• মুক্তমত

আমি দূর হতে বঙ্গবন্ধুকন্যার কর্মের প্রশংসা করছি

  • মুক্তমত
  • ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ২১:০৬:৪৮

রহমান মৃধা: বেশ হতাশ হয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রীর ওপর। এতো বেশি হতাশ হয়েছিলাম যে বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে কিভাবে বছরের পর বছর তিনি সব জেনে শুনেও দেশের এই দুর্দিনে কিছু করছেন না! গত কয়েকদিন আমার হতাশার পরিমাণ কিছুটা হলেও কমতে শুরু করেছে। জাতির পিতার কন্যার ঘুম ভেঙ্গেছে তাইতো তিনি শুরু করেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীকে। বর্তমান বিশ্বে অনেক ধরনের গণতন্ত্রের পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে যদিও গণতন্ত্রের ওপর একটি নির্দিষ্ট ডিফিনেশন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পুঁথিতে রয়েছে। পুঁথিগত ডেফিনিশন অনুযায়ী এখন কিছু হচ্ছেনা বরং যার যা খুশি তাই করছে বিশেষ করে বাংলাদেশে। স্বাধীন দেশের নাগরিক তাই যার যা খুশি তাই করছে। কাউকে খুন করতে ইচ্ছে হলে খুন করছে, ধর্ষণ করতে মন চাইলে তা করছে। ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সুবিধার্তে রাস্তার উল্টোপাশ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। এধরনের হাজারও কাজ যা গণতন্ত্রের ডেফিনিশনে নেই কিন্তু তা করা হচ্ছে। এখন এসব কি জেনেশুনে বা বুঝেশুনে করা হচ্ছে না কি অজ্ঞাত অবস্থায় করা হচ্ছে? দেশে আইনশৃঙ্খলা, পুলিশ এবং সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে। তবু অনিয়ম চলছে। ভুরি ভুরি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়াশুনো করছে। তারা সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার এবং মডার্ন যন্ত্রপাতি থাকা সত্বেও অনিয়ম চলছে। নিয়মানুযায়ী কাগজে কলমে দেশের অবকাঠামোতে সবই রয়েছে। তা সত্ত্বেও তার সবকিছু অকেজো হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। অকেজো হওয়া বা ঠিকমতো কাজ না হওয়ার পেছনে কি রহস্য সেটাই সনাক্ত করা সম্ভব হলো না এত বছরে। আবার এমন দেশও রয়েছে পৃথিবীতে যেখানে শুধু গণতন্ত্র নয় মানবতার প্যারাডাইস গড়ে উঠেছে। যেমন একটি উদাহরণ তুলে ধরি। একদিন রাস্তায় হাঁটছি। হাঁটার পথে একটি মেয়েকে দেখলাম সে এবং তার কুকুরটা হাঁটছে। হটাৎ রাস্তা ছেড়ে কুকুরটা জঙ্গলে ঢুকে গেল। মেয়েটি দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘তোমার কুকুর কোথায় গেল? বললো, জঙ্গলে ঢুকেছে মল ত্যাগ করতে মনে হয়। কথা বলতে বলতে কুকুর এসে হাজির, মেয়েটি আমার সঙ্গে কথা বলেছে আর হাঁটছে। হঠাৎ কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করে উঠলো। আমি বললাম কি ব্যাপার তোমার কুকুর এখন চিৎকার করে কেন? মেয়েটি বললো, তোমার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে ভুলে গেছি ওর মল ফেলতে, সেটাই আমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। পরে মেয়েটির সঙ্গে কুকুর গিয়ে মল ত্যাগের জায়গায় নিয়ে গেলো। মেয়েটি হাতে গ্লোভস পরে পকেট থেকে একটি ব্যাগে কুকুরের বিষ্ঠা তুলে আনলো এবং আমার সঙ্গে হাঁটতে শুরু করলো। কিছুক্ষণের মধ্যে একটি ডাস্টবিনের কাছে পৌঁছতেই সে সেটার মধ্যে বিষ্ঠা ফেলে দিল। আমি পুরো বিষয়টি দেখলাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, অনেকে বাগানে হাঁটাহাঁটি করে। তাই বাগান পরিষ্কার রাখতেই এ ব্যবস্থা। সবকিছু দেখেশুনে নিজেকে বেশ ছোট মনে হলো। মনের মধ্যে ঘৃণার জন্ম নিলো এই ভেবে হায়রে মানুষ জাতি কি করে গর্ব করি আমরা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব যেখানে একটি কুকুরের ব্যবহারের কাছে হার মেনে গেলাম! তবে হ্যাঁ স্বীকার করি বিশ্বের কোথাও গণতন্ত্রের বেস্ট প্রাকটিস রাতারাতি হয়নি, সময় লেগেছে। যে সব দেশ মোটামুটিভাবে গণতন্ত্রকে দাঁড় করাতে পেরেছে তারা