
নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রবাসে অবস্থান করেও রাজনৈতিক কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছেন। বিশেষ করে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য ও উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসী নেতাকর্মীদের মাধ্যমে তিনি দলীয় সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান নিয়মিতভাবে অনলাইনে বিভিন্ন দেশের বিএনপি শাখা ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকে তিনি সাংগঠনিক দুর্বলতা চিহ্নিত করা, প্রবাসী নেতাদের ঐক্যবদ্ধ রাখা এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মপন্থা নিয়ে পরামর্শ দেন। তারেক রহমানের জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বের পথটি গড়ে উঠেছে দৃঢ়তা, সহনশীলতা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে।
যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত থেকেও তিনি পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সুদৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে উল্লেখযোগ্য সময় দিয়েছেন। প্রস্তুতির এই সময়কালটি একটি স্পষ্ট উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে, তা হলো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত হয়ে দেশে ফিরে আসা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, যিনি সিলেট-২ আসনে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চারজন সফরসঙ্গীর একজন।
আরেকজন ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন অহিদ আহমেদ, যাকে অনেকেই জনজীবনে সাফল্যের জন্য বিএনপির রাজনৈতিক পথিকৃৎ হিসেবে আখ্যা দেন।
অহিদ আহমেদের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যে আসার পর। ২০০২ সালে তিনি লন্ডনে ইউরোপের সর্ববৃহৎ বাংলাদেশি কমিউনিটির আবাসস্থল টাওয়ার হ্যামলেটস বরোর কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
ধীরে ধীরে তিনি যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন, ‘লেবার ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা হন এবং হ্যাজেল ব্লিয়ার্স ও ডেভিড মিলিব্যান্ডসহ বিভিন্ন জ্যেষ্ঠ সরকারি মন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন।
২০১০ সালে, তিনি লেবার পার্টির হয়ে যুক্তরাজ্যের সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নির্বাচিত দুইজন ব্রিটিশ বাংলাদেশীর একজন ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সরাসরি নির্বাচিত মেয়রের অধীনে টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রথম সংবিধিবদ্ধ ডেপুটি মেয়র হন, উভয় পদেই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা অধিষ্ঠিত ছিলেন।
২০১২ সালে অহিদ আহমেদ বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর সাথে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলীয় নেতা অ্যাড. মিলিব্যান্ডের বৈঠকের আয়োজন করেন। বৈঠকে শেখ হাসিনা সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি ও শাসন ব্যর্থতার বিষয়ে আলোচনা করেন, পাশাপাশি বাংলাদেশে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এই বৈঠকের কয়েক সপ্তাহ পর ঢাকায় ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়-যা দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে একটি অন্যতম আলোচিত অমীমাংসিত ঘটনা। পুরো রাজনৈতিক ক্যারিয়ার জুড়ে অহিদ আহমেদ জিয়া পরিবারের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ২০১১ সালে বেগম খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্য সফরের সময় টাওয়ার হ্যামলেটস টাউন হলে গিয়ে অহিদ আহমেদকে তার রাজনৈতিক অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানান।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি তারেক রহমানের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন, আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব, প্রশাসনিক সংস্কার এবং শাসন ব্যবস্থায় তার বিস্তৃত ব্রিটিশ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে কৌশলগত পরামর্শ দিচ্ছেন। যদিও অহিদ আহমেদ সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, তবে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা রয়েছে তার ভূমিকা শুধু সংসদীয় প্রতিনিধিত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং তারেক রহমান নেতৃত্বাধীন ভবিষ্যৎ সরকারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারেন বলে অনেকের প্রত্যাশা।
তারেক রহমানের প্রবাসী সফল রাজনীতিবিদদের সাথে সম্পৃক্ততা তার ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রত্যয়কে প্রতিফলিত করে যার লক্ষ্য আধুনিক শাসন ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা।
দেশের প্রয়োজনের সাথে বৈশ্বিক দৃষ্টিকে একত্রিত করতে বিদেশি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সফল ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর এই সিদ্ধান্ত একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় বহন করে।
হুমায়ুন কবির ও অহিদ আহমেদের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে বিএনপির ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনার পথ আরও প্রশস্ত হচ্ছে।
মন্তব্য (০)