নিউজ ডেস্কঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পালটাপালটি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দিনভর সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় রাত ৮টা ২০ মিনিটে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সারা দেশে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪-এ।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নিহতদের মধ্যে নরসিংদীতে ৬ জন, ফেনীতে ৮ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ মোট ২২ জন, কিশোরগঞ্জে ৪ জন, রাজধানী ঢাকায় ৫ জন, বগুড়ায় ৪ জন, মুন্সীগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ৪ জন, ভোলায় ৩ জন, রংপুরে ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, সিলেটে ৪ জন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন, শেরপুরে ২ জন, লক্ষ্মীপুরে ৪ জন, জয়পুরহাটে ১ জন, হবিগঞ্জে ১ জন, ঢাকার কেরানীগঞ্জে ১ জন, ধামরাইয়ে ১ জন, ও বরিশালে ১ জনসহ ৮৪ জন নিহত হয়েছেন।
ফেনী
ফেনীতে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৮ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রোববার ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ইকবাল হোসেন যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আহত অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন। প্রায় ৬০ জনের মতো আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন জেনারেল হাসপাতালে। নিহতদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নরসিংদী
নরসিংদীতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
রাজধানী (ঢাকা)
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং আরেকজন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন।
এ ছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিকাল থেকে টানা চার ঘণ্টা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ-যুবলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হওয়া ত্রিমুখী সংঘর্ষে বিকাল থেকেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোহাম্মদপুর সংঘর্ষে একজন কিশোর নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে নিহতে সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক আহত হয়েছে বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
নিহত কিশোর হলেন- ওমর ফারুক (১৬)। তিনি মোহাম্মদপুরের বোর্ড ঘাট এলাকার বাসিন্দা।
রংপুর
রংপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের দায়িত্বে থাকা আব্দুল জলিল দুজন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও দুজন নিহতের তথ্য জানিয়েছেন।
নগরীর পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা ও তার গাড়িচালক সংঘর্ষের সময় নিহত হন। তাদের লাশ সিটি করপোরেশন গেটের সামনে পড়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
পাবনা
পাবনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩২ জন।
পাবনার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ বলে জানা গেছে। সেখানে এখনো গোলাগুলি চলছে বলে জানা গেছে।
বগুড়া
বগুড়ায় সকাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে হাজারো জনতা। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাস্তায় আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত বগুড়া শহর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা। এখন পর্যন্ত সেখানে চারজন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে।
মুন্সীগঞ্জ
মুন্সীগঞ্জে এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। সকাল পৌনে ১১টার দিকে শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ধামরাই
ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অজ্ঞাত এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে। তবে তিনি কখন এবং কীভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত চিকিৎসক আহমেদুল হক তিতাস বলেন, ‘দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে কয়েকজন ওই যুবককে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসে। যুবকের পিঠে গুলিবিদ্ধের চিহ্ন দেখা গেছে। মরদেহ এখানে ফেলে সেই যুবকেরা চলে গেছে।’
মাগুরা
মাগুরায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন।
কুমিল্লা
কুমিল্লার দেবিদ্বারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। দুপুর ১টার দিকে উপজেলার নিউমার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জে সংঘর্ষে ১৩ পুলিশ সদস্যসহ ২২ জন নিহত হয়েছেন। সরকারের পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার একদফা আন্দোলনের সময় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যায় রাজশাহী রেঞ্জের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (অপারেশন) মো. সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এনায়েতপুর থানা এখনো অরক্ষিত। পুলিশ সদস্যরা থানায় ঢুকতে পারছে না। গাছ দিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়েছে।
ভোলা
ভোলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
এ ছাড়া কিশোরগঞ্জে ৪ জন, লক্ষ্মীপুরে ৪ জন, বরিশালে ১ জন ও জয়পুরহাটে ১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
মন্তব্য ( ০)