অর্থনীতি ডেস্ক: ঈদুল আজহা (কুরবানির ঈদ) যত ঘনিয়ে আসছে, মসলার বাজার ততই অস্থির হয়ে উঠছে। দুই মাস ধরেই ধাপে ধাপে বাড়ছে বিভিন্ন মসলার দাম। সর্বশেষ সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে পেঁয়াজ, আদা-রসুনের দাম। পাশাপাশি এলাচ, লবঙ্গ ও জিরাও অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ও রামপুরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে।
এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক পণ্যমূল্যের তালিকা পর্যালোচনা করেও মসলার মূল্যবৃদ্ধির চিত্র লক্ষ করা গেছে। টিসিবি বলছে, সাতদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি ও আমদানিকরা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৬.৯০ থেকে ৬.৪৫ শতাংশ। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে ২.১৩ শতাংশ, দেশি রসুন ২.৪৪ শতাংশ, জিরা ৬.৬৭ শতাংশ, লবঙ্গ ৪.৭৬ শতাংশ এবং ছোট দানার এলাচ ৫.৮৮ শতাংশ।
খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, যা সাতদিন আগেও ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা। এ পেঁয়াজ এক সপ্তাহ আগেও ৮০ টাকা ছিল। এছাড়া রাজধানীর খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা, যা সাতদিন আগেও ১৯০-২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আমদানি করা আদা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৬০ টাকা, যা সাতদিন আগে ২০০-২৫০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৯০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ৬৫০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকা। সেই একই লবঙ্গ সাতদিন আগেও কেজি ছিল ১৬৫০-১৭০০ টাকা। প্রতি কেজি ছোট দানার এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০০ টাকা, যা আগে ৩৭০০-৩৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রাজধানীর নয়াবাজারে মসলার ক্রেতা আনসার আলী বলেন, কুরবানির ঈদ এলেই বিক্রেতারা মসলার দাম বাড়িয়ে দেন। এবার একই কাজ করা হয়েছে। প্রতিবছর একইভাবে ভোক্তার পকেট কাটলেও তদারকি সংস্থা কিছুই করছে না। তাহলে কি তদারকি সংস্থাও ভোক্তার মতো শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি? যদি জিম্মি হয়ে থাকে, তাহলে আমরা ভোক্তারা কোথায় যাব?
একই বাজারের মসলা বিক্রেতা মো. শাকিল বলেন, পাইকারি দোকান থেকে পণ্য কিনে এনে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করি। দাম বাড়তি থাকলে আমাদেরও বাড়তি দামে কিনতে হয়। বিক্রিও করতে হয় বাড়তি দামে। কিন্তু ক্রেতারা আমাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করেন। অভিযান পরিচালনা হলেও আমাদের এসে জরিমানা করে। আমরা অনেক সমস্যায় আছি।
এদিকে কাওরান বাজারের পাইকারি মসলা বিক্রেতারা জানান, সম্প্রতি ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি পর্যায়ে খরচ বেড়ে গেছে। যে কারণে সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে। এখানে কুরবানির ঈদ ঘিরে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট করা হয়নি।
এদিকে ডিমের বাজারও চড়া। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনে দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। বাজারে বেশি বেচাকেনা হয় বাদামি রঙের ডিম। খুচরায় এ ধরনের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা দরে। হালি হিসাবে (৪টি) কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এ ছাড়া সাদা রঙের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, প্রতিবছর রোজা ও রোজার ঈদ এমনকি কুরবানির ঈদে ব্যবসায়ীরা একেকটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। যেখানে ধর্মীয় উৎসবে ক্রেতাকে স্বস্তি দিতে অন্যান্য দেশ পণ্যের দাম কমায়, আর এ দেশে ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফা করতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে নাজেহাল করে। এটা কোনোভাবেই ঠিক না। আর এগুলো দেখার যথাযথ কর্তৃপক্ষ আছে, তারাও বাজারে তদারকি করছে। কিন্তু দাম কোনোভাবে ক্রেতাসহনীয় করা যাচ্ছে না। এজন্য দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি তা প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এবং ঈদ ঘিরে বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। এমনকি আসলের নামে ভেজাল পণ্য তৈরি ও সরবরাহ নজরদারি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু পণ্যের দাম কমেছে। তদারকি চলমান আছে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায়ও আনা হচ্ছে।
মন্তব্য ( ০)