• আন্তর্জাতিক

এবার নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার সিদ্ধান্ত বাতিলে ইমরান খানের আবেদন খারিজ

  • আন্তর্জাতিক
  • ২৪ অক্টোবর, ২০২২ ১৯:০৩:৪৭

ছবিঃ সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ তোশাখানা মামলায় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খানের বিরুদ্ধে নেওয়া পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) সিদ্ধান্ত স্থগিত করার আবেদন খারিজ করেছেন ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। সাবেক এই পাক প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার মামলার শুনানি শেষে সোমবার হাইকোর্ট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

পাকিস্তানি টেলিভিশন চ্যানেল এআরওয়াই নিউজ বলছে, তোশাখানা কাণ্ডে ইমরান খান যে ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছেন তা দুর্নীতিগ্রস্ত। তোশাখানার উপহার বিক্রির তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভুল বিবৃতি দেওয়ায় পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছে।

ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ সোমবার ইমরান খানের আবেদনের শুনানি করেছেন। শুনানি শেষে তা খারিজ করে দেওয়ার পর পিটিআই চেয়ারম্যানকে আগামী তিন দিনের মধ্যে আবেদনে উল্লেখ করা তথ্য পরিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইমরান খানের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার আলী জাফর।

আলী জাফর বলেন, বায়োমেট্রিক যাচাই ও ইসিপির সিদ্ধান্তের সত্যায়িত অনুলিপি আবেদনের সঙ্গে না থাকা নিয়ে তাদের আপত্তি ছিল। আদালতকে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের আদেশের মাত্র দুই পৃষ্ঠা পৌঁছেছে তাদের কাছে। এ সময় বিচারপতি মামলাটি নিয়ে তাড়াহুড়ো কেন, তা জানতে চান।

জবাবে ইমরানের আইনজীবী বলেন, সামনে তার মক্কেল একটি আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করতে চান। পরে বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ বলেন, ইমরান খানের আইনজীবী তিন দিনের মধ্যে সত্যায়িত অনুলিপি পাবেন বলে আশা করছেন তিনি। পরে নির্বাচন কমিশনের আদেশ স্থগিতে ইমরান খানের করা আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি।

গত আগস্টে পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের সবচেয়ে বড় শরিক দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ- নওয়াজের (পিএমএলএন) সদস্য মোহসনি নওয়াজ রানঝা ইমরানের বিরুদ্ধে তোশাখানা মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় তোশাখানা থেকে বিদেশি বিশিষ্টজনদের দেওয়া উপহার কিনলেও নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে সেগুলোর উল্লেখ করেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তারা অন্য কোনও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উপহার পেলে তা তাৎক্ষণিকভাবে তোশাখানাকে জানানোর নিয়ম রয়েছে; যাতে উপহারসামগ্রীর মূল্য নির্ধারণ করা যায়। তোশাখানার পর্যালোচনার পর প্রাপক যদি নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ জমা করেন, তাহলে তিনি সেই উপহার সামগ্রী নিয়ে যেতে পারেন।

গত শতকের সত্তরের দশকে পাকিস্তানের সরকারি একটি বিভাগ হিসেবে তোশাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিভাগটি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য বিশিষ্ট জনদের দেওয়া উপহার জমা রাখে।

ইমরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয় তাতে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ধরনের ৫৮টি বাক্স উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন।

এ সম্পর্কে গত ২২ আগস্ট পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ ‍নির্বাচনক কমিশনকে দেওয়া এক চিঠিতে ইমরান খানকে ‘অসৎ’ ঘোষণা করে তাকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করার আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিজের ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় তোশাখানা থেকে নামমাত্র মূল্যে এসব উপহার নিয়েছেন এবং এসব উপহারের অধিকাংশই তিনি বিক্রি করেছেন।

উপহারের মধ্যে কিছু দামি হাতঘড়িও রয়েছে। এসব উপহারের আনুমানিক মূল্য ১৪ কোটি ২০ লাখ রুপি। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এসব উপহার নিয়েছিলেন বলে আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন স্পিকার।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত শুক্রবার পাঁচ বছরের জন্য ইমরানকে সব সরকারি পদ থেকে নিষিদ্ধ করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এর ফলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ সাধারণ পরিষদের সদস্যপদ হারিয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা ইমরান খান। সেই সঙ্গে আগামী পাঁচ বছর জাতীয় ও প্রাদেশিক কোনও আইনসভার নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না তিনি।

পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন বলেছে, ইমরান খান মিথ্যা হলফনামা দাখিল করেছেন এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন।

এর আগে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর তোশাখানা মামলার শুনানিতে ইমরান খানের আইনজীবী আলী জাফর স্বীকার করেন, তার মক্কেল ২০১৮-১৯ সালে পাওয়া কমপক্ষে চারটি উপহার বিক্রি করেছেন। বিক্রি করা এসব উপহারের মূল্য প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ পাকিস্তানি রুপি। উপহার বিক্রির রসিদ ইমরান খান আয়কর রিটার্নের সাথে জমা দিয়েছিলেন বলেও জানান এই আইনজীবী।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo