শিশু শান্তি ‘নোবেল’ পুরস্কারে মনোনীত জামালপুরের সহোদর দুই বোন

ছবিঃ সিএনআই

জামালপুর প্রতিনিধি : বিশ্বব্যাপী শিশু অধিকার, ন্যায়বিচার ও মানবিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অবদান রাখা সাহসী কিশোরদের সম্মান জানাতে প্রতিবছর দেওয়া হয় মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার, যা পরিচিত ‘শিশুদের নোবেল’ নামে।

এ বছর বাংলাদেশ থেকে সেই সম্মানজনক পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন জামালপুরের দুই সহোদর কিশোরী বোন কারিমা ফেরদৌসী কেকা ও কাশফিয়া জান্নাত কুহু। এই অর্জন শুধু তাদের পরিবারের নয়, পুরো জামালপুর তথা বাংলাদেশের মানুষের জন্য গর্বের বিষয় হয়ে উঠেছে।

পুরস্কারটি প্রদান করে নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক সংস্থা কিডসরাইট ফাউন্ডেশন। ২০২৫ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় দুই শতাধিক শিশু অধিকারকর্মীকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে স্থান পেয়েছেন কেকা ও কুহু।

কেকা ও কুহু এই দুই বোন জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার কড়ইচুড়া ইউনিয়নে কুমারবাড়ী এলাকার কাইউম হিলালী মাইকেলের মেয়ে।

বড় বোন কারিমা ফেরদৌসী কেকা ঢাকার একটি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। একাদশ শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জনের মাধ্যমে তিনি ইতিমধ্যেই নিজের মেধার প্রমাণ রেখেছেন। পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই সমাজ পরিবর্তনের কাজে যুক্ত আছেন বিশেষ করে শিশুবিয়ে প্রতিরোধ, নারী-পুরুষ সমতা ও জলবায়ু সচেতনতা গড়ে তোলায়।

কেকার মতে, নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। মেয়ে শিশুদের অল্প বয়সে বিয়ে বন্ধ করতে না পারলে তারা শিক্ষা ও স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত হয়। তিনি স্কুল, ক্লাব এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

ছোট বোন কাশফিয়া জান্নাত কুহু মাদারগঞ্জের রওশন আরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। বড় বোনের অনুপ্রেরণায় সেও যুক্ত হয়েছে শিশু অধিকার ও সামাজিক সচেতনতার কাজে। শিশু বিয়ে রোধ, লিঙ্গ সমতা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠাই তার কাজের মূল লক্ষ্য।

মনোনয়নের খবর পেয়ে কুহু জানান, আমি জানতামই না আমার নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। সকালে আপু জানালে আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। এটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের খবর।

কেকা আরও জানান, আমরা চাই আমাদের কাজ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনুক। এই স্বীকৃতি আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সকলের দোয়া কামনা করছি।

দুই মেয়ের সাফল্যে আনন্দিত তাদের বাবা কাইউম হিলালী মাইকেল ও মা শিউলী খাতুন। বাবা বলেন, সারা বিশ্বের শিশুদের মধ্যে আমার দুই মেয়ে মনোনয়ন পেয়েছে এটা আমাদের জন্য বিশাল গর্বের বিষয়। আল্লাহ যেন তাদের আরও বড় কিছু করার তৌফিক দেন।

২০০৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার শিশু অধিকার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা তরুণদের স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। এই পুরস্কার ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিশুবান্ধব উদ্যোগের প্রতীক হয়ে উঠেছে।