• সমগ্র বাংলা

পদ্মা সেতু উদ্ধোধনে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটের শ্রমজীবীদের ‘হতাশার কান্না’

  • সমগ্র বাংলা
  • ২৩ জুন, ২০২২ ২০:৫২:৩০

ছবিঃ সিএনআই

শাহজাহান বিশ্বাস,মানিকগঞ্জ: পদ্মা সেতু উদ্ভোধনে দেশের একদিকে চলছে আনন্দের বন্যা, অপরদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া  ফেরি ঘাট কেন্দ্রীক ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবি মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশার কান্না।আর মাত্র একদিন পরেই (২৫ জুন) উদ্ধোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পুরণের মধ্য দিয়ে অবসান হতে যাচ্ছে ফেরি ঘাটের নানা বিড়ম্বনা।পাশাপাশি কর্মহীন হয়ে পড়ার আশংকায় ঘাট কেন্দ্রীক ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবি মানুষের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

পদ্মার এ পারে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া এবং ওপারে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট।এই ঘাটকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আবাসিক বোডিং, খাবার হোটেল-রেস্তোরা, ফেরির কেন্টিন, লুচ যাত্রীর ঠিকাদারী, বাস ও লঞ্চ ব্যবসা। এছাড়া কুলি, হাকারসহ শত শত দিনমজুর শ্রেণীর মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এ দু’টি ফেরি ঘাটকে কেন্দ্র করে।পদ্মা সেতু চালুর সংবাদে অনিশ্চিত ভবিষৎ চিন্তায় অনেকের মাঝে হতাশার বোবা কান্না সুরু হয়েছে বলে জানান ঘাট সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

 বিআইডব্লিউটিসি সুত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে ফেরি ও লঞ্চ ঘাট  আরিচা থেকে স্থানান্তরের পর জমজমাট হয়ে উঠে পাটুরিয়া। ব্যপক কর্মযজ্ঞ শুরু হয় পাটুরিয়া ঘাটকে ঘিরে।এখানে দু’টি টার্মিনালসহ বহু অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যুক্ত হয় ২১টি ফেরি।এ রুটে ফেরিতে প্রতিদিন গড়ে  ৭ থেকে ৮ হাজার যানবাহন পারাপার করা হয়ে থাকে। এতে রাজস্ব আয় হয় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা।এছাড়া লুজ যাত্রীর ইজারা দিয়ে প্রতিবছরে আয় হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা।বিআইডব্লিউটিসি’র অধিকাংশ আয় হয় এ ফেরি সেক্টর থেকে।

 লঞ্চ মালিক মো. মাসুদুর রহমান জানান,  ফেরির পাশাপাশি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ৩৩টি লঞ্চ চলাচল করছে।এসব লঞ্চে আড়াশ’ শ্রমিক রয়েছে।পদ্মা সেতু চালু হলে লঞ্চ ব্যবসাতেও কিছুটা ভাটা পড়বে বলে তিনি জানান।

ফেরির ক্যান্টিন ব্যবসায়ী আব্দুল  মালেক বলেন, আমাদের প্রতিদিন প্রায় ১৩শ’ টাকা রয়্যালেটি প্রদানের মাধ্যমে ফেরির ক্যান্টিনে হোটেল ব্যবসা করতে হচ্ছে। পদ্মা-সেতু চালুর পর এত টাকা প্রদান করে তা চালু রাখা সম্ভব হবে না বলে তিনি জানান।

ক্যান্টিন ঠিকাদার মোঃ ফরিদ চৌধুরী জানান, এই নৌ- রুটের ফেরির ক্যান্টিন ভাড়া বাবদ প্রতিদিন প্রায় ৯ হাজার টাকা প্রদান করতে হয় কর্তপক্ষকে। পদ্মা সেতু চালু হলে ফেরিতে তেমন যানবাহন পারাপার হবে না। এতে ক্যান্টিনের বেচা-কেনা কমে আসবে। আর বেচা-কেনা না হলে এত টাকা প্রদান করা সম্ভব হবে না।তাই বাধ্য হয়ে এ ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে এবং বেকার হয়ে পড়বে ক্যান্টিনের কর্মচারীরা।

পাটুরিয়া ঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী খাঁন মোহাম্মদ আজম জানান, পরিবহনের অগনিত যাত্রী ও ট্রাক শ্রমিকদের উপর নির্ভও করছে ঘাটের হোটেল ব্যবসা। পদ্মাসেতু চালুর পর যদি এরুটে বাস-কোচই না আসে তবে কি আর এ ব্যবসা চলবে! তবুও হতাশ হয়ে অপেক্ষায়  আছি। করার কিছুই নাই। দেখি বিকল্প কি করা যায়।

পাটুরিয়া-ঢাকা রুটের বাস-কোচ মালিক সমিতির পাটুরিয়া ঘাট শাখার সভাপতি আলাল উদ্দিন আলাল জানান, পাটুরিয়া থেকে পদ্মা লাইন, যাত্রীসেবা, নবীনবরণ, নীলাচল, সেলফি, শুভযাত্রা নামের প্রায় দু’শতাধিক পরিবহন ঢাকার গাবতলীর পথে চলাচল করে। এতে প্রত্যহ প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী বহন করা হয়। পদ্মাসেতু চালু হলে এরুটের অধিকাংশ যাত্রীরা ব্রিজ ব্যবহার করবে। ফলে এরুটের পরিবহন গুলো যাত্রী শুন্যতায় ভুগবে। সব মিলিয়ে ধ্বস নামবে এরুটের পরিবহন ব্যবসায়। বিকল্প রুট খুজতে হবে আমাদের।

ফল ব্যবসায়ী হাসেম আলী বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে ঘাটে আর এরকম ব্যবসা থাকবে না। তাই আমাদের এখন অন্য ব্যবসা খুজতে হবে। তা না হলে পরিবার নিয়ে জীবন যাপন করা কঠিন হয়ে পড়বে।

কথা হয় ফেরি সেক্টর বিআইডব্লিউটিসি আরিচা আঞ্চলিক অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহ্ মোহাম্মদ খালেদ নেয়াজের সাথে। তিনি বলেন, ২৫ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। এর পর যে কোন সময় তা যান চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করলে অধিক পণ্যবাহী ট্রাক-লড়ি ব্যতিত এই রুটের অধিকাংশ যাত্রীবাহী যানবাহন সেতু ব্যবহার করবে। এতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে পাটুরিয়া রুটের ফেরি সার্ভিসে। পাটুরিয়া রুটে প্রতিদিন গড়ে যাত্রীবাহী সাড়ে বারোশ বাস-কোচ, তিন হাজারের অধিক মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার ও দু’শতাধিক মোটরসাইকেল পারাপার হয়। এ থেকে আয় হয় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা। বিশেষ দিনে এ টাকার অঙ্ক আরো বৃদ্ধি পায় বলে তিনি জানান।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo