নিউজ ডেস্কঃ দেশের উত্তরের পাঁচ জেলা রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে নন-ইউরিয়া সারের সংকট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও সার পাচ্ছেন না কৃষকরা। এ সংকটকে কৃত্রিম বলে দাবি করেছে কৃষি বিভাগ।
এদিকে, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি-র মতো নন-ইউরিয়া সারের তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় আবাদ নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় এই অঞ্চলগুলোর চাষিরা। ডিলারদের কাছে সার না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন পাঁচ জেলার লাখো কৃষক। সময়মতো জমিতে সার দিতে না পারায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
তবে কৃষি বিভাগের ভাষ্য, কোনো জেলাতেই সারের ঘাটতি নেই। বিএডিসি গুদামে পর্যাপ্ত সার মজুদ থাকলেও কিছু অসাধু ডিলার বেশি মুনাফার লোভে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে দাম বাড়াচ্ছেন। এ সময় জমিতে আলু ও ভুট্টা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা। কিন্তু সার না পাওয়ায় জমি প্রস্তুতের কাজ আটকে আছে।
লালমনিরহাটের কর্ণপুর গ্রামের কৃষক আবদার হোসেন বলেন, ‘ডিলারদের কাছে সারের জন্য গেলে তারা বলেন সার শেষ। কিন্তু সেই সারই খুচরা দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে আমাদের প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি দাম দিতে হচ্ছে।’
একই অভিযোগ করেন পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া এলাকার কৃষক আবু তালেব। তিনি বলেন, ‘নন-ইউরিয়া সার ছাড়া জমি প্রস্তুত করা যাচ্ছে না। এখন সারের সবচেয়ে বেশি দরকার। নভেম্বরে সারের চাহিদা আরও বাড়বে। সময়মতো সার না পেলে আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’
রংপুরের গঙ্গাচড়ার কৃষক সুজন মিয়া বলেন, ‘অতিরিক্ত টাকা দিয়েও সার পাচ্ছি না, চরে কিভাবে ভুট্টা আবাদ করব তা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।’
বিএডিসি লালমনিরহাট গুদামের সহকারী পরিচালক একরামুল হক জানান, জেলায় ১৪৪ জন ডিলারের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত দরে সার বিক্রি হয়। সরকার ডিলারদের কাছে প্রতি কেজি টিএসপি ২৫ টাকা, ডিএপি ১৯ টাকা ও এমওপি ১৮ টাকা দরে বিক্রি করে। ডিলাররা কেজিতে ২ টাকা লাভ রেখে কৃষকের কাছে বিক্রি করতে পারেন।
একরামুল হক আরও বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী সব সার আমাদের গুদামে রয়েছে। ডিলাররা নিয়মমাফিক সার উত্তোলন ও বিক্রি করছেন।’
তবে তিনি স্বীকার করেন, চাহিদার তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ সার কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বিএডিসির রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জানান, কোনো জেলাতেই সারের কোনো সংকট নেই, কিছু অসাধু ডিলার কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। তারা বাজার মনিটরিং করছেন, দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী সারের কোনো সংকট নেই। বিএডিসি গুদামে পর্যাপ্ত সার মজুদ রয়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার আশায় এ কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।’
এদিকে, কৃষি বিভাগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিলাররা। লালমনিরহাটের হারাটি ইউনিয়নের সার ডিলার আবু তাহের বলেন, ‘সরকার যে পরিমাণ সার বরাদ্দ দেয়, আমরা নির্ধারিত দরে সেটি কৃষকের কাছে বিক্রি করি। কেউ বেশি দরে বিক্রি করে না।’
ডিলারের সার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কীভাবে যায়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খুচরা বিক্রেতারা কোথা থেকে সার পান, সেটা তাদের জানা নেই।
লালমনিরহাট জেলা সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল হাকিম সংকটের জন্য বরাদ্দের স্বল্পতাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায় এ সংকট তৈরি হয়। বিশেষ করে চরাঞ্চলে এখন প্রচুর জমিতে ফসল উৎপাদন হচ্ছে, ফলে সারের চাহিদাও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ২০০৯ সালের সার নীতি ঠিক রেখে চাহিদামতো সার সরবরাহ করলে সংকট থাকবে না। তবে কোনো ডিলার যদি সত্যিই সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন, তাহলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
রংপুর জেলা সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কাশেম জানান, বরাদ্দ কম হওয়ায় কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে, আমরা আশা করছি দ্রুতই সংকট দূর হবে।
রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেন, কোনো ডিলার যাতে অবৈধভাবে সার বিক্রি করতে না পারে, সেজন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক উপজেলায় অভিযান পরিচালিত হয়েছে। জরিমানাও করা হয়েছে ডিলারদের। কোথাও সারের কোনো সংকট নেই।
মন্তব্য (০)