চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৬ সদস্যর মধ্যে চট্টগ্রামের সন্তান ৬জন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯-২০ মি: বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন ড. মুহাম্মদ ইউনুছকে প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে শপথ বাক্য পাঠ করান। ১৩ উপদেষ্টা শপথ গ্রহন করেন। এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুছ। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ২৮ জুন ১৯৪০ সাল। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাটুয়া গ্রামে। তার পিতা- হাজী দুলা মিয়া সওদাগর মাতা-সুফিয়া খাতুন। তার স্ত্রী ড. আফরোজা ইউনুছ। তিনি ২ কন্যার পিতা।
ড. ইউনুছের ভাই মোহাম্মদ ইব্রাহিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং ছোট ভাই মো. জাহাঙ্গীর একজন জনপ্রিয় টিভি ব্যক্তিত্ব। ড. ইউনুছ চট্টগ্রাম কলেজিয়াট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১৬ তম স্থান অধিকার। ভয়েস স্কাউটের পক্ষ থেকে ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ এশিয়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি লাভ করেন। বাংলাদেশে ফিরে এসে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত মিডল টেনেছি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪৮টি সম্মাণসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। শান্তিতে নোভেল জয়ী গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনুছ যুক্তরাষ্ট্রের সবোর্চ্চ বেসামরিক সাম্মণনা কনগ্রেশনাল গোল্ড মেডাল গ্রহণ করেন। ২০১৩ সালের ৫ মে বুধবার জাতিসংঘ ভবনে সম্মাণনা জানানো হয়। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম কলেজে ও হাটহাজারীতে অধ্যাপনা করেন। ২০০৬ সালে গ্রামীন ব্যাংকের সাথে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরুস্কারে ভূষিত হন।
(২) নুরজাহান বেগম- চট্টগ্রামের কুয়াইশে জন্ম। নুরজাহান বেগম গ্রামীন ব্যাংকের প্রতিষ্টাতা ড.ইউনুছের একজন প্রথম সারীর সহযোগী। তিনি ব্যাংকের প্রশিক্ষন ইন্স: প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন। পরে ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ও বর্তমানে তিনি গ্রামীন শিক্ষা ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
(৩) নৌকমান্ডো বীর প্রতিক মুক্তিযোদ্ধা ফারুকে আজম- চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ফরহাদাবাদে জন্ম। মেহেদীবাগে থাকেন। মরহুম মনির আহমদ ও জন্নাতুল ফেরদৌসের পুত্র। তার চার কন্যা ও স্ত্রী শামীমা আরা রমনীয়া কর্নধার। তিনি ১৯৭১ সালে খুলনায় ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হলে বহু প্রতিকুলতা এবং ঝুকি মোকাবেলা করে চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন। এ সময় তিনি নৌবাহিনীর জন্য মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে পলাশীতে ২ মাসের প্রশিক্ষন শেষ করেন। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ৬০ সদস্যের একটি দল নির্বাচন করা হয়। এদের মধ্যে ২৩ জন চট্টগ্রামে এসে পৌঁছাতে পারেনি। বাকী ২টি দলের ৩৭ জন সদস্য চট্টগ্রাম বন্দরে অভিযান পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র সমন্বিত যুদ্ধাভিযান অপারেশন ক্যাক: এর অধিনায়ক ছিলেন।
(৪) ফরিদা আকতার- চন্দনাইশের হারলায় জন্ম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপাড়া করেন নারী উন্নয়ন,স্বাস্থ্য,কৃষি,মৎস্য সম্পদ, এবং উন্নয়নমূলক বিষয়ে ৩০ বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারনী গবেষনার নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকায় বসবাস ফরিদা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনর নামে পরিচালিত কার্যক্রমের মারাত্নক কুফল ও নারী স্বাস্থ্যের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে লেখালেখি এবং প্রতিকার আন্দোলনের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সুপরিচিত । চন্দনাইশ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, অধ্যক্ষ কাজী মোজাহেরুল কাদের বলেন, ফরিদা একজন লেখক ,গবেষক ও উবিনীগ এন.জি.ও পরিচালক।
(৫) সুপ্রদীপ চাকমা- খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে জন্ম। ৭ম বি.সি.এস এ সরকারী চাকুরীতে যোগদান। ঢাকা ভাসিটির মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে দুই বছরের জন্য সচিব পদমর্যদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। যা আগামী বছর জুলাইয়ে শেষ হবার কথা। এর আগে ভিয়েতনাম, মেক্রিকো বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। এছাড়া রাবাত,ব্রাসেলস ,আন্কারা ও কলম্বোতে বাংলাদেশ দুতাবাসের বিভিন্ন পদে কুটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন।
(৬) ড. আ.ফ.ম খালেদ হোসেন- জন্ম সাতকানিয়ায় ১৯৫৯ এর ফেব্রুয়ারীতে । হেফাজতে ইসলাম এর সাবেক নায়েবে আমীর। চট্টগ্রাম এম.ই.এস কলেজের ইস: ইতিহাসের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। দ্যা মুসলিম লীগ জার্নাল সহ বিভিন্ন সাময়ীকিতে তার ২শ গবেষনাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ইসলামী ফাউন্ডেশন ইসলামী বিশ্বকোষ ২য় সংস্কারের থেকে ৯ খন্ড ও সিরাত বিশ্বকোষের সম্পাদনা করেন। বর্তমানে তিনি আলজামেয়াতুল আরবিয়াহ জিরির মুহাদ্দিস ও হালিশহর হযরত ওসমান (রাজি.) জামে মসজিদের খতিব, মাসিক আততাওহিদের সম্পাদক ২০০৭ সাল থেকে। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্কলারশীফ নিয়ে নবী করিম (স:) একটি খুতবা একটি সমাজিক সংস্কতার গবেষণা বিষয়ে পি.এইস.ডি সম্পন্ন করেন। তিন পুত্র ও তিন কন্যার জনক তিনি। তবে তিন পুত্রের মধ্যে ২ জনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
মন্তব্য ( ০)