• আন্তর্জাতিক

তুমুল সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত লাহোর

  • আন্তর্জাতিক
  • ২৫ মে, ২০২২ ১৬:৪৩:৫২

ছবিঃ সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ পাকিস্তানের সদ্যক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ডাকা আজাদি মার্চে যোগ দিতে দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পিটিআইয়ের হাজার হাজার নেতা-কর্মী রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছেন। সরকার এই সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ায় দলটির নেতা-কর্মীদের সাথে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে লাহোর।

পিটিআইয়ের ‘আজাদি মার্চ’ ঠেকাতে দেশটির সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রাজধানীতে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন ও তাদের উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।

লাহোরের বাট্টি চক এলাকায় পিটিআইয়ের কর্মীরা সড়কের প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এ সময় পিটিআই কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। পিটিআইয়ের লাহোর শাখা দলের নেতা-কর্মীদের বাট্টি চকে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সেখান থেকে তারা ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

দলটির কর্মীরা বাট্টি চকের মোড়ে জড়ো হয়ে সড়কের প্রতিবন্ধকতা অপসারণের চেষ্টা চালিয়েছে। পরে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় তাদের। ওই এলাকা থেকে পুলিশ ইতোমধ্যে পিটিআইয়ের ১০ জনের বেশি কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে দেশটির গণমাধ্যম খবর দিয়েছে। এছাড়াও শ্রীনগর মহাসড়ক থেকে পিটিআইয়ের কিছু কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে, দেশটির সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়াসমিন রশিদের গাড়িতে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। আজাদি মার্চে যোগদান ঠেকাতে পিটিআইয়ের এই নেত্রীর গাড়ির সামনের কাঁচ পুলিশ ভেঙে ফেলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, পিটিআইয়ের নেত্রীকে থামাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করছে। কিন্তু তারপরও তার গাড়ি সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে পুলিশের ব্যাপক বাক-বিতণ্ডা হয় সাবেক এই মন্ত্রীর।

অন্যদিকে পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ইমরান খান ওয়ালি মোড় থেকে আজাদি মার্চে নেতৃত্ব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। হেলিকপ্টারে করে সেখানে অবতরণ করেছেন তিনি। আজাদি মার্চে যোগ দিতে যাওয়ার আগে এক ভিডিও বার্তায় সাবেক এই পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পাকিস্তানের জন্য এটি একটি চূড়ান্ত মুহূর্ত।

আজাদি মার্চে তার সাথে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সমর্থকদের আশ্বস্ত করে ইমরান খান বলেছেন, পিটিআই স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনবে।

হাসপাতালমুখী সড়ক চালু রাখার নির্দেশ

রাজধানী ইসলামাবাদে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে পিটিআইয়ের সমর্থকদের তীব্র সংঘর্ষের মাঝে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ পুলিশ এবং প্রশাসনকে রাজধানীতে সরকারি সব কর্মীকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গণমাধ্যম কর্মীদের থামানো যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি হাসপাতালগামী সড়ক চালু রাখার নির্দেশও দিয়েছেন পাকিস্তানের এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সরকারবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করতে পারে ইসলামাবাদ সরকার। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার করা হতে পারে দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতাকেও।

পাকিস্তান সরকারের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বুধবার (২৫ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। অন্যদিকে পাকিস্তানের আরেক শীর্ষ সংবাদমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছে, ইমরান খানের ডাকে রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে যাওয়ার সময় দেশটির লাহোরে পিটিআই কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।

দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বুধবার পেশোয়ার থেকে ইসলামাবাদে যাওয়ার পথে পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানকে দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে আটক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নামপ্রকাশ না করার শর্তে পাকিস্তানের বর্তমান সরকারের অন্যতম শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, ইমরান খানকে আটকের পর সম্ভাব্য বিভিন্ন দিক নিয়ে বেশ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে বিশদভাবে আলোচনা করেছে সরকার। তবে আলোচনা শেষে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে আটকের পরিকল্পনাটি এগিয়ে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সূত্রটির দাবি, ‘যদিও লংমার্চের সময় ইমরানসহ অন্যান্য পিটিআই নেতাকে গ্রেপ্তার করা অসম্ভব বলে মনে হলেও সরকারবিরোধী কর্মসূচিকে ঘিরে সম্ভাব্য সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা এড়াতে তাদের আটক করা ছাড়া সরকারের আর কোনো উপায় নেই।’

বিকল্প স্থান নির্ধারণের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট

এদিকে, বুধবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট পিটিআইকে সমাবেশ অনুষ্ঠানের জন্য আলাদা ভেন্যু নির্ধারণ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার মধ্যে এই ভেন্যু নির্ধারণ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরকারের সমাবেশ করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ হাই কোর্ট বার এসোসিয়েশনের এক আবেদনের শুনানি শেষে ওই নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo