নিউজ ডেস্ক : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরলে তা যেন চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন থেকেই কার্যকর হয়—এ দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিবের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা সংক্রান্ত শুনানিতে তিনি এই আবেদন করেন।
অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেওয়া রায়ে প্রতারণা করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি যেকোনো আদালতে তা বাতিল হয়ে যাবে।
অপরদিকে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, খায়রুল হক নিজের ব্যক্তিগত সুবিধা নিতে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মানুষের ধর্ম পালনকে বাধাগ্রস্ত করতে সে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে এসেছে। আমি আদালতকে বলেছি, বর্তমান সরকার আগামী ফ্রেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ নির্বাচন করবে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যেন পরবর্তী নির্বাচন থেকে কার্যকর হয়, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেছি।
অপর আবেদনকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরলেও সাংবিধানিক প্রশ্ন জড়িত থাকায় সেটি কবে থেকে কার্যকর হবে, তা সর্বোচ্চ আদালত পর্যবেক্ষণ দেবেন।
এর আগে, সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চে সপ্তম দিনের আপিল শুনানি শুরু হয়।
আগেরদিন ষষ্ঠ দিনের শুনানিতে বিএনপির আইনজীবীরা আপিল বিভাগকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে রায়ের পর দেশের রাজনীতিতে সংকট তৈরি হয়। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানো প্রয়োজন। এর আগে, জামায়াত ও সুজনের পক্ষে শুনানিতেও আইনজীবীরা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরাতে আইনি যুক্তি তুলে ধরেন।
গত ২১, ২২, ২৩, ২৮, ২৯ অক্টোবর ও ২ নভেম্বর শুনানি হয়। এ পাঁচ দিনে ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজনের পক্ষে আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, ইন্টারভেনার হিসেবে আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে আইনজীবী এস এম শাহরিয়ার শুনানি সম্পন্ন করেছেন।
এর আগে ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়।
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়।
এ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারী পক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।
ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ–সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চারজন হলেন- তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১৬ অক্টোবর একটি আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এছাড়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদন মঞ্জুর করেন সর্বোচ্চ আদালত। দেওয়া হয় আপিলের অনুমতি। এরপর ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার আপিল করেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে রায় দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের আপিল বিভাগ।
মন্তব্য (০)