কিন্তু কঠিন হতে বাধ্য হয়েছিল শুরুতেই। মুখের কথায় বা ভয় দেখিয়ে কাজ হয়নি বা হবেনা। এখন অ্যাকশনে যেতে হবে। যেমন মশা মাছি আমাদের দেশে সবসময় ছিল এখনও আছে। তারা আমাদের বিরক্ত করে সত্য কিন্তু আমাদের জীবন নাশ করেনা। কিন্তু এডিস মশা যখন জীবন নাশ করতে শুরু করলো আমরা কিন্তু তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে উঠেপড়ে লেগে গেলাম। একইভাবে আমাদের আচরণে যখন এডিস মশার মতো ভয়ংকর রূপ দেখা দিয়েছে (যেমন মানুষ হয়ে মানুষ খুন করা, ধর্ষণ করা, দুর্নীতির মধ্য দিয়ে অর্থের পাহাড় গড়ে তোলা, শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতি করা, ঘুষ নিয়ে অপরাধীদের অপরাধ করার অনুমতি দেয়া ইত্যাদি) তখন তার জন্য অবশ্যই অ্যাকশনে যেতে হবে। এডিস মশা ধ্বংস করতে আমরা যে পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করছি ঠিক একই পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে দুর্নীতিগ্রস্থ সমাজকে পরিষ্কার করতে। একই সঙ্গে বহিষ্কার করতে হবে সমাজের চিহ্নিত কালপ্রিটগুলোকে। কারণ তাদেরকে কোনোভাবেই ক্ষমা করা যাবে না। আমার ঘৃণা হচ্ছে জেনে যে সমস্ত ক্ষমতাশীল লোক বড় বড় কথা বলছে ন্যায়নীতি নিয়ে, অথচ দেখা যাচ্ছে তারাই সব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এদেরকে দেশদ্রোহীর অপরাধে আইনের সর্বোচ্য শাস্তির নিশ্চিত করা আশু প্রয়োজন এবং কেউ যেন ছাড় না পায় সে বিষয় কঠোর নজর দিতে হবে। যদি সমাজের সকল দায়িত্বশীল কর্মীর সাহায্যের হাত না আসে দেশের এই দুর্দিনে তবে সে হাত ভেঙ্গে চুরমার করতে হবে। জনগণ ক্ষমতার উৎস, সারা দেশের জনগণ একত্রিত হয়ে যদি প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দেয় তাহলে আমার বিশ্বাস তিনি পারবেন দেশের সকল কালপ্রিটদের ধ্বংস করতে। যদিও জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে এসব সহ্য করার মতো সীমা হারিয়ে ফেলেছে বহু আগে। তবুও দেশটা তো আমাদেরও। সূচাগ্রের পানির মতো সূক্ষ্ম এক কণা হলেও তো সামান্য ভালোবাসা রাষ্ট্রের প্রতি আমাদেরও আছে। রাষ্ট্রনায়কেরা অনেককিছু দেখেশুনে সহ্য করতে পারে, হজম করতে পারে, কিন্তু আমরা সবকিছু সহ্য বা হজম করতে পারি না। তাইতো সবকিছু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে আমাদের। যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদেরকে কুকুরের সঙ্গেও তুলনা করা অন্যায় হবে। যাইহোক এখন দল-বেদল বলে কথা নয়, এখন শুধু ন্যায় এবং অন্যায় নিয়ে কথা। এবারের সংগ্রাম অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার সংগ্রাম। আর দেরি করা চলবে না। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি দোহাই আপনার, কোনোভাবেই এ কাজ শেষ না করে দেশের হাল ছাড়বেন না। অতীতে জনগণকে ঠকানো হয়েছে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে, জিরো টলারেন্সের কথা বলে। অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে চুনোপুটিদের ধরাধরি করে জনগণকে হতাশ করা হয়েছে। এবারের সংগ্রাম হোক রাঘববোয়ালদের ধরার সংগ্রাম। চুনোপুটি ধরেই যেন সরকার থেমে না যায়। যতো কঠিনই হোক না কেন বাংলাদেশ থেকে রাঘববোয়ালদের চিরতরে ধ্বংস করতে হবে। আমরা আর দেখতে বা শুনতে চাই না জি কে শামীমের মত কালপ্রিটদের। সামাজিক মিড়িয়ায় এসেছে যে সে দেড় হাজার কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছে। আমরা জানতে চাই কারা সেই রাঘববোয়ালরা এবং তাদেরকেই এখন ধরতে হবে। আমরা দেশকে অরাজকতার হাত থেকে রক্ষা করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি জনগণের শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য যা করণীয় তাই করুণ প্লীজ। আমরা আছি আপনার সঙ্গে -সাহসে, ধ্যানে, জ্ঞানে, মনে এবং কর্মে। জয় বাংলা বাংলার জয় হবে হবে হবে নিশ্চয়।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo