নিউজ ডেস্কঃ ৩০তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিলো আদিবাসীদের অধিকারের বিষয়টি। কিন্তু সেখানে সম্মেলনের আলোচনাতে আদিবাসী বিষয়টি অধিভুক্তও করা হয়নি। উল্টো তাদের মূল ভেন্যুতে ঢুকতে না দেয়া-হামলাসহ বেশ কিছু নেতিবাচক আচরণ করছে জাতিসংঘ ও ব্রাজিলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আদিবাসীরা এর জন্য জাতিসংঘকে দায়ী করে বলছেন, জলবায়ু সম্মেলন পরিবেশ রক্ষার চেয়ে পরিবেশকর্মীদের ঠেকানোর দিকে বেশি মনোযোগী।
উচ্চ তাপমাত্রার দেশ ব্রাজিলের বেলেম শহরে তখন তাপমাত্রা প্রায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাথার ওপর সূর্যের চোখ রাঙানি।
এর মধ্যেই রোদে পুড়ে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের প্রধান ফটকের সামনে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ঐতিহাসিক পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ল্যাটিন আমেরিকার আদিবাসীরা। জলবায়ু সম্মেলনে আসা বিভিন্ন দেশের পরিবেশকর্মীরা সম্মেলন স্থলে প্রবেশের সময় ঢু মারছেন ভিন্নধর্মী পণ্যের দিকে। মূলত পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এ আদিবাসীদের আবাসস্থল গত কয়েক দশক ধরে হুমকির মুখে।
৩০তম জলবায়ু সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন এ আদিবাসীরা পরিবেশ রক্ষার দাবিতে মূল ভেন্যুতে ঢুকে বিক্ষোভ করতে চাইলে সেদিন প্রধান ফটকে তাদের দমাতে শক্তি প্রয়োগ করেছিলো ব্রাজিল ও জাতিসংঘের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরমধ্যেই যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
এর পরদিন অ্যামাজন রক্ষার দাবিতে বেলেম শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গুয়াজারা নদীতে পিপলস সামিট নৌ যাত্রা করে পরিবেশকর্মীরা। যেখানে প্রায় পাঁচ শতাধিক নৌযানে প্রায় ২০০ দেশের ১৫ হাজার পরিবেশকর্মী নদীতে ভেসে ভেসে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে প্রতিবাদ করে। পরিবেশ রক্ষায় উন্নত বিশ্ব টেকসই উদ্যোগ না নেয়ায় তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
আর সম্মেলনের পঞ্চম দিন বেলেমের স্থানীয় আদিবাসীরা কপের মূল গেট আটকে প্রায় ঘণ্টাখানেক প্রতিবাদ করে। এতে ডিলেগেটদের ভিতরে প্রবেশ করতে বাধার সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয় সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
৩০তম কপ সম্মেলনে অংশ নেয়া এসব আদিবাসীরা বলছেন, এবারের সম্মেলনে ল্যাটিন আমেরিকা অঞ্চলসহ পুরো বিশ্বের আদিবাসীদের বাসস্থানের অধিকার নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করার কথা থাকলেও বিশ্ব নেতারা কথা রাখেনি।
আদিবাসীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘অনেক বছর হয়ে গেলেও আদিবাসীদের উন্নয়নে কাজ করছে না কপ। অথচ প্রতি মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। জাতিসংঘ ও কপ কীভাবে আমাদের মূল্যায়ন করে তা দেখতেই এসেছি।
কপ সম্মেলনের গেটে আদিবাসীদের ওপর হামলাকে জলবায়ু সম্মেলনের কালো অধ্যায় দাবি করে তারা জাতিসংঘের কাছে এর বিচার দাবি করেন।
আদিবাসীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আদিবাসীরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে আসলেও কথা শোনেনি উন্নত বিশ্ব। বরং যাদের জন্য এ আয়োজন, তাদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।’
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশকর্মীদের বিক্ষোভে এমন হামলা জাতিসংঘের কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। লস অ্যান্ড ড্যামেজের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করা ও আদিবাসীদের অধিকারের বিষয়টি এবারের কপে আলোচনা ভুক্ত না করা এ সম্মেলনের গুরুত্বও দিন দিন কমাবে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ শরীফ জামিল বলেন, ‘যারা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত, তারা তাদের ক্ষতির বিষয়ে তুলে ধরবে। যখন থেকে আলোচ্য সূচি কী নির্ধারিত হবে, তখন থেকেই আমরা দেখেছি, উন্নত দেশগুলো কীভাবে যেসব দেশে ক্ষতিপূরণ দেয়া বা দরকার তাদের বাধাগ্রস্ত করার জন্য তারা নতুন নতুন ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে আসা শুরু করলো।’
সম্মেলনের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন দরকষাকষি শেষে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। ধারণা করা হচ্ছে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে স্থানীয় আদিবাসীরা অধিকার আদায়ে আরও সোচ্চার হবে।
মন্তব্য (০)