• সমগ্র বাংলা
  • লিড নিউজ

সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী গুড় পুকুরের মেলা জমে উঠেছে

  • সমগ্র বাংলা
  • লিড নিউজ
  • ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৯:৩৭:৫২

ছবিঃ সিএনআই

সাতক্ষীরাঃ ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী সাতক্ষীরার গুড় পুকুরের মেলা জমে উঠেছে। দর্শনার্থী আর ব্যাবসা বানিজ্যে সরগরম হয়ে উঠেছে মেলার মাঠ। ২০ সেপ্টেম্বর (বুধবার) সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান দুপুর ১২ টায় এই মেলা উদ্ভোধন করেন। ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৪০০ শতাধিক ব্যবসায়ী মেলায় তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে। মেলা জমে উঠাতে খুশি ব্যবসায়ীরা অপরদিকে একই জায়গায় স্বল্পমূল্যে নানান ধরনের জিনিসপত্র পেয়ে খুশি দর্শনার্থী ক্রেতারা।   
   
রাজাপ্রাণনাথের জমিদারি আমল থেকে শুরু হয় সাতক্ষীরার গুড় পুকুরের মেলা। দক্ষিণ জনপদের মানুষ এই মেলার জন্য সারাবছর অপেক্ষায় থাকে। ব্যবসা বানিজ্য যেমন জমে ওঠে তেমনি দেশ ও দেশের বাহির থেকে দর্শনার্থীরা আসেন এই মেলায়। সারা শহর মুখরিত হয় আনন্দ উৎসবে। ঢাকঢোল আর গানবাজনায় সারা শহর যেন গম গম করতে থাকে। গ্রামে গ্রামে এই আমেজ ছড়িয়ে পড়ে তাই গ্রাম থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে এই মেলা উপভোগ করতে আসেন অনেকেই।  

দক্ষিণ-পশ্চিমের এই জেলায় আগে গুড় পুকুরের মেলা হতো বিরাট আয়োজন করে, কিন্তু এখন এই আয়োজন ছোট পরিসরে সাতক্ষীরার শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কেই হয়। শীতা রানী দাস বলেন ছোট বেলায় দেখতাম গুড়পুকুরের মেলা সারা শহর জুড়ে হতো আর শহরের সাথে তাল মিলিয়ে গ্রামেও হতো। তখন এই মেলায় বসত বাহারি সব জিনিস দামি পালঙ্ক, এমনকি সার্কাস ও হতো এখানে। এখন সেই সব সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। 

সাতক্ষীরার সরকারি গার্লস স্কুলের শিক্ষার্থী ফাতেমা বলেন, আমরা এখানকার স্থানীয় পরিবারের সবাই গুড় মেলা দেখতে এসেছি খুব ভালো লাগছে। প্রতিদিন মেলায় আসি বন্ধু-বান্ধুবীদের সাথে খুব মজা হয়। এটা আমাদের সাতক্ষীরার ঐতিহ্য। মেলায় প্রতিবারের ন্যায় এবারও নাগরদোলা, নৌকা, ট্রেন সহ নানান ধরনের রাইডই বসেছে খুব মজা হচ্ছে। সাতক্ষীরা ‘ল’ কলেজ শিক্ষার্র্থী পিংকী কর্মকার বলেন, বাপ, ঠাকুরদের ইতিহাস ঐতিহ্যের গুড় পুকুরের এই মেলায় তো আসতেই হবে। 

মেলাকে ঘিরে বিভিন্ন জেলা থেকে ৪০০ শতকের বেশি দোকান পাট বসেছে। বাহারি সব জিনিসপত্র। আছে চোঁখ ধাঁধানো কসমেটিকস নিয়ে এসেছে বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন  এবার নতুন নতুন পণ্য নিয়ে তারা মেলায় এসেছে। ঢাকার নবাবপুর থেকে আসা কসমেটিকস্ ব্যবসায়ী ইব্রাহীম বলেন ইতিমধ্যেই ভালো ব্যবসা শুরু হয়েছে। তবে মেলার শেষের দিকে খুব ভালো ব্যাবসার আশা রাখছেন তিনি। সাথে সাথে মেলায় আহবান করছেন দর্শনার্থীদেরকে। 
সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সমরেশ কুমার দাশ বলেন, গুড় পুকুরের মেলা সাতক্ষীরার রাজা প্রাণনাথের জমিদারি আমল থেকে শুরু হয়। মূলত মনসা পূজা  ও গূড় পুকুর কে কেন্দ্র করেই এই মেলার সৃষ্টি। এই সামান্য বিনোদন টুকু যা টিকে আছে। তিনি আরো জানান, ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বও জঙ্গিদের ভয়াবহ বোমা হামলায় ৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। তারপর থেকে মনসা পূজা ও গুড় পুকুরের মেলা  বন্ধ হয়ে যায়।  বিশেষ করে কোভিট-১৯ এর পর থেকে জেলা প্রশাসক এর সার্বিক সহযোগীতায় পুনরায় গুড় পুকুরের মেলা চালু হয়। 

জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, মনসা পূজাকে কেন্দ্র করে ৪০০ শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গুড় পুকুরের এই মেলা সাতক্ষীরা ঐতিহ্য যেটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। সার্বিক দিকে বিবেচনা করে প্রাথমিক ভাবে ৩ সপ্তাহের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  তবে পরবর্তীতে এই মেলার পরিসর পূূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে সকলের একযোগে কাজ করার আহবান জানান তিনি । 

অসাম্প্রদায়িক সাতক্ষীরা বির্নিমানে গুড় পুকুরের মতো ঐতিহ্যবাহী মেলা আমাদের দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি মৌলবাদী আগ্রাসন থেকে রক্ষা করবে সর্বস্তরের মানুষকে। গুড় পুকুরের এই মেলা বৃহৎ পরিসরে জেলা ব্যাপি পুনরায় চালু হোক এটায় সর্বসাধারণের প্রত্যাশা।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo