
গোপালপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ যমুনা সেতু থেকে সরিষাবাড়ী রেললাইনের পশ্চিম পাশে, গরিল্যা বিলের মাঝে আনুমানিক ১০ শতাংশ জমির উপর ভেসে থাকা দ্বীপ স্থানীয়দের কাছে “জুগীর ঘোপা” নামেই পরিচিত। এটি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের মোহাইল গ্রামে অবস্থিত। জুগীর ঘোপা নিয়ে আধ্যাত্মিকতা সহ বিভিন্ন অলৌকিক কল্পকাহিনী স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে অপরাধের একটি বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।
স্থানীয়দের দাবি, আধ্যাত্মিকতার আড়ালে এখানে বসে জুয়ার আসর, মাদক বিক্রি ও মাদক সেবন, এবং পলাতক আসামিদের নিরাপদ আশ্রয়। এসব কর্মকাণ্ড নিরাপদে পরিচালনা করতে বেশ কিছুদিন আগে ঝাওয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চার চালা টিনের ছাউনি, পাকা দেয়াল ও ফ্লোরসহ একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট নৌকা ছাড়া জুগীর ঘোপায় পৌঁছানোর অন্য কোনো উপায় নেই, তাই ইচ্ছে করলেই সেখানে পৌঁছানো কঠিন ব্যাপার।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বৃহস্পতিবার সারাদিন এখানে সবচেয়ে বড় গাঁজা সেবনের আসর বসে। ওইদিন বিরতিহীনভাবে ৩টি নৌকা দিয়ে হাজার হাজার মাদকসেবীকে পারাপার করা হয়। সেদিন মান্নতের খিচুড়ি বিতরণ করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান, পার্শ্ববর্তী উপজেলা এবং গোপালপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ২ থেকে ৩ হাজার মাদকসেবীর আগমন ঘটে। শত শত মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন রেললাইনের পাশে রেখে তারা জুগীর ঘোপায় যায়। আগত মানুষের সিংহভাগ তরুণ ও যুবক।
এসবকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এলাকায় জিনিসপত্র চুরি বেড়েছে। এছাড়াও, স্লিপারের সাথে রেললাইনের পাত আটকানোর ক্লিপ অধিকাংশ খুলে নিয়ে নেশাখোররা বিক্রি করে দিচ্ছে।
সত্যতা স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি জানান, মোহাইল গ্রামের ছাত্রসমাজ কিছুদিন আগে মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। কিন্তু জুগীর ঘোপা নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে তাদের চাপে ছাত্রসমাজকে চুপ হতে হয়েছিল। এরা খুবই ক্ষমতাবান। ওখানে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকার মাদক ব্যবসা চলছে। আমি ওখানকার কর্মকাণ্ডের ঘোর বিরোধী। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ঘর নির্মাণের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, বর্তমান পরিষদের আমলে ঘর দেওয়া হয়নি, অনেক আগে হয়তো দিয়েছে। খতিয়ে দেখে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
ছদ্মবেশে সরেজমিনে দেখা যায়, ঘরের মধ্যে ৪টি গ্রুপ এবং ঘরের বাইরে ১৫-এর অধিক গ্রুপ গোল করে গানের আড্ডা ও জুয়ার আসর বসিয়েছে। নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা গাঁজা এবং গাঁজা প্রস্তুতির সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। প্রতিবেদককে দেখে সন্দেহ হওয়ায় কয়েকজন মানুষ তাকে কঠোর নজরদারিতে রাখতে থাকে।
সিন্ডিকেটের সদস্যরা কল্পকাহিনী শোনানোর এক পর্যায়ে জানান, এখানকার গাছের ডাল ভাঙলে মানুষের সাথে সাথে গলায় রক্ত বের হয়ে মৃত্যু হয়। কিন্তু বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গাছের ডাল ভাঙলেও বাস্তবে তেমন কিছু ঘটেনি।
নৌকা চালক চান মিয়া জানান, প্রফেসরের বাপে এখানের নিয়ন্ত্রণ করে! তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে সেই প্রফেসরের নাম তিনি বলেননি।
গোপালপুর থানা অফিসার ইনচার্জ গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন জানান, এ বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
জুগীর ঘোপা নিয়ে লোকমুখে সবচেয়ে প্রচলিত কল্পকাহিনী হলো, কোনো অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে বাসন-কোসনের জন্য নগ্ন গায়ে ও নগ্ন পায়ে প্রার্থনা করলে সাথে সাথে প্রয়োজনীয় বাসন-কোসন পাওয়া যেত। অনুষ্ঠানের শেষে বাসনগুলো ধুয়ে মুছে ওই স্থানে ফেরত দিয়ে আসতে হতো। একবার একজন লোক সব বাসন ফেরত না দেওয়ায় পরবর্তী সময়ে আর বাসন পাওয়া যায়নি। তবে এই দাবির কোনো সত্য ভিত্তি পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য (০)