• জাতীয়

প্রভাবমুক্ত হচ্ছে পুলিশ

  • জাতীয়
  • ০৮ আগস্ট, ২০১৯ ১১:১৪:৩৪

পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য এই প্রথমবারের মতো তৈরি হচ্ছে পদায়ন নীতিমালা। প্রক্রিয়াটি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে এগোচ্ছে চূড়ান্তকরণের কাজ। এরই মধ্যে আলোচনায় যা উঠে এসেছে তাতে এই নীতিমালা চূড়ান্ত হলে একই পদে বা একই এলাকায় বছরের পর বছর আর কোনো কর্মকর্তা থাকতে পারবেন না। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বা অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চাইলেও দীর্ঘ সময়কাল থানার ওসি বা জেলার এসপি হিসেবেও থাকতে পারবেন না কর্মকর্তারা। থানার ওসি ও জেলার এসপি পদে বেঁধে দেওয়া হবে সময়কাল এবং বয়সসীমা। এর ফলে যেসব কর্মকর্তা প্রভাবশালীদের দৌড়ে পিছিয়ে থাকতেন বা অবহেলার শিকার হতেন তারাও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন। পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পুলিশের চাকরিতে কর্মকর্তারা নিজেদের স্তর অনুসারে থানার ওসি, জেলার এসপি, রেঞ্জের ডিআইজি বা ডিএমপির মতো জায়গায় দায়িত্ব পালনের স্বপ্ন দেখতে থাকেন। সাধারণত এসব পদের জন্য কর্মকর্তাদের আকর্ষণ থাকে খুব বেশি। কিন্তু অনেক সময় ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে লিয়াজোঁ না থাকা এবং রাজনৈতিক প্রভাব না থাকাসহ নানা কারণে অনেক কর্মকর্তারই এসব স্বপ্ন পূরণ হয় না। হতাশা আর ক্ষোভ নিয়েই অনেকে চাকরি জীবন শেষ করেন। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ থানা বা জেলায় দীর্ঘদিন থাকার জন্য অনেকে আবার নানা ধরনের প্রভাব সৃষ্টির মাধ্যমে বছরের পর বছর সেই সুযোগ পেয়ে থাকেন। অনেক সময় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা বা এমপি-মন্ত্রীরা তাদের পছন্দের বা অনুগত পুলিশ কর্মকর্তাকে নিজ এলাকায় পদায়নে প্রভাব সৃষ্টি করে থাকেন। অনেকেই দক্ষতা-যোগ্যতার চেয়ে বরং বিশেষ সুবিধায় ও নানা প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন এসব জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে থাকেন। দীর্ঘদিন একই পদে একই এলাকায় ঘুরেফিরে অবস্থান করায় অনেক সময় স্বেচ্ছাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন এক শ্রেণির কর্মকর্তা। এ ছাড়াও বর্তমানে পুলিশের সব পর্যায়ে কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় পদায়ন সমস্যা আরও প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সবকিছু গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত মর্যাদাশীল পুলিশ বাহিনী গড়ার লক্ষ্যেই নতুন করে কর্মকর্তা পদায়ন নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। প্রাথমিক আলোচনায় যা জানা যাচ্ছে তাতে এ নীতিমালা চূড়ান্ত হলে পর্যায়ক্রমে প্রায় সব কর্মকর্তাই গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে বা এলাকায় দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন। এর ফলে কর্মদক্ষতা ও ভালো কাজ দেখানোরও সুযোগ পাবেন সবাই। এতে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ারও সুযোগ থাকবে না। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ, বঞ্চনা ও হতাশাও দূর হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (্এইচআর) এসএম রুহুল আমিন বলেন, প্রথমবারের মতো পুলিশ কর্মকর্তাদের পদায়নে একটি নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তবে এটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ নীতিমালায় কী থাকবে বা কী থাকবে না তা এখনই কিছু বলা যাবে না। নীতিমালা চূড়ান্ত হতে সময় লাগবে। এ বিষয়ে নানা দিক থেকে কাজ শুরু হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট অন্য একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকজন অতিরিক্ত আইজিপি ও ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পুলিশ সদর দফতর এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে। পুলিশ কর্মকর্তা পদায়ন নীতিমালার কাজটি সবেমাত্র শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে পুলিশ সদর দফতরে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এই পদায়ন নীতিমালার বিষয়ে এবং নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে মতামত চাওয়া হয়। অন্যদিকে পদায়ন নীতিমালার খবরে ব্যাপক খুশি অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তা। নতুন নীতিমালা হওয়ার খবরে ব্যাপক আশাবাদী তারা। তবে কিছু পুলিশ কর্মকর্তা মনক্ষুণ্ন, যারা একই পদে থেকে দীর্ঘদিন বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একজন সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) এক থানায় কতদিন পর্যন্ত থাকতে পারবেন, একজন ইন্সপেক্টর কত বছর ওসি হিসেবে এবং এক থানায় থাকতে পারবেন সেটির সময়কাল এবং কর্মকর্তাদের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হবে। তেমননিভাবে এএসপি, অতিরিক্ত এসপি, এসপি, অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্টভাবে পদায়ন নীতিমালা থাকবে। এসপিদের ক্ষেত্রে মেরিট অনুযায়ী ‘ফিটলিস্ট’ করা হবে। অর্থাৎ জেলায় এসপি হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের আগেই কর্মদক্ষতা, সততা, মেধা, আচরণ ও সাক্ষাৎকারসহ বিভিন্ন পর্যায়ে প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে তালিকা থাকবে। মেরিট লিস্ট অনুসারে এসপি পদায়ন করা হবে। যাতে বিনা কারণে একজন কর্মকর্তাও বিভাগীয় অবহেলা বা অবজ্ঞার শিকার না হন সে কারণেই তৈরি হচ্ছে এ পদায়ন নীতিমালা। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণসহ বেশকিছু অসঙ্গতি ও সমস্যা দূর করতে অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছেন। একটি ঐতিহ্যবাহী পেশাদার বাহিনী হিসেবে পুলিশকে একটি মর্যাদার আসনে নিতেও কাজ করছেন বর্তমান আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন বেশকিছু কর্মকর্তা। বিশেষত, গত মাসে সারা দেশে ঘোষণা দিয়ে এবং কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ঘুষ-দুর্নীতিবিহীন স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কনস্টেবল নিয়োগে যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল তা মাথায় রেখেই কর্মকর্তাদের পদায়নে এ নীতিমালা হচ্ছে। এটি চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশ পুলিশ আরেকটি নজির স্থাপন করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা দীর্ঘদিন একই পদে একই এলাকায় থাকার কারণে এক শ্রেণির কর্মকর্তা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠায় বিভিন্ন অপরাধেও জড়িয়ে যান অনেকে। পুলিশ বাহিনীর মধ্যে যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা ধরে রাখতেই এ নীতিমালা হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo