• আন্তর্জাতিক

রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার আলামত পায়নি তদন্তে, মিয়ানমার সরকার

  • আন্তর্জাতিক
  • ২১ জানুয়ারী, ২০২০ ১০:৫৯:৩৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার আলামত পায়নি মিয়ানমার সরকার গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিটি। সোমবার কমিটি জানায়, ২০১৭ সালে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানে অনেকগুলো পক্ষ জড়িত ছিল। তাদের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ কিংবা ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়ে থাকতে পারে। তার মধ্যে নিরপরাধ গ্রামবাসীকে হত্যা এবং তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এসবের জন্য রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের দায়ী করে মিয়ানমারের সরকারি কমিশন। যাকে অভ্যন্তরীণ সংঘাত আখ্যা দিয়ে বলা হয়, মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উত্তর রাখাইন থেকে উৎখাতে বা তাদের জাতিসত্তাকে মুছে ফেলার মতো কোনো কার্যক্রমের প্রমাণ পায়নি কমিশন। যদিও জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানো হয়েছে। তাদের জাতিসত্তা মুছে দিতেই মিয়ানমার পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কাঠামোবদ্ধ সেনা অভিযান চালায়। [caption id="" align="alignnone" width="730"]Image result for মিয়ানমার rohinga fire রাখাইন রাজ্যে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ[/caption] ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে নির্মম হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সোয়া সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। গণহত্যার অভিপ্রায়ে দেশটির সেনাবাহিনী ওই নৃশংসতা চালিয়েছিল বলে মনে করে জাতিসংঘ। ওই ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৮ সালে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে মিয়ানমার সরকার। এতে দুজন দেশি ও দুজন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ দেওয়া হয়। যাঁদের মধ্যে ছিলেন ফিলিপাইনের কূটনীতিক রোজারিও মানালো এবং জাতিসংঘে জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত কেনজো ওশিমা। ওই কমিশন বলছে, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে নিরাপত্তা বাহিনীসহ একাধিক পক্ষের যুক্তিসংগত কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে আছে নির্দোষ গ্রামবাসীকে হত্যা এবং তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা। এ পরিস্থিতির জন্য সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে তদন্ত কমিশন। তাদের ভাষ্য, ৩০টি পুলিশ পোস্টে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হয়। এটি একটি অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সহিংসতা। কমিশনের ভাষ্য, তদন্তকালে এমন কোনো আলামত মেলেনি, যাতে করে বলা যায় যে রাখাইনে মুসলিম কিংবা অন্য জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। [caption id="" align="alignnone" width="384"]Image result for মিয়ানমার rohinga fire মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গা[/caption] বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য অভিযান চালানো হয়েছিল—এমন যুক্তির পক্ষে পর্যাপ্ত আলামত পাওয়া যায়নি। আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজনীয় আলামতও মেলেনি। বিবৃতিতে কমিশন জানিয়েছে, এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে এটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে কি না, সে সম্পর্কে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি। মিয়ানমারের এ তদন্ত প্রতিবেদনকে হোয়াইটওয়াশ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ। তিনি বলেন, আমাদের বছরের পর বছর নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। আমাদের বহু মানুষ মারা গেছে, অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে, আমাদের শিশুদের আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এসবে যদি গণহত্যা না হয়, তবে কিসে? এর আগে রাখাইনে সেনা অভিযানকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মামলা করে গাম্বিয়া। এ বিষয়ে চলতি সপ্তাহে রায় ঘোষণা করবেন আদালত।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo