দেশে এক ইঞ্চি মাটিও পতিত থাকবে নাঃ শেখ হাসিনা

ছবিঃ সিএনআই

কাফি খান, ময়মনসিংহ: দেশে এক ইঞ্চি মাটিও পতিত থাকবে না। দেশের আনাচে কানাচে সব মাটিতে ফসল ফলাবো। নিজের খাবারের জন্য মাঠে কাজ করতে কোনো লজ্জা নেই। আমরা নিজেরা খাদ্যশস্য উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করবো। আমরা আর কারও কাছে হাত পাততে চাই না। শনিবার (১১ মার্চ) বিকেল ৪টায় ময়মনসিংহ নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা মানে দুর্নীতি। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের জন্য কাজ করে। আওয়ামী লীগ মানুষকে ঘর দিয়েছে, মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশে কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করেছি। মানুষ এখন দেশে শান্তিতে বসবাস করছে।

এখন আমাদের ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে। বর্তমানে দেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। প্রায় সাড়ে চার বছর পর আজ  ১১ মার্চ  শনিবার বিকেলে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সার্কিট হাউসের জনসভা মাঠে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ বিভাগ ও জেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ১০৩টি উন্নয়নকাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্যে প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ সমাপ্ত ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও প্রায় দুই হাজার ৭৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।  উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- ময়মনসিংহের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন জায়গায় ছবির ভিত্তিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, ময়মনসিংহ সদরের চর সিরতায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ডা. মুশফিকুর রহমান শুভ মেমোরিয়াল ইসলামিক মিশন হাসপাতাল।

৩২টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্প, ২১টি বিদ্যালয় ও কলেজের চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণ, ময়মনসিংহ জেলায় ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদ নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় গোরবাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর, জেলা আইনজীবী সমিতির মূলভবন, শহীদ অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম ভবন ও ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ উদ্বোধন।এছাড়া প্রধানমন্ত্রী যেসব নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল নির্মাণ, শেখ রেহানা হল নির্মাণ, রোজী জামাল হল নির্মাণ, সরকারি আনন্দ মোহন কলেজে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট পাঁচ তলা ছাত্র হোস্টেল নির্মাণ, শেরপুর (কানাসাখোলা)-ভীমগঞ্জ-নারায়ণখোলা-রামভদ্রপুর-পরানগঞ্জ, ময়মনসিংহ (রহমতপুর) সড়ক উন্নয়নকাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন।

এদিকে সকাল থেকে টাঙ্গাইল,জামালপুর,নেএকোনা ও কিশোরগন্জ সহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ থেকে বাস, ট্রাক,মাইক্রোবাস ও ট্রেনের বিশেষ ব্যবস্থায় হাজার হাজার আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী রঙিন শাড়ি, হাতে পতাকা, মাথায় রঙিন ক্যাপ  ঢাক-ঢোলের তালে তালে নেচে গেয়ে খণ্ড খন্ড মিছিল নিয়ে জনসভা মাঠে আসেন ।  প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, মোড়গুলোকে সাজানো হয় রঙ-বেরঙের সাজে। তোরণ নির্মাণের পাশাপাশি ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে গোটা শহর। বিভাগীয় শহরের বাইরের সড়কগুলোতেও নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। এসব ব্যানার-ফেস্টুন, তোরণে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উন্নয়ন। জনসভাস্থল সার্কিট হাউস মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল নৌকা আকৃতির মঞ্চ।

রঙিন বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে গোটা মাঠ। বাঁশের ব্যারিকেড, আর্চওয়ে দিয়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে মাঠে। জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহাম্মদ হোসেন, মির্জা আজম, সদস্য মারুফা আখতার পপি, সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু, সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্তসহ তৃণমূল নেতারা উপস্থিত ছিল।