• অপরাধ ও দুর্নীতি

আলোচিত মিতু হত্যা মামলা: গ্রেপ্তার হচ্ছেন আটক হওয়া বাদী এসপি বাবুল আক্তার নিজেই

  • অপরাধ ও দুর্নীতি
  • ১২ মে, ২০২১ ১৬:৫৫:১১

ছবিঃ সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চট্টগ্রামের নিজাম রোডে স্কুলবাসে ছেলেকে তুলে গিয়ে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় করা মামলার বাদী আটক হওয়া সাবেক ‍পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকেই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)।

বুধবার (১২ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। তিনি জানান, স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। নতুন করে করা হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। আর ওই মামলার এক নম্বর আসামী হবেন বাবুল আক্তার।  মামলার এজাহার প্রস্তুত করা হয়েছে।

এর আগে মিতু হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার (১১ মে) বাবুলকে তলব করে পিবিআই। পরে হত্যার সংশ্লিষ্টতা পেয়ে তাকে পিবিআই হেফাজতে রাখা হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, বাবুল আক্তারের করা হত্যা মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেবে পুলিশ। মিতুর বাবা বাদী হয়ে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে মামলা করবেন। পরে বাবুল আক্তারকে আজ গ্রেপ্তার দেখানো হবে।   

পিআইবি প্রধান বলেন, মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তারের করা মামলার আজ (বুধবার) চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে। এরপর আজ পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা হবে। বাবুল আক্তার গ্রেপ্তার না। নতুন মামলা হলে বাবুল আক্তার এক নম্বর আসামি হবেন। তারপর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার (১১ মে) আগের মামলার বাদী হিসাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আইন অনুযায়ী বাদীকে গ্রেপ্তার করে তদন্তকারী দল। পরে তাকে আটক রাখা হয়।

তিনি আরো বলেন, মামলার বাদীকে ইচ্ছে করলেই গ্রেপ্তার করা যায় না। বাদীকে গ্রেপ্তার করতে হলে ফাইনাল রিপোর্ট দিতে হবে। খুলশি থেকে ফাইনাল রিপোর্ট জমা দিতে কোর্টে যাচ্ছে পুলিশ। আগের মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর নতুন মামলা হবে। মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হতে পারেন। কথা বলেছি তার সঙ্গে। তাকে পিবিআই চট্টগ্রাম নিয়ে গেছেন।

মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, প্রথমে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা আসেনি। হাইকোর্ট জানতে চেয়েছেন কতদিন ঝুলে থাকবে এই মামলা। কিছু নতুন প্রশ্ন আসে। সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মামলা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। মিতু হত্যায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন গাজী আল মামুন ও সাইফুল হক নামে বাবুলের দুই বন্ধু।

বনজ কুমার বলেন, আমরা চাইলেও কাগজে-কলমে অনেক কিছু বলতে পারি না মামলার তদন্তের স্বার্থে। মিতু হত্যার ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ভিডিও ফুটেজ আমরা একজনকে দেখেছিলাম তার নাম কামরুল ইসলাম মুসা। মুসা এখনও নিখোঁজ। আমরা জেনেছি মুসা নিয়মিত বাবুল আক্তারের বাসায় যাতায়াত করতেন। তার অনুপস্থিতিতে মুসা বাজারও করে দিতেন। পিবিআই জানার চেষ্টা করেছে মুসা সোর্স ছিল কি না। এটাই পিবিআই প্রমাণের চেষ্টা করেছে। মুসাকে শুধু বাবুল আক্তারই চিনতেন। ভিডিও ফুটেজ স্পষ্ট এই মুসাকে চেনা গেছে। কিন্তু তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে মুসার দিকে বাবুল আক্তারের সন্দেহ হচ্ছিল না।

পরে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি যে বাবুল আক্তার ইচ্ছাকৃতভাবে তার ব্যক্তিগত সোর্স মুসাকে সন্দেহ করেনি বা সন্দেহজনক বলে পুলিশকে জানায়নি।

বনজ কুমার বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে জঙ্গি কার্যক্রমে আহত হন বলে দাবি করেন বাবুল। আমরা সেটিই বিশ্বাস করেছি। আবার স্ত্রী মিতু হত্যার পর তার যে আচরণ ছিল, তা ছিল সবচেয়ে আপনজন হারানোর মতো। তাই তার কথা সবাই বিশ্বাস করেছিলেন।

তদন্তের স্বার্থে পিবিআই ঢাকায় বাবুল আক্তারকে ডেকেছিল। গত বৃহস্পতিবার বাবুল বলেন, সোমবার ৯টায় আসবেন। সাক্ষাতের পর বাবুল আক্তার পিবিআইকে কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। বিষয়গুলো আইজিপিকে জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও জানানো হয়। এ অবস্থায় ব্যাক করার সুযোগ নেই বলে জানায় পিবিআই।

নড়াইলে এক লোককে আমরা পর্যবেক্ষণে নেই। তার নাম গাজী আল মামুন। অপর বন্ধু সাইফুল হককেও পিবিআই ডাকে। দুজনই বাবুলের বন্ধু। তারা সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এর ভিত্তিতে পুরনো মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo