• মুক্তমত

বাল্যবিবাহ : একটি অভিশাপ ও স্বপ্নভঙ্গের উত্থান

  • মুক্তমত
  • ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৬:৪৩:২৬

আসমাউল মুত্তাকিন: বাল্যবিবাহ নামটার সঙ্গে কৈশোর কৈশোর একটা ভাব রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা গুলোর মধ্যে বাল্যবিবাহ একটি। একসময় বাল্যবিবাহ বাংলাদেশের মহামারী আকার ধারণ করেছিল। এখনো যে বাল্যবিবাহ হয় না তা নয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের জন্য এই শব্দটা বিভীষিকাময় এক অধ্যায়। বাংলাদেশে ১ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত হলো শিশুকাল। তাই ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে হলে তাকে শিশু বিবাহ বা বাল্য বিবাহ বলে। বাংলাদেশের বিয়ের আইন অনুযায়ী পুরুষদের জন্য ২১ বছর এবং নারীদের জন্য ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ উভয়ের মধ্যে যেকোনো একজনের ১৮ বছরের নিচে বিবাহ হলে তা বাল্যবিবাহ হবে। বাল্যবিবাহের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- দরিদ্রতা, সামাজিক প্রথা, ধর্মীয় এবং সামাজিক চাপ, অবিবাহিত থাকার ভয় এবং মেয়েদের উপার্জনের অক্ষম ভাবা। এই বাল্যবিবাহে ছেলেদের চেয়ে মেয়ের বেশি সমস্যা হয়। বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েদের অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ করতে হয়। এমনকি গর্ভধারণ থেকে বাচ্চা প্রসব করতেই অনেকের মৃত্যু হয়। প্রতিদিনের খবরের কাগজে চোখ বুলালে এরকম ঘটনার খবর অহরহই মিলবে। এই বাল্যবিবাহ মেয়েদের জন্য কি ক্ষতি করে তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। বুঝার সুবিধার্থে একটা ঘটনা উল্লেখ করা যায়। ঘটনাটা আমার নিজ এলাকার। গত ঈদুল আযহায় বাসায় গেলাম। বাল্যবিবাহের শিকার এক নারীর সঙ্গে কথা হলো। নাম তার রহিমা (ছদ্দনাম)। বয়স আর কত হবে। খুব বেশি হলে ষোল কিংবা সতেরো। মাত্র কয়েক বছর আগে বাবা-মা লোকচক্ষুর আড়ালে তার বাল্যবিবাহ দেয়। একটি বছর যেতে না যেতে তার স্বামী তার উপর শারীরিক মানসিক নির্যাতন শুরু করে। সন্তান নিলে সব সমাধান হবে এই ভেবে সন্তানও নিয়েছেন। তাতেও কোনো লাভ হয় নি। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তিনি স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে আসেন। পরে স্বামীকে তালাক দেন। শুনেছিলাম তিনি স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়তেন। ভালো মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবেন। কিন্তু বাল্যবিবাহের কারণে তা হয়নি। তার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। এখন বাবার বাড়িতে সন্তান নিয়ে থাকেন। বাংলাদেশ প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এরকম ঘটনার অস্তিত্ব মিলবে হরহামেশা। কিন্তু এর প্রতিকার হবে কী? বাল্যবিবাহ আইন ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ আইন ২০১৭ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে রূপান্তরিত হয়। বাল্যবিবাহ আইন, ১৯২৯ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি কোনো শিশুকে বাল্যবিবাহ করতে বা বাল্যবিবাহ করাতে বাধ্য করতে পারবে না। অবশ্যই বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের বয়স ১৮ এবং ছেলের বয়স ২১ হতে হবে। ২০১৫ সালে এই নীতিমালা সংশোধন করে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ রাখা হয়েছে এবং ১৬ বছর বয়সে পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ে দিতে পারবে। ১৯২৯ এর ১৯ ধারা মতে, কোনো পরিবার যদি ১৮ বছরের নিচে কোনো মেয়ে শিশুকে এবং ২১ বছরের নিচে কোনো ছেলে শিশুকে বিয়ে দেয় তবে ১ মাসের কারাদণ্ড এবং ১ হাজার টাকা জরিমানা হবে। বাল্যবিবাহ আইনের নতুন খসড়াতে বলা হয়েছে ছেলের বয়স ২১ বছরের কম এবং মেয়ের বয়স ১৬ বছরের কম হলে সেই বিয়ে বাল্যবিবাহ বলে গণ্য হবে এবং শাস্তিযোগ্য হবে। এ আইনে নারীদের কারাদণ্ডের কোনো বিধান রাখা হয়নি। এ ধরনের বিয়ে যেকোনো এলাকায় সংঘটিত হলে সে এলাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ভাবে এ ধরনের বিয়ে বন্ধ করবেন এবং দোষীদের আইনের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। বিয়ে বাতিলের কোনো বিষয় থাকলে তা পারিবারিক আদালত করবে। নতুন খসড়াতে আরও বলা হয়, বাল্যবিবাহ সংঘটিত করলে ১ মাস জেল এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। বরের শাস্তি কোনো ব্যক্তি কোনো শিশু মেয়েকে বিয়ে করলে তা বাল্যবিবাহ বলে গণ্য হবে এবং বরের শাস্তি হবে ২ বছর কারাদণ্ড এবং ১ লক্ষ টাকা জরিমানা। বিয়ে পরিচালনাকারীর শাস্তি বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ মতে, কোনো ব্যক্তি যদি বাল্যবিবাহ পরিচালনা করেন, সেক্ষেত্রে তাকে ২ বছর বা ৬ মাস অথবা ৩ মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। আর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। বাল্যবিবাহ পরিচালনায় অভিভাবকের শাস্তি বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ মতে, কোনো ব্যক্তি, অভিভাবক, বাবা-মা, পরিবারবর্গ যদি বাল্যবিবাহ চুক্তি করেন এবং তা বন্ধ করতে কোনো রূপ অবহেলা করেন তাহলে ২ বছর বা ৬ মাস কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। বাল্যবিবাহ একটার জাতির অভিশাপ স্বরূপ। জাতিকে উন্নত করতে হলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। নিজের এলাকায় কোনো বাল্যবিবাহ সংঘটিত হলে সরাসরি থানাতে জানান। পাশাপাশি মেয়েদের তাদেরকে এই বিষয়টি নিয়ে সচেতন করতে হবে। মেয়েদের সঠিক শিক্ষায় মাধ্যমে তার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে হবে। যাতে করে আর কোনো ফাতেমার মতো নারীদের স্বপ্ন ভঙ্গ না হয়। লেখক : শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo