বিনোদন ডেস্ক : সম্প্রতি কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে এবার আয়োজিত হলো বাউলসম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস। এ উপলক্ষে বরাবরের মতো বসে লালন মেলা। সেই মিলনমেলায় শামিল হন দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা লালনভক্তরা। এবার সেই লালন আখড়াবাড়িতে হাজির ছিলেন বিনোদন জগতের ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমকও।
সামাজিক মাধ্যমে গত কয়েক দিন ধরে লালনের আখড়া থেকে অভিনেত্রীর বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তাকে সম্পূর্ণ লালনভক্তের বেশে, সাদা শাড়িতেই দেখা যায়। আর অভিনেত্রী নিজে এতদিন কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি। তবে এই প্রথমবারের মতো লালন মেলা ভ্রমণ নিয়ে একটি চমকপ্রদ ভিডিও প্রকাশ করলেন রুকাইয়া জাহান চমক।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে চমক লিখেছেন, লালনে যারা আমার অনেক ফটো ভিডিও তুলছো, তাদের জন্য বেটার কোয়ালিটির ভিডিও দিচ্ছি একটু পরেই। মোবাইলে এমবি আছে তো নাকি ওয়াইফাই?
অভিনেত্রী ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, যেখানে উঠে এসেছে লোকসংগীতের এই আখড়াবাড়ি এবং লালন শাহের জীবন-দর্শন সম্পর্কে নানা তথ্য। ভিডিওতে দেখা যায়, অভিনেত্রী চমক নিজের সাজপোশাকে লালন মেলায় লোকসংস্কৃতির আবহকে ফুটিয়ে তুলেছেন। সাদা শাড়ির সঙ্গে মানানসই একটি রঙিন গামছা গায়ে জড়িয়েছেন। তার খোঁপায় হলুদ গাঁদা ফুলের মালা জড়ানো, হাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বালা ও গলায় একাধিক পুঁতির মালা।
এ ভিডিওটিতে আরও দেখা যায়, শুরু হয় কুষ্টিয়ার লালন আখড়াবাড়ির প্রধান ফটকের সামনে রাতে জটলা হওয়া মানুষের ভিড়। আখড়াবাড়ির আলোকসজ্জিত চূড়া, মাঠ ও বিশাল একতারা-ডুগডুগির প্রতিকৃতিও দেখা যায়। লোকশিল্পীরা একতারা, ডুগডুগি বাজিয়ে গান পরিবেশন করছেন। চমককে কখনো মানুষের ভিড়ে, কখনো আখড়াবাড়ির আঙিনায়, আবার কখনো বাউলদের আসরে একতারা হাতে দেখা যায়।
শেষে লালন সাঁইয়ের জীবন ও দর্শন নিয়ে গ্রাফিক্সের মাধ্যমে কিছু দৃশ্য দেখানো হয়েছে, যার মধ্যে কালীগঙ্গা নদীর তীরে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকা লালন এবং একজন মুসলিম নারীর তাকে বাঁচানোর দৃশ্য ফুটে ওঠে, যা মূলত লালন সাঁইয়ের জীবনসংশ্লিষ্ট একটি বহুল প্রচলিত লোককথা।
এবার চমককে ইংরেজিতেও বলতে শোনা যায়, লালন সাঁইয়ের জীবন-দর্শন সম্পর্কে। চমকের সেই কথাগুলোর অনুবাদ করলে দাঁড়ায়— ‘আপনি কি জানেন, কুষ্টিয়ায় প্রতি বছর একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা শুধু সংগীত নয়, বাংলাদেশের আত্মাকে উদযাপন করে। লালন শাহ, একজন বাংলার সাধক। ২০০ বছরেরও বেশি আগে, কুষ্টিয়ার এক ছোট গ্রামে, কালীগঙ্গা নদীর কাছে একটি অসুস্থ ছেলেকে পাওয়া গিয়েছিল। এক মুসলিম নারী তাকে উদ্ধার করে এবং তাকে জীবন ফিরিয়ে আনে। পরে এই ছেলেই পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাধক হিসেবে পরিচিতি পান— লালন ফকির, লালন শাহ নামে। কিন্তু লালন শাহের আসল জন্ম নাম বা ধর্ম সম্পর্কে কেউ নিশ্চিতভাবে জানে না। হয়তো এই রহস্যটিই ছিল আসলে লালনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা।
এরপর সামজিক মাধ্যমে ক্যাপশনে চমক জানিয়ে দেন, এটি একটি ভ্লগ, যার শিরোনাম ‘চমকের সঙ্গে বাংলাদেশকে আবিষ্কার। পর্ব-৪’। সুধীজন, এখানে আমি উপস্থাপন করছি— আমাদের আত্মা ও মাটির সংগীত... আমাদের আধ্যাত্মিক শিকড়... আমাদের লালনকে... বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।
চমকের এই নতুন ধরনের কনটেন্টকে বেশ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন সামাজিক মাধ্যমের নেটিজেনরা। তাদের মন্তব্যগুলো ছিল ঠিক এমন—এই যে না হইল আসল চমকের চমৎকার টাইপের কনটেন্ট। আরেকজন লিখেছেন— এ ধরনের কনটেন্টের জন্যই আমি ইন্টারনেটের বিল দিতেও রাজি। অন্য আরেকজন লিখেছেন— বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি লালন ফকিরের এই ডকুমেন্টসটা ইংরেজিতে করার জন্য।
উল্লেখ্য, অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ‘ডিসকভারিং বাংলাদেশ উইথ চমক’ শিরোনামে ধারাবাহিক কনটেন্ট নির্মাণ করছেন, যার চতুর্থ পর্বটি লালন শাহ ও তার দর্শনকে ঘিরে নির্মিত।
মন্তব্য (০)