আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে প্রাণঘাতী অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এতে কমপক্ষে আরও ৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ডে পৃথক ঘটনায় প্রাণ হারান তারা।বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী বুধবার অধিকৃত পশ্চিম তীরে পৃথক ঘটনায় কমপক্ষে ছয় ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এছাড়া ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের সেনারা ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ডে বর্ধিত অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যে পশ্চিম তীরের তুবাস শহরে বিমান হামলায় পাঁচজন লোক নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা বিস্ফোরক দিয়ে সজ্জিত ছিল এবং এই কারণে তারা ছিল ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য হুমকিস্বরূপ।
একইসঙ্গে এই হামলায় অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি বিস্ফোরক ও রিমোট কন্ট্রোলযুক্ত একটি গাড়িও ধ্বংস হয়েছে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করেছে এবং সেগুলোকে হাসপাতালে স্থানান্তর করেছে।অন্যদিকে তুলকারম শহরে পৃথক ঘটনায় আরও এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় তাদের সৈন্যরা একজন সশস্ত্র জঙ্গিকে হত্যা করেছে।হত্যাকাণ্ডের এসব ঘটনায় কোনও সশস্ত্র ফিলিস্তিনি দল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে, অভিযানে নিহত ব্যক্তিরা তাদের যোদ্ধা। এদিকে ইসরায়েলের অভিযানের মধ্যে তুবাসে প্রবেশ ও সেখান থেকে প্রস্থান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং রাস্তা খননকারী ও সাঁজোয়া কর্মী বহনকারী ইসরায়েলি সামরিক যানবাহনগুলোকে পশ্চিম তীরের উত্তর প্রান্তে জর্ডানের সীমান্তের কাছাকাছি শহরের মধ্য দিয়ে যেতে দেখা যায়।
এছাড়া বুধবার পশ্চিম তীরে রামাল্লার পূর্ব দিকে হামলায় একজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।রয়টার্স বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী গত দুই সপ্তাহ ধরে পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে তুবাস, জেনিন এবং তুলকারমে বড় পরিসরের অভিযানের পাশাপাশি ধারাবাহিক অভিযানও পরিচালনা করছে। পশ্চিম তীরের এই তিনটি শহরেই হামাস, ইরান-সমর্থিত ইসলামিক জিহাদ এবং ফাতাহসহ সশস্ত্র উপদলগুলোর ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে।অভিযানের সময় ইসরায়েলি বাহিনী এবং ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী রাস্তা খুঁড়ে এবং বাড়িঘর ধ্বংস করার কারণে এই তিনটি শহরের রাস্তা এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পশ্চিমতীর দখল করে নেয় ইসরায়েল। আর গত বছরের শুরু থেকে পশ্চিম তীরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটি আরও বেড়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুতকৃত এএফপির পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে ৬৮০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও ১০ হাজার মানুষকে।এছাড়া টানা ১১ মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল এবং এতে এখন পর্যন্ত ৪১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি এই নৃশংসতা বিশ্বব্যাপী নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে এবং একইসঙ্গে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও উঠেছে।
মন্তব্য ( ০)