• আন্তর্জাতিক
  • লিড নিউজ

চীনে মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্রকরে মুসলিমদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ

  • আন্তর্জাতিক
  • লিড নিউজ
  • ৩০ মে, ২০২৩ ২২:০১:৫৪

ছবিঃ সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি শহরের মসজিদের গম্বুজ ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন সেখানকার মুসলিমরা। মসজিদের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইউনানের ওই এলাকায় পুলিশের সাথে মুসলিমদের সংঘর্ষ হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, গত শনিবার ইউনানের নাগু শহরে ত্রয়োদশ শতকে নির্মিত নাজিয়াইং মসজিদের বাইরে অনেক মুসলিম জড়ো হয়েছেন। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয় মুসলিমদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশের সশস্ত্র শতাধিক কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। জাতিগত দিক থেকে বৈচিত্র্যময় চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রদেশ ইউনানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠী রয়েছে। সরকারিভাবে নাস্তিক রাষ্ট্র হলেও চীনে ধর্মীয় স্বাধীনতার অনুমতি রয়েছে।

কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে সংগঠিত ধর্মের বিরুদ্ধে নিপীড়ন বেড়েছে। একই সঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসন পালনের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চাইছে বেইজিং। নাগুর নাজিয়াইং মসজিদটি মুসলিমদের অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। গত কয়েক বছরে এই মসজিদের গম্বুজযুক্ত ছাদ ও কয়েকটি মিনার নির্মাণসহ এর আকার বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু ২০২০ সালে দেশটির একটি আদালত মসজিদটির সম্প্রসারণ কাজকে অবৈধ ঘোষণা করে তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়।

সম্প্রতি মসজিদটির গম্বুজ ও সম্প্রসারিত অংশ ভেঙে ফেলার উদ্যোগ আদালতের ওই আদেশ কার্যকর করার জন্য নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সেখানকার মুসলিমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন। শনিবারের বিক্ষোভের ভিডিওগুলোর সত্যতা যাচাই করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের সদস্যরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে মুসলিমদের মসজিদে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। এ সময় অনেকে জোর করে মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এছাড়া মসজিদে প্রবেশে বাধা দেওয়ায় বিক্ষোভকারীদের একটি দল পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়ছে।

অন্য কয়েকটি ভিডিওতে পুলিশকে পরবর্তীতে মসজিদের সামনে থেকে চলে যেতে দেখা যায়। পরে সেখানে বিক্ষোভকারী মুসলিমরা মসজিদটিতে প্রবেশ করেন। ইউনানের টংহাই কাউন্টির পুলিশ রোববার এক বিবৃতি জারি করে বিক্ষোভকারীদের আগামী ৬ জুনের মধ্যে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে। বিক্ষোভের ওই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ইতোমধ্যে কয়েক ডজন মুসলিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যারা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করবেন এবং সত্যের সাথে আইনের লঙ্ঘন ও অপরাধ স্বীকার করেবেন; তাদের হালকা বা লঘু দণ্ড দেওয়া হতে পারে।

নাজিয়াইং মসজিদের ওই ঘটনাকে ‘সামাজিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার জন্য গুরুতর প্রতিবন্ধকতা’ অভিহিত করে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে তথ্য দিতে অন্যদের প্রতিও আহ্বান জানানো হয়েছে। চীনে সাধারণত এই ধরনের বিক্ষোভের ঘটনা তুলনামূলক অস্বাভাবিক। তবে করোনাভাইরাস মহামারির সময় দীর্ঘদিন কঠোর লকডাউন ও চলাচলের বিধিনিষেধ জারি রাখার প্রতিবাদে দেশটিতে সাধারণ জনগণের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। কয়েক মাস আগে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে করোনা বিধি প্রত্যাহারের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেন।

বেইজিংয়ের স্বীকৃত ৫৬টি জাতিগত গোষ্ঠীর একটি হুই। আর এই হুই সম্প্রদায়ের সদস্যরা সুন্নিপন্থী মুসলিম। চীনজুড়ে প্রায় এক কোটি হুই মুসলিম রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৭০ হাজারই দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমের ইউনানে বসবাস করেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে এই হুই সম্প্রদায়কে প্রায়ই ‘চীনা মুসলমান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। গত কয়েক শতাব্দী ধরে দেশটিতে বসবাস করে আসা এই হুইদের আন্তঃবিবাহের প্রচলন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বীকৃতি মেলায় চীনা সমাজে তাদের ভালোভাবেই গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ধর্মীয় বিভিন্ন গোষ্ঠীর ওপর অধিক নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা করছে বেইজিং।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo