বাকৃবিতে প্রাণিসম্পদে দেশের প্রথম ইন ভিট্রো কালচার-জেনোম এডিটিং সমন্বিত গবেষণাগার উদ্বোধন

ছবিঃ সিএনআই

বাকৃবি প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অত্যাধুনিক ইন ভিট্রো ভ্রূণ উৎপাদন, ভ্রূণ কালচার ও জেনোম এডিটিং সুবিধা সংবলিত এবং উচ্চমাত্রার জৈব-নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বাংলাদেশে প্রথম একটি বিশেষায়িত ক্লিন ল্যাব উদ্বোধন করা হয়েছে। 

রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া প্রধান অতিথি হিসেবে গবেষণাগারটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, বিজ্ঞানভিত্তিক উদ্যোগ এবং ধারাবাহিক গবেষণা কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ওই গবেষণাগারটি স্থাপন করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সার্বিক সহায়তা এবং কেজিএফ, বিএএস-ইউএসডিএ ও এটিএফ-হিট প্রকল্পের আর্থিক সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও জৈব-নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুসরণ করে গবেষণাগারটির অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও গবেষণা সুবিধা গড়ে তোলা হয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, আধুনিক জৈবপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও গবেষণাকে আরও কার্যকর, গতিশীল ও ফলপ্রসূ করার ক্ষেত্রে এই ল্যাবটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা অবকাঠামো হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এই ল্যাব থেকে অর্জিত গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও প্রযুক্তি ভবিষ্যতে দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এই গবেষণাগার প্রতিষ্ঠায় পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম ভূঁঞা ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মুনির হোসেনের অবদান অনস্বীকার্য। অত্যাধুনিক এই গবেষণারের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদে উন্নত গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের দেশের কৃষক ও খামারিরা উপকৃত হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ড. মো. মুনির হোসেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা, প্রক্টর, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক, গবেষক, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা ল্যাবটি পরিদর্শন করেন এবং এর আধুনিক গবেষণা সুবিধা সম্পর্কে অবহিত হন।

অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম ভূঁঞা বলেন, এই গবেষণাগারে সর্বোচ্চ জৈব-নিরাপত্তা বজায় রেখে কৃত্রিম পদ্ধতিতে গবাদিপশুর ভ্রূণ উৎপাদন, ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশ পর্যবেক্ষণ এবং জেনোম এডিটিং প্রযুক্তির মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রাণি উৎপাদনের গবেষণা পরিচালিত হবে। এর ফলে দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও পরিবেশ অভিযোজন সক্ষমতা উন্নয়নে কার্যকর বৈজ্ঞানিক সমাধান পাওয়া যাবে।

বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মুনির হোসেন বলেন, একই স্থানে ইন ভিট্রো কালচার ও জেনোম এডিটিং সুবিধাসম্পন্ন বিএসএল-২ প্লাস মানের এই গবেষণাগারটি বাংলাদেশে প্রথম। জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বা কোভিড-১৯-এর মতো প্যান্ডেমিক মোকাবিলায়ও এই ল্যাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থী এবং নবীন গবেষকরা এখানে হাতে-কলমে আধুনিক গবেষণার অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাবেন।

তিনি আরও বলেন, এই ল্যাবের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ ও সহযোগিতামূলক গবেষণার একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি হবে, যা দেশীয় প্রাণিসম্পদ ও বায়োটেকনোলজি গবেষণাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই বিশ্বমানের গবেষণাগারটি বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ ও জৈবপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।