা এখন প্রানের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

এখন মামলা তুলে নিতে আসামী পক্ষের হত্যার হুমকিতে প্রাণ ভয়ে আমাদের ৪ টি পরিবার বাড়ি ছাড়া। হত্যাকারী আসামি তোফাজ্জলের সন্ত্রাসী বাহিনী প্রভাবশালী হওয়ায় আতংকে দিন কাটাচ্ছি আমরা। এ হুমকি দেয়ায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় হত্যাকারী আসামি তোফাজ্জলের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করি।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার এএসআই মো.জালাল উদ্দিন জানান, বাদী ইব্রাহিম মিয়া বড় মেয়েকে হত্যার মামলা তুলে নিতে বাদী ও সাক্ষীদের বাড়িতে হামলা চালায়। হুমকি দেয়ায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বাদী ইব্রাহিম মিয়া একটি জিডি করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo