নুরুল আমিন হাসান : দিনের বেলায় বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে টার্গেট ঠিক করে। সারা রাত জেগে তাকা ও নির্ভয়ে চুরি করার জন্য চোর চক্রের সবাই ইয়াবা সেবন করতো। পরে টার্গেটকৃত বাসা বা অফিসের জানালার গ্রিল ভেঙ্গে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ইত্যাদি চুরি করে পালিয়ে যেত। রাজধানীর ডেমরা ও কদমতলী থানা এলাকা থেকে বুধবার (২৮ এপ্রিল) দিবাগত মধ্যরাতে এমন একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। তাদেরকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, দলনেতা আব্দুল গাফফার (৩৯), নজরুল ইসলাম ওরফে সোহাগ (৩০), রিপন (২৮), মাসুদ তালুকদার (৩২) ও মাসুদ (৩০)। গ্রেপ্তারকালে তাদের কাছ থেকে চুরিরে করা ৮টি মোবাইল, ৭টি ল্যাপটপ ও ভূয়া নবিন্ধিত ১৮ টি মোবাইল মিম কার্য জব্দ করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে এসব তথ্য জানিয়েছেন অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, গ্রেপ্তার হওয়া চোর চক্রটি নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও টঙ্গীর বিভিন্ন হাউজ ব্রেকিং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বাসা ও অফিসের জানালার গ্রিল ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করতো। পরে টাকা পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যেত তারা। গ্রেপ্তার হওয়া চোর চক্রের সদস্য রিপন পিকআপ নিয়ে বাহিরে অপেকবষ করতো। আব্দুল গাফ্ফার ও মাসুদ বাইরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতো। আর বাসা বা অফিসের গ্রিল ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করতো নজরুল ওরফে সোহাগ।
চুরি করা এসব মাল পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে গিয়ে গাফ্ফারের বাড়িতে ভাগাভাগি করা হতো। মাসুদ তালুকদার ল্যাপটপ ও মোবাইল ডিভাইজ অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করা হতো। আর এসব ডিভাইজ বিক্রির করার জন্য দেওয়া হতো ভূয়া নিবন্ধিত সিমের নাম্বার। যেন তারা সহজেই ধরা না পড়েন। তাছাড়াও চুরি করা স্বর্ণালঙ্কার তাঁতিবাজার এবং বেশকিছু ল্যাপটপ রাজধানীর অভিজাত একটি মার্কেটের কোনো এক দোকানে বিক্রি করত। বিশেষ করে ঈদ ও বিভিন্ন ছুটিতে যখন বাসা খালি করে লোকজন গ্রামে চলে যায় তখন এই চক্র বেশি সক্রিয় হয়ে যায়। চক্রটি এ পর্যন্ত অসংখ্য বাসা ও অফিসে চুরি করেছে।
জানা যায়, গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের প্রপার্টি কানেক্টের অফিসে কৌশলে প্রবেশ করে একটি আইপ্যাড, একটি আইফোন, ১২ থেকে ১৪টি মোবাইল ফোন, দু’টি ল্যাপটপ ও নগদ ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মো. ওয়ালিউল আজিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়। ওই মামলাটি তদন্ত করতে গিয়েই ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হয় চক্রটি। চক্রের সঙ্গে যুক্ত অন্য কেউ জড়িত আছে কি-না এবং অন্যান্য ঘটনায় চুরি করা আরও মালামাল উদ্ধারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।
মন্তব্য ( ০)