• সমগ্র বাংলা

স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর!

  • সমগ্র বাংলা
  • ২৮ জানুয়ারী, ২০২০ ১০:৫৯:৪৬

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ  দেশের অপার সম্ভাবনার স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা। চতুর্দেশীয় ব্যবসা- বাণিজ্যের সাথে আগামীতে চীন যুক্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বন্দরটির সাথে। ব্যবসা-বাণিজ্য আর পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা থাকার পরও এখনো নেয়া হয়নি কোন পরিবেশ সুরক্ষার কোন উদ্যোগ। বন্দরটিতে পাথর আমদানি হওয়ার কারণে সড়কের দু’পাশে উন্মুক্তভাবে শতাধিক পাথর ক্রাশিং মেশিন বসিয়ে এলসি পাথরের ব্যবসায়ীরা লোড-আনলোড, নেটিং, শোটিং ও ক্রাশিং করার কারণে ধূলোয় ধূসরে পরিণত হয়েছে। এতে করে চরম দূর্ভোগসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এখানকার খেটে খাওয়া শ্রমিকরা। সেই সাথে পর্যটন শিল্পের আলাদা গুরুত্ব থাকায় বন্দরটিতে প্রতিদিন শতশত পর্যটক যাওয়া আসা করায় তারাও ধুলোবালির কারণে চরম অস্বস্তিবোধ করছেন। বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় উন্মুক্তভাবেই করা হচ্ছে পাথর ক্রাশিং। এতে করে মেশিনের ধুলোবালি ছড়াচ্ছে চারদিকে। বিজিবি ক্যাম্প থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত যাতায়াতের একমাত্র সড়কটিতে দেশী- বিদেশী যাত্রীদের চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ধুলোবালিতে। অথচ ওপারে ভারতের ইমিগ্রেশন হতে পাথর আমদানি হয়ে আসলেও সেদেশের পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। বন্দর ঘুরে দেখা যায়, পাথর ভাঙা স্থলে দুই ধরনের দূষণ ঘটে বায়ু ও শব্দ। পাথর ভাঙার সময় উৎপন্ন ধুলা ও উচ্চ শব্দের মধ্যে দিনভর কাজ করে শ্রমিকরা। প্রতিনিয়ত শ্রমিকদের নাক ও মুখ দিয়ে শরীরের ভেতর প্রবেশ করছে এসব ধুলা। পরে এ থেকে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। চিকিৎসকরা জানান, পাথর ভাঙা শ্রমিকরা সহজে সর্দি, জ্বর, কাশি, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। যন্ত্রের শব্দে শ্রবণ ও মস্তিস্কজনিত সমস্যায় ভোগে। এমনকি মরণব্যাধি সিলিকোসিস রোগেও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। জীবিকার তাগিদে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেই দিনের পর দিন কাজ করতে হয়। সচেতন না হওয়ায় শরীরে জটিল রোগ বাসা বাঁধলেও বুঝতে পারে না তারা। পাথর শ্রমিক কদবানু, সুফিয়া, তফিরণ বেওয়া, তহমিনা খাতুনসহ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, সারাদিন পাথরের কাজ করলে খুব কষ্ট হয়। শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। পাথর সাইটে কাজ করতে হলে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জিনিসপত্র ব্যবহার করতে হয় তা আমরা জানি না। অন্য কাজের সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই পাথরের কাজ করতে হচ্ছে। কাজ না করলে খামু কি। পেটের ক্ষুধা তো ধূলোবালি পরিবেশ বুঝে না। পাথরের গুড়া উড়ার কারণে চোখ জ্বালাপোড়া করে, এমনকি চোখে কম দেখেন বলে জানান অনেকে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেড়াতে আসা পর্যটকরা। তাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, অপার সম্ভাবনার স্থলবন্দর এটি। দেশের এমন কোন বন্দর নেই যেখানে পাঁচ দেশের সাথে যুক্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বন্দরটির পরিবেশ সুরক্ষার জন্য উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। দার্জিলিং হতে ঘুরে আসা কয়েকজন এ প্রতিবেদককে জানান, ভারতের ওপারে কী পরিচ্ছন্ন রাস্তা। শতশত পাথর বোঝাই ট্রাকা যাওয়া-আসা করছে। কিন্তু তেমন ধুলোবালি নেই। অথচ এপারে আসলেই ধূলোবালির কারণে মনটা খারাপ হয়ে যায়। এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ওসি মোকছেদ আলী ও বিজিরি এক অফিসারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ধূলোবালির কারণে আমাদেরও দায়িত্ব পালন করতে কষ্ট হয়। তাহলে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে বিজিবির একজন বলেন, আপনারা সাংবাদিকরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে ভালো হয়। বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলন জানান, আমার ইউনিয়নের উদ্যোগে দিনে সড়কে কয়েকবার পানি দেয়া হচ্ছে। উন্মুক্তভাবে পাথরের কাজ চলার কারণে ধুলোবালি আটকানো যাচ্ছে না। এতে বাউন্ডারি ওয়াল করা হলে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। এদিকে চীনে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বেশ সতর্কতা প্রয়োজন বন্দরটির। এ বন্দরটির হতে চীনের দূরত্ব মাত্র ২০০ কিলোমিটার। আর ৬১ কিলোমিটার দূরে নিকটস্থ নেপাল। দার্জিলিংয়ের দূরত্ব মাত্র ৫৮ কিলোমিটার। ইতিমধ্যে নেপালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার সূত্রে, ৩২ বছরের এক নেপালি শিক্ষার্থী সম্প্রতি চীনের উহান থেকে দেশে ফিরেছেন। গলায় জ্বালাপোড়া ও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে ১৩ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হলে জানা যায় যে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। নেপালে ওই ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মেলার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দার্জিলিংয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বন্দরটিতে করোনা ভাইরাসের নজরদারি ও সতর্কতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বন্দরের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে করোনা ভাইরাস নিয়ে কোন সতর্কতা নেয়া হয়েছে কীনা এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদুল হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘দেশের সবকটি স্থলবন্দরে করোনা ভাইরাসের উপর সতর্ক ও নজরদারির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্মকতার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে যেন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণের মেডিকেল টিম বসানো হয়। বিশেষ করে নেপাল থেকে আগত কোন ব্যক্তি যেন সনাক্তকরণের বাইরে না থাকে’। এক্ষেত্রে বাংলাবান্ধায় এ ভাইরাসের উপর জনসচেতনতামূলক আয়োজন করা হচ্ছে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